পাতা:প্রবন্ধ সংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

St প্ৰবন্ধসংগ্ৰহ কাব্যখ্যানির প্রাণস্বরূপ হয় তাহা হইলে আমি উপস্থিত প্রবন্ধে যাহা বলিয়াছি তাহা একান্ত অৰ্থশান্য। সচনাস্বরূপ এই অসম্পৰ্শতার কথা উল্লেখমাত্র করিয়া আমি আসল বিষয়ের আলোচনায় প্রবত্ত হইতেছি। R রাধাকৃষ্ণের প্রণয়মােলক দই-চারিটি ঘটনা লইয়া জয়দেব গীতগোবিন্দ রচনা করিয়াছেন। একদিন কৃষ্ণ গোপিনীগণ সমভিব্যবহারে যমনাতীরে বসন্তবিহার করিতেছিলেন, এমন সময় রাধা বেশভূষা করিয়া কৃষ্ণের উদ্দেশে তথায় আসিয়া উক্ত ব্যাপার দেখিয়া ক্ৰোধাভরে ভ্ৰ কুশ্চিত করিয়া তথা হইতে চলিয়া গেলেন। কৃষ্ণও একান্ত অপ্রতিভ হইয়া মৌনভাব ধারণ করিয়া রহিলেন এবং রাধাকে গমন হইতে নিবত্তে করিতে চেন্টামাত্র করিতেও সাহসী হইলেন না। কিন্তু, রাধা চলিয়া গেলেন দেখিয়া তিনি গোপবধাদিগকে পরিত্যাগ করিয়া কোনো-এক নিভৃত কুঞ্জবনে আশ্রয় লইয়া মনোদঃখে রাধার কথা ভাবিতে লাগিলেন। এদিকে রাধা স্বস্থানে ফিরিয়া আসিয়া কৃষ্ণ-কৃত পােব বিহােরস্মরণে অত্যন্ত উদ্দীপ্ত হইয়া কৃষ্ণকে আনয়নাথ তাঁহার নিকট সখী প্রেরণ করিলেন। কৃষ্ণ সখীকে বললেন, “আমি যাইতে পারিব না, তাহাকে আসিতে বলো।” তার পর সখীর রাধার নিকট প্রত্যাগমন এবং কৃষ্ণের প্রার্থনানযায়ী রাধাকে কৃষ্ণের নিকট পাঠাইবার চেষ্টা। কিন্তু রাধা ইচ্ছা থাকিলেও বিরহজনিত শারীরিক ক্লান্তি হেতু সস্থান পরিত্যাগ করিতে অসমর্থ। সখী অগত্যা আবার কৃষ্ণের নিকট ফিরিয়া আসিলেন। কৃষ্ণ এবার রাধার সকাশে স্বয়ং যাইতে রাজি । সখী ছটিয়া আসিয়া রাধাকে সমসংবাদ জানাইলে রাধা বাসকসজা হইয়া কৃষ্ণের আগমন প্রতীক্ষা করিতে লাগিলেন। কিন্তু কৃষ্ণ কথা রাখিতে পারিলেন না। কাজেই রাধা ঠাহরাইলেন যে, কৃষ্ণ অন্য-কোনো রমণীর সাক্ষাৎ পাইয়া তাহার সহিত জমিয়া গিয়াছেন। উক্ত রমণীর সহিত কৃষ্ণ কিরােপ ব্যবহার করিতেছেন, সেই-সকল কথা রাধা কল্পনায় অন্যভব করিয়া সেই ভাগ্যবতীর তুলনায় নিজেকে অত্যন্ত হতভাগিনী মনে করিয়া বিলাপ করিতে লাগিলেন। রাত্রি এইরপেই কাটিয়া গেল। প্রত্যুষে কৃষ্ণ অন্য রমণীর ভোগ চিহ্নসকল শরীরে ধারণ করিয়া রাধার সমক্ষে উপস্থিত হইলেন। রাধা কৃষ্ণকে কিরােপ ভাষায় সম্পভাষণ করিলেন তাহা বোধ হয় আর বলিবার আবশ্যক নাই। কৃষ্ণ নিজের দোষীক্ষালনের কোনোরাপ চেন্টা করিলেন না, কারণ সে চেস্টা নিৰ্ম্মফল। অধরের কজল, কপোলের সিন্দর, বক্ষঃস্থ যাবকরঞ্জিত পদচিহ্ন-এ-সকল কোথা হইতে আসিল। তাহার। নাহয় একটি বাজে কারণ নির্দেশ করা যাইতে পারে, কিন্তু পরিধানের নীল শাটী সম্পবন্ধে তো আর কোনোরাপ মিথ্যা কৈফিয়ত খাটে না। রাধা কথা শেষ করিয়া দজয় মান করিয়া বসিলেন, কিন্তু কৃষ্ণের কাছে কি মান টিকে ? তিনি মনোমত কথায় রাধার প্রীতিসাধন করিলেন, রাধা কৃষ্ণের উপরে যে আড়ি করিয়াছিলেন তাহা ভাবে পরিণত হইল। এই তো গেল প্রভাতসময়ের ঘটনা। যোগোেযাগে দিনটিও কাটিয়া গেল। দিনাঙ্গেত