আমার বিশ্বাস মাইকেল মৈমনসিংহের কবির রামায়ণটি কোন স্থানে শুনিয়া মাহিলা-কবির দ্বারা প্রভাবান্বিত হইয়াছিলেন। চন্দ্রাবতীর রচনায় মাইকেলী ভাষার শব্দচ্ছটা ও আড়ম্বর নাই, কিন্তু তাহা অধিকতর সরল, অধিকতর করুণ ও অধিকতর মধুর। তাহা চক্ষু ঝলসাইয়া দেয় না। কিন্তু প্রাণ গলাইয়া দেয়। মাইকেলের “ছিনু মোরা সুলোচনে! গোদাবরী-তীরে, কপোতকপোতী যথা উচ্চ-বৃক্ষ-চূড়ে বাঁধি নীড়, থাকে সুখে;” প্রভৃতি পদ পড়িয়া চন্দ্রাবতীর “গোদাবরী নদীকূলে গো পঞ্চবটী বন, ঘুরিতে ঘুরিতে গো আইলাম। আমরা তিনজন। কি করিব রাজ্য সুখে গো রাজসিংহাসনে, শত রাজ্যপাট গো আমার প্রভুর চরণে॥” এই রচনাটি পড়িলে দেখিতে পাইবেন প্রথমটি ছবির ন্যায় চোখের সম্মুখে বিচিত্র দৃশ্যের অবতারণা করে, কিন্তু দ্বিতীয়টি বাঁশীর সুরের মত কাণের ভিতর দিয়া মর্ম্মে প্রবেশ করে। সীতা তাঁহার সখীর নিকট তাঁহার জীবনের প্রথম হইতে বনবাসের কিঞ্চিৎপূর্ব্বকাল পর্য্যন্ত ঘটনাবলীর পরপর যে বর্ণনাটি দিয়াছেন এক একটি সংক্ষিপ্ত পদে তাহা এক একটি সম্পূর্ণ ভাবের আলেখ্যস্বরূপ। Byronএর সুপ্রসিদ্ধ Dream নামক কবিতায় বর্ণিত ঘটনাগুলির ন্যায় সীতার পূর্ব্বজীবনের স্মৃতিসম্পৃক্ত এই বিবরণীটি করুণ-মধুর রসের উৎস।
পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (চতুর্থ খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৫৩০
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫২৬
পূর্ব্ববঙ্গ গীতিকা
শ্রী দীনেশচন্দ্র সেন