পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (চতুর্থ খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৪৮৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
নসর মালুম
৪৮৫

অবিকল প্রতিমূর্ত্তি আমরা এই পালাটিতে পাইতেছি। ইহার কালো পাগড়ী ও রাঙ্গা কোর্ত্তাপরা দুর্ব্বিনহস্তে শ্যেন পক্ষীর ন্যায় বাণিজ্যযাত্রীদের উপর আসিয়া পড়িত। তাহাদের হস্তে বন্দুক ও কোমরে শাণিত ছোরা। যেরূপ নির্দ্দয় ভাবে ইহারা বন্দীদিগের প্রতি ব্যবহার করিত তাহা রোমাঞ্চকর। ১৬৬৬ খৃষ্টাব্দে নূরজাহানের নিকট আত্মীয় সায়েস্তা খাঁ চট্টগ্রাম অধিকার করেন। আরাকানের অধিপতি পর্ত্তুগীজদের সহযোগে সায়েস্তা খাঁর গতি প্রতিরোধ করিতে চেষ্টা করেন। আরাকানাধীপের দুই শত বড় ডিঙা এবং অসংখ্য ক্ষুদ্র নৌকা ছিল। সুপ্রসিদ্ধ পর্য্যটক ট্যাভার্নিয়ার এই ডিঙাগুলির একটি কৌতুকাবহ বর্ণনা দিয়াছেন। “এই ডিঙাগুলি যেরূপ দ্রুতগতিতে সমুদ্রে চলিয়া যায় তাহা অসামান্য। কোন কোন ডিঙা এত দীর্ঘ যে তাহাতে এক এক দিকে পঞ্চাশটি করিয়া দাঁড় থাকে, প্রত্যেকটি দাঁড় দুইটি করিয়া মাঝি টানে। এই ডিঙাগুলি স্বর্ণ, রৌপ্য এবং জহরেতে মণ্ডিত। ইহাদের সুদর্শন নীল ও পীত বর্ণের আকৃতি সমুদ্রের তরঙ্গকে ঝলসিত করিয়া চলিয়া যায়।” সায়েস্তা খাঁ একজন পাকা রাজনৈতিক ওস্তাদ ছিলেন। তিনি কলে-কৌশলে অনেক পর্ত্তুগীজকে হস্তগত করেন এবং মগদিগকে এরূপ সাঙ্ঘাতিক ভাবে পরাস্ত করেন যে তাহারা তীরবেগে চট্টগ্রামের পার্ব্বত্য প্রদেশে পলাইয়া যাইয়া প্রাণরক্ষা করে। তাহারা যে ভাবে ছুটিয়া পলাইয়াছিল তাহা প্রবাদ বাক্যে পরিণত হইয়াছে। ইতিহাসে তাহা Xerxesএর Retreat of the Ten Thousandএর সঙ্গে তুলনা করা যাইতে পারে। এই পলায়ন-বৃত্তান্তটিকে চট্টগ্রামবাসীরা ‘মগ-ধাওনি’ নামে অভিহিত করিয়াছে। মগেরা পলাইয়া যাইবার সময়ে তাহাদের ধনরত্ন এবং তদপেক্ষা মুল্যবান্ বুদ্ধ-বিগ্রহগুলি দেয়াঙ্গের পাহাড়ের নীচে পুতিয়া রাখিয়া চলিয়া গিয়াছিল। যখন দেশে শান্তি ফিরিয়া আসিল, তখন ইহারা দলে দলে আসিয়া সেই সব মূর্ত্তি ও ধনরত্ন উত্তোলন করিয়া লইয়া গিয়াছিল। যখন তাহারা পলাইয়া ব্রহ্মদেশে যায় তখন তাহারা ওইসব গচ্ছিত সামগ্রীর স্থান নির্দ্দেশ করিয়া মানচিত্র অঙ্কনপূর্ব্বক সঙ্গে লইয়া গিয়াছিল। এখন এই ঘটনার পরে প্রায় দুই শত বৎসর অতীত হইয়াছে। শুনিতে পাই