পাতা:পৌরাণিকী - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

KD এই ভাবে প্ৰায় ছয় মাস কাটিয়া গেল । লখাই-এর কয়েকখানি হাড়মাত্র অবশিষ্ট ; বেহুল উপবাসে ও অকথ্য কষ্টে শীর্ণ বিবৰ্ণ হইয়া পড়িয়াছেন ; এ আর সে “চতুৰ্দশ বসন্তের একগাছি মালা”-প্ৰফুল্লমুখী অপূৰ্ব্ব রূপলাবণ্যের ডালি বেহুলা নহেন, তাহার মাতা অমলাও আর তঁাহাকে চিনিতে পারিতেন না । ক্ষীণ-দেহ বাতাঘাতে-তরঙ্গাঘাতে সতত ক্লিষ্ট । সে মুখের মধুর হাসি-যাহ নিছনিনগরের সর্বশ্রেষ্ঠ কুসুমতুল্য ছিল, তাহ শুকাইয়া গিয়াছে, আছে শুধু জ্যোতি:—খর পুণ্যের জ্যোতিঃ-সাধুৱা তাহা চিনিতে পারিতেন, সেই অতিক্ষীণ কাস্তিতে একটা জলন্ত সুৰ্য্যের প্রভা ছিল--তাহা স্বৰ্গীয় । প্ৰায় ছয় মাস অতীত হইতে চলিল । একদিন সন্ধ্যা প্ৰায় অতীত হইয়াছে । নিবিড় অন্ধকার নদীবক্ষে বিকট তরঙ্গ আশ্রয় করিয়া যেন পৈশাচিক গান গাহিতেছে। জলজন্তুরা ভেলার চতুদিকে বিচরণ করিতেছে। বেহুলা স্বামীর কঙ্কাল লইয়া চিত্র-পুস্তলীর ন্যায় বসিয়া আছেন । বাতাস যেন কি উৎকট শব্দ করিয়া বহিয়া যাইতেছে, বেহুলা জলে কি স্থলে আছেন, তাহা বুঝতে পারলেন না ; আকাশ কোন দিকে, নদী কোনূদিকে, কোন দিক হইতে বাতাস বাহিতেছে, আঁধার কোন দিক হইতে নামিতেছে, তিনি কিছুই বুঝিতে পারিলেন না ; তারা নাই, চন্দ্ৰ নাই, কোনও নৌকার দীপশিখাটি পৰ্যন্ত নাই, শুধু কে যেন ফণিরাজ্যের ন্যায় তাহাকে বহন করিয়া গর্জন করিতেছে-এ কি নদী ? এই নিবিড় বুজনীতে বেহুলা শুনিতে পাইলেন, কে যেন বলিতেছে, “মৃতদেহ কি প্ৰাণ পায়?--বেহুলা ! তুমি বাতুলতা ছাড়িয়া ঘরে যাও।”