পাতা:পুনশ্চ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পুনশ্চ
১০৯

“ঐ কি দেখা যায় আমাদের চরম আশার তোরণ-চূড়া?”
সে বলে, “না, ও যে সন্ধ্যাভ্রশিখরে
অস্তগামী সূর্য্যের বিলীয়মান আভা।”
তরুণ বলে “থেমো না, বন্ধু, অন্ধ তমিস্র রাত্রির মধ্য দিয়ে
আমাদের পৌঁছতে হবে মৃত্যুহীন জ্যোতির্লোকে।”
অন্ধকারে তারা চলে।
পথ যেন নিজের অর্থ নিজে জানে,
পায়ের তলার ধূলিও যেন নীরব স্পর্শে দিক চিনিয়ে দেয়।
স্বর্গপথযাত্রী নক্ষত্রের দল মূক সঙ্গীতে বলে, “সাথী, অগ্রসর হও।”
অধিনেতার আকাশবাণী কানে আসে, “আর বিলম্ব নেই।”

প্রত্যুষের প্রথম আভা
অরণ্যের শিশিরবর্ষী পল্লবে পল্লবে ঝলমল করে উঠ‍্ল।
নক্ষত্রসঙ্কেতবিদ জ্যোতিষী বল্‌লে “বন্ধু আমরা এসেচি।”
পথের দুইধারে দিক্প্রান্ত অবধি
পরিণত শস্যশীর্ষ স্নিগ্ধ বায়ুহিল্লোলে দোলায়মান,—
আকাশের স্বর্ণলিপির উত্তরে ধরণীর আনন্দবাণী।
গিরিপদবর্ত্তী গ্রাম থেকে নদীতলবর্ত্তী গ্রাম পর্যন্ত
প্রতিদিনের লোকযাত্রা শান্ত গতিতে প্রবহমান।
কুমোরের চাকা ঘুরচে গুঞ্জনস্বরে,
কাঠুরিয়া হাটে আনচে কাঠের ভার,
রাখাল ধেনু নিয়ে চলেচে মাঠে,
বধূরা নদী থেকে ঘট ভরে যায় ছায়াপথ দিয়ে।
কিন্তু কোথায় রাজার দুর্গ, সোনার খনি,
মারণ উচাটন মন্ত্রের পুরাতন পুঁথি?