পাতা:পৌরাণিকী - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বেহুলা মান্দাসে বসিয়া মৃত স্বামীর মুখের দিকে চাহিয়া আছেন। ভেলা একবার জলে ডুবিতেছে, আবার উঠতেছে ; উপবাস শীর্ণ শোকময়ীর সেদিকে দৃকৃপাত নাই ; তঁাহার ললাটে উজ্জ্বল সিন্দুরবিন্দু-আর্দ্র বসনখানি বায়ু-হিল্লোলে উড়িতেছে। চতুর্দিক হইতে কত কুভীর সেই মৃতদেহ গ্রাস করিবার জন্য চুটিয়া আসিতেছে, বেহুলার করসঞ্চালিত জলহিল্লোলে তাহারা দূরে সরিয়া যাইতেছে, আবিরল অশ্রুজিলে বেহুলার গণ্ডদ্বয় প্লাবিত হইতেছে। হরিসাধু ডাকিয়া বলিলেন, “ভীগিনি, তোমার এ দশা কেন ? অন্সরার ন্যায় এত সাজসজ্জা করিয়া দুই দিন হইল তোমাকে পতিগৃহে পাঠাইলাম, তোমার এ দশা কে করিল ?” বলিতে বলিতে হরিসাধু উচ্চৈঃস্বরে কঁাদিয়া উঠিলেন । বেহুলা কথা না কহিয়া শুধু কপালে হাত দিয়া দেখাইলেন : শ্রাবণের ধারার ন্যায় তাহার দু'টি চক্ষু দিয়া জল পড়িতে লাগিল । বাষ্প-গদগদ কণ্ঠে হরিসাধু বলিলেন, “যাহা হইবার হইয়াছে, এখন লখাইকে লইয়া ভেলা এইখানে লগাও, অগুরু ও চন্দনকাষ্ঠের চিতায় সযত্নে লখাই-এর সৎকার করিব । শািব লইয়া জলে ভাসিবার তাৎপৰ্য্য কি ? বুদ্ধিহীন চাঁদ-সদাগর মৃতের সঙ্গে জীবিতকেও জলে ভাসাইয়া দিয়াছে, চম্পকনগরের লোক কি নিৰ্ম্মম ! তোমাকে জীবন থাকিতে আর আমরা সেখানে যাইতে দিব না ।” বেহুল ঘাড় নাড়িয়া অসম্মতি জানাইল, “এই মৃতদেহে জীবন সঞ্চার করিতে পারিলে দেশে ফিরিয়া আসিব, স্বামীর যে গতি, আমারও তাহাই ।” তীরের লোকেরা বেহুলার অবস্থা দেখিয়া কঁাদিতে লাগিল। হরিসাধু 3G,