পাতা:পৌরাণিকী - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বেহুলা উডভীন হইত, তখন তিনি মনে করিতেন, উহা ত্ৰ্যম্বকের বিশাল জটাজুট। গাঙ্গুড় নদীর তরঙ্গাভিহিত গিরির পাদমূল দেখিয়া ভঁাহার মনে হইত, বিরাট নগ্নকায় মহেশ্বরের জটা হইতে শুভ্ৰ গঙ্গাধারা অবতয়ণ করিতেছে। কখনও ব্যাপীনীরে ফুল্লারবিন্দ দর্শনে তিনি মনে করিতেন, হরের ত্ৰিনেত্ৰ নিৰ্ম্মল জলে উদ্ভাসিত হইয়া উঠিয়াছে। কখনও নিশাকালে পর্বতের শীর্ষ হইতে শশিলেখা উদিত দেখিয়া তিনি জটাজুটমণ্ডিত চন্দ্ৰচুড়ন্দ্রমে সেই গিরিকে অসংখ্যাবার। প্ৰণিপাত করিতেন । নিশশেষে মান নক্ষত্রপংক্তি সেই গিরিশীর্ষ বেষ্টন করিয়া শোভা পাইত, কখনও তিনি তাহাদিগকে হরাঙ্গশোভী রুদ্রাক্ষ মনে করিতেন, কখনও-বা শিবদেহের শুভ্ৰ ভস্মচিহ্ন ভাবিয়া, ভক্তিগদগদকণ্ঠে শঙ্কর-স্তবমালা পাঠ করিতেন। কখনও গাঙ্গুড়ের অক্ষুটশব্দে চমৎকৃত হইয়া তিনি তন্মধ্যে হরমুখোচ্চারিত “ওঁঙ্কারো”র আভাস পাইতেন । দিবারাত্রি তিনি এইভাবে শিবাধ্যানে, নিবিষ্ট থাকিতেন । শুধু ক্ষণে ক্ষণে মনে হইত যেন “আমার নখা কোথায় ?” বলিয়া কেহ চীৎকার করিতেছে--সেই তীব্ৰ চীৎকার করিয়া যেন কাহারও হৃদয় বিদীর্ণ হইয়া যাইতেছে, আর কথা না বলিতে পারিয়া শুধু দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিয়া প্ৰাণভেদী যাতনায় সে ছটফট করিতেছে । মুহমান সদাগর সেই আৰ্ত্ত-স্বর ও নিশ্বাস-পতন শব্দ-কল্পনায় বিচলিত হইয়া স্বগৃহের দিকে দৃষ্টিপাত করিতেন,-তখন তাহার চক্ষু হইতে বিন্দু বিন্দু অশ্রু ঝরিত। কখনও শিবমূৰ্ত্তি ধ্যান করিতে বসিয়া দেখিতেন, যেন কোন উন্মাদিনী রমণী প্ৰাণপ্ৰতিম কাহাকেও বক্ষে লইয়া অকুল নদী তরঙ্গে ভেলায় ভাসিয়া যাইতেছে ; “ইহারা কে ?” সদাগরের তাহা নির্ণয় 8