পাতা:পৌরাণিকী - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পৌরাণিকী গেল-“আমার নয়নের তারা, প্ৰাণের প্রতিমা, একবার আমার বাহুবন্ধনে ধরা দাও” বলিয়া লক্ষ্মীন্দর তাহাকে নিকটে আসিতে বলিল । লজ্জাবতী দূরে সরিয়া গেল, সে ধরা দিল না ; লক্ষ্মীন্দর পুনশ্চ ঘুমাইয়া পড়িল । বিনিদ্র চক্ষে বসিয়া বেহুলা স্বামীর রূপসুধা পান করিতে লাগিলেন ; আবার লক্ষ্মীন্দরের ঘুম ভাঙ্গিল ; সে চাহিয়া দেখিল, একখানি স্বর্ণপ্ৰতিমার ন্যায়। বেহুলা বসিয়া আছে। লক্ষ্মীন্দর বলিল, “দেখ, আমার বড় ক্ষুধাবোধ হইতেছে, আমায় যদি চারিটি ভাত রাধিয়া দিতে পাের।” এই বলিয়া লক্ষ্মীন্দর আবার ঘুমাইয়া পড়িল। বেহুলা এত রাত্রে সেই গৃহে কেমন করিয়া ভাত রাধিবেন! বরণ-ডালায় শুভঘাট ছিল, তিনটা নারিকেল দিয়া উনন প্ৰস্তুত করলেন, সেই শুভঘট নারিকেলের জলে পূর্ণ করিয়া, বরণডালার তণ্ডুলি লইয়া তাহাতে পূরিলেন, স্বীয় স্বর্ণখচিত পট্টবাস্ত্রের আঁচল ছিড়িয়া, উননে অগ্নি জালিয়া বেহুল ভাত রাধিতে লাগিলেন । এদিকে, আকাশে এক নিবিড় মেঘগৃহে মনসাদেবী উপবিষ্ট হইয়া সৰ্পগণকে স্মরণ করিলেন। সেই গৃহের শীর্ষে একটা প্ৰকাণ্ড উল্কা-শিখা পতাকার ন্যায় উদ্ধে দুলিতেছিল। সৰ্পের অমূল্য মণিগুলি গৃহের সর্বত্র ধকৃধকৃ করিয়া জ্বলিতেছিল। মনসার আহবানে দিকৃদিগন্ত হইতে সৰ্পসমূহ তথায় ছুটিয়া আসিল-তাহারা কেহ একশীর্ষ, কেহ বহুশীর্ষ, কাহারও দেহ চক্রাকৃতি বিচিত্র বর্ণে সুশোভিত, কাহারও শরীর শুধু স্বৰ্ণরেখাময় । বিড়ঙ্গিণী, তক্ষক, বঙ্গদাড়া, শঙ্কর, তালভঙ্গ প্ৰভৃতি অসংখ্য সৰ্প তথায় উপস্থিত হইল, তাহদের গতিতে মরুৎ মন্থর প্রতিপন্ন হইল, সংহারিক শক্তি ও চাঞ্চল্যে বিদ্যুৎ পরাস্ত হইল । V8