পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (চতুর্থ খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৫৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৫০
পূর্ব্ববঙ্গ গীতিকা

হইল যে সে পীরের নিকট দীক্ষা গ্রহণ করিল। যে শিশু ব্রাহ্মণকুলে জন্মগ্রহণ করিয়াও চণ্ডালের অন্নে প্রতিপালিত হইয়াছে, সে ব্রাহ্মণ্য-তেজ ও মনস্বিতার অধিকারী হইয়াও ব্রাহ্মণ্য-সংস্কারের বশীভুত হয় নাই। ধর্ম্মান্ধতা তাহার ছিল না। লোকে রটনা করিতে লাগিল যে কঙ্ক পীরের নিকট কালাম্ (মুসলমানী ধর্ম্মশাস্ত্র) শিখিতেছে এবং মুসলমান পীরের প্রসাদ অমৃতজ্ঞানে খাইতেছে। কিন্তু এসকল কথা গৰ্গ কিছুই জানিতেন না। এদিকে পীরের আদেশে কঙ্ক বিদ্যাসুন্দরের কেচ্ছা সমেত একখানি সত্যপীরের পাঁচালী রচনা করিলেন। কিন্তু পীর এই ঘটনার পর সে দেশ হইতে কোথায় চলিয়া গেলেন, কেহ জানিল না। রঘুসুত লিখিয়াছেনঃ—

“গুরুর আদেশ মানি লিখিয়া পাঁচালীখনি
পাঠাইলা দেশ আর বিদেশে।
কঙ্কের লিখন কথা ব্যক্ত হইল যথা তথা
দেশ পূর্ণ হইল তার যশে।
কঙ্ক আর রাখাল নহে ‘কবি কঙ্ক’ লোকে কহে
শুনি গৰ্গ ভাবে চমৎকার।
হিন্দু আর মুসলমানে সত্যপীরে উভে মানে
পাঁচালির হইল সমাদর॥
যেই পুজে সত্যপীরে কঙ্কের পাঁচালী পড়ে
দেশে দেশে কঙ্কের গুণ গায় ।
বুঝি কঙ্কের দিন ফিরে রঘুসুত কহে ফেরে
দুঃখিতের দুঃখ নাহি যায়॥”

 কঙ্কের বিদ্যাসুন্দর দেশময় প্রচারিত হইয়া গেল এবং কবি হিসাবে তিনি দেশে সুপ্রতিষ্ঠিত হইলেন। গর্গ দেখিলেন,—কঙ্কের মত বিনীত, বিশ্বাসী, যশস্বী এবং সচ্চরিত্র ব্রাহ্মণ-বালক যে সমাজের বহির্ভূত হইয়া থাকিবেন, ইহা ভারী অন্যায়। সুতরাং তিনি ব্রাহ্মণ-সমাজের এক সভা আহবান করিয়া কঙ্ককে জাতে তুলিবার প্রস্তাব করিলেন। তিনি বলিলেন, “কঙ্ক আতি শৈশবাবস্থায় চণ্ডালের অন্নে প্রতিপালিত হইয়াছিল। ইনি সদ্‌ব্রাহ্মণের