পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (দ্বিতীয় খণ্ড দ্বিতীয় সংখ্যা) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

৭। মাণিকতারা। (২৩১—২৭৪পৃঃ)

 মাণিকতারা বা ডাকাতের পালা আমাদের অন্যতম গীতিকা-সংগ্রাহক বিহারী লাল রায় মহাশয় মৈমনসিংহ হইতে সংগ্রহ করিয়া গত বৎসর ২২শে সেপ্টেম্বর তারিখে আমাকে পাঠান। বিহারীবাবু আমাকে লেখেন যে পালাটি তিন খণ্ডে সমাপ্ত; কিন্তু তিনি বহুকষ্টে ইহার প্রথম খণ্ডটি মাত্র সংগ্রহ করিতে পারিয়াছেন। গায়েনেরা দূরবর্ত্তী ভিন্ন ভিন্ন স্থানে বাস করে বলিয়া পালার অবশিষ্টাংশ সংগ্রহ বহু শ্রমসাধ্য ও সময়সাপেক্ষ। বিহারী বাবু ২২শে সেপ্টেম্বর তারিখে আমাকে এই কথা লিখিয়া ২৫শে তারিখে হঠাৎ হৃদ্‌যন্ত্রের ক্রিয়া রহিত হওয়ায় মৃত্যুমুখে পতিত হন। বিহারীবাবু অনেক পূর্ব্ব হইতেই জ্বরে ভুগিতেছিলেন; জীবনের শেষ দিন পর্য্যন্ত তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য গাথা সংগ্রহের কার্য্য করিয়া গিয়াছেন। পালার বাকী অংশ আদৌ সংগ্রহ হইবে কিনা, বলিতে পারি না। বিহারী বাবু কোন্ কোন্ স্থান হইতে পালাটি সংগ্রহ করিয়াছিলেন, তাহা আমাকে জানাইবার সুবিধা পান নাই! আমি অবশ্য অপ্রাপ্ত অংশের উদ্ধারের আশা একেবারেই ছাড়িয়া দেই নাই।

 পালাটি বেশী দিনকার পুরাণা বলিয়া মনে হয় না। ইহাতে খাঁটি গ্রাম্য ও প্রাদেশিক শব্দের প্রাচুর্য্য এবং বিশুদ্ধ শব্দের অভাব থাকিলেও ইহার পয়ার ছন্দ অপেক্ষাকৃত দোষবর্জ্জিত ও আধুনিক, এবং ইহাতে সর্ব্বত্র চতুর্দ্দশ অক্ষরের নিয়ম পালিত না হইলেও, পয়ারের বিরাম ও যতি সম্বন্ধে নিয়মাবলী অনেক পরিমাণে রক্ষিত হইয়াছে। এই সকল কারণ মনে হয়, সংস্কৃতের কিছু প্রভাব এই কৃষক কবিদের গানের উপর অলক্ষিত ভাবে আসিয়া পড়িয়াছে। কিন্তু ইহা যে ইংরেজাগমনের পূর্ব্বে রচিত হইয়াছে, তাহার কোনও সন্দেহ নাই। পালায় বর্ণিত আছে যে বিনিময় প্রথার সাহায্যে, প্রধানতঃ কড়ির বদল দিয়া, বাণিজ্যের আদান প্রদান চলিত। প্রথম সর্গে ৩৭-৪৩ ছত্রে উল্লেখ আছে যে নদী পার হওয়ার পারিশ্রমিক বাবদ মাঝিরা কখন কখনও ১২০০০