পাতা:পুনশ্চ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১০৮
পুনশ্চ

তরুণের দল ডাক দিল, “চলো যাত্রা করি,
প্রেমের তীর্থে, শক্তির তীর্থে,”
হাজার কণ্ঠের ধ্বনি-নির্ঝরে ঘোষিত হোলো—
“আমরা ইহলোক জয় করব এবং লোকান্তর।”
উদ্দেশ্য সকলের কাছে স্পষ্ট নয়, কেবল আগ্রহে সকলে এক,
মৃত্যুবিপদকে তুচ্ছ করেচে
সকলের সম্মিলিত সঞ্চলমান ইচ্ছার বেগ।
তারা আর পথ শুধায় না, তাদের মনে নেই সংশয়,
চরণে নেই ক্লান্তি।
মৃত অধিনেতার আত্মা তাদের অন্তরে বাহিরে;
সে-যে মৃত্যুকে উত্তীর্ণ হয়েচে
এবং জীবনের সীমাকে করেচে অতিক্রম।
তারা সেই ক্ষেত্র দিয়ে চলেচে যেখানে বীজ বোনা হল,
সেই ভাণ্ডারের পাশ দিয়ে, যেখানে শস্য হয়েচে সঞ্চিত,
সেই অনুর্ব্বর ভূমির উপর দিয়ে
যেখানে কঙ্কালসার দেহ বসে আছে প্রাণের কাঙাল।
তারা চলেচে প্রজাবহুল নগরের পথ দিয়ে,
চলেচে জনশূন্যতার মধ্যে দিয়ে
যেখানে বোবা অতীত তার ভাঙা কীর্ত্তি কোলে নিয়ে নিস্তব্ধ;
চলেচে লক্ষ্মীছাড়াদের জীর্ণ বসতি বেয়ে
আশ্রয় যেখানে আশ্রিতকে বিদ্রূপ করে।

রৌদ্রদগ্ধ বৈশাখের দীর্ঘ প্রহর কাট‍্ল পথে পথে।
সন্ধ্যাবেলায় আলোক যখন ম্লান তখন তারা কালজ্ঞকে শুধায়,