পাতা:প্রবন্ধ সংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/২৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

丸决8 প্ৰবন্ধসংগ্ৰহ যাঁদের মতে কবির প্রতিভা নিয়ন্তিকৃত নিয়মের অধীন নয়, তাঁরা যে কবিপ্রতৃিভাকে মানষের হাতগড়া সামাজিক বিধিনিষেধের অধীন ব'লে স্বীকার করবেন না সে কথা বলাই বাহল্য। সেকালে কাব্য নিজের পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়াত, সত্য অথবা শিবের হাত ধ’রে নয়। 8 গ্ৰাম্যতা অবশ্য শব্দেরও দোষ, অর্থেরও দোষ। একালের মতো সেকালেও ভাষা, সাধভাষা ও ইতরভাষা। এই দই শ্রেণীতে বিভক্ত ছিল। সংস্কৃত ভাষার সাধ, শব্দেব সঙ্গেই আমাদের পরিচয় আছে, ইতর শব্দের সঙ্গে নেই বললেই হয়। সতরাং শব্দের গণ-দোষ বিচার না ক'রে আলংকারিকদের মতে শব্দের অর্থগত গ্রাম্যতার পরিচয় নেওয়া যাক। সেকালে গ্রাম্যতার অর্থ একালের চেয়ে ঢের ব্যাপক ছিল। দণ্ডডীর মতে কন্যে কামযিমানং মাং ন ত্বং কাময়সে কথম । উক্তিটি অর্থের গ্রাম্যতা-দোষে দন্ট। অপর পক্ষে— কামং কন্দপচাপডালো ময়ি বামাক্ষি নিদৰ্শয়ঃ। এই উক্তিটি শােধ “অগ্রামোহথঃ’ নয়, উপরন্তু রাসাবহ । এ উভয়ের ভিতর প্রভেদ কোথায়, তা ধরতে একটি চেস্টা করা যাক। কেননা বিনা চেন্টায় তা ধরা শক্ত। এক বিষয়ে এ দায়ের ভিতর একটা মস্ত মিল আছে। এ দলটি উক্তিই সমান কবিত্ব-ছাট। তার পর দটিতেই একই মনোভাব প্রকাশ করা হয়েছে ; দায়ের ভিতর প্রভেদ মাত্র এই যে, প্রথমটি সাপটে কথায় বলা হয়েছে, দ্বিতীয়টি একটা ঘরিয়ে ফিরিয়ে। এর থেকে অনামান করা যায়, প্রাচীনদের মতে কথা সোজােসজি ভাবে বললে তা গ্রাম্যতা-দোষে দহট হয়, আর বেকিয়ে চুরিয়ে বললেই তা শািন্ধ অগ্রাম্য নয়, রসাবহ হয়। অর্থাৎ বািক ও মাখের ভিতর কর্ড লাইনই গ্ৰাম্য এবং লাপ অগ্রাম্য। যেমন বিভিন্ন লোকের রচি বিভিন্ন, তেমনি বিভিন্ন কালের রচি বিভিন্ন। একালে অনেকে হয়তো উক্ত প্রথম পদটিই বেশি পছন্দ করবেন ; কারণ, তার ভিতর আর কিছ না থােক স্পষ্ট passion আছে, আর শেষ পদটির ভিতর যা আছে, সে শােধ সেকালের সাহিত্যিক fashion মাত্র। সে যাই হোক, সেকালের সমালোচকদের দল কি বলা হল তাতে বিচলিত হতেন। না, কি ক’রে বলা হল তাই ছিল তাঁদের কাছে বড়ো জিনিস। একালের ভাষায়, contentএব চাইতে formাকে তাঁরা বেশি মর্যাদা দিতেন। বিশেষ করে এ দটি উদাহরণের উল্লেখ করলাম। এই জন্যে যে, দন্ডী না বলে দিলে এর কোনটি গ্রাম্য ও কোনটি অগ্ৰাম্য, তা আমরা চট করে ধরতে পারতুম না। G কালক্রমে গ্রাম্যতা ও অশলীলতা বাক্যের পথক পথক দোষ বলে গণ্য হয়। দন্ডীর পরবতী আলংকারিক বামন এই উভয়বিধ দোষের উল্লেখ করেছেন। বামনের পরবতী অলংকারিকরা তাঁর মতই অনসরণ করেছেন।