পাতা:প্রবাসী (অষ্টবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৭৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আরাতাম শ্ৰীনগেন্দ্রনাথ গুপ্ত চতুৰ্ব্বিংশ পরিচ্ছেদ বিশলাম নগরে শত্রুর আক্রমণের আশু আশঙ্কা না থাকিলেও র্যাহারা নগররক্ষার ভার লইয়াছিলেন, তাহার নিশ্চিন্তু হইয়া থাকিতে পারিলেন না। রাজা শিশের সেনাপতির সঙ্গে নগর ত্যাগ করেন নাই, কিন্তু এক সপ্তাহের মধ্যে আরও কিছু সৈন্ত লইয়া তিনি সেনাপতির অনুগামী হইলেন। তাহার আদেশমত রাজকন্তী সাফির গোপনে নগর পরিত্যাগ করিয়া বনে মৃগয়াভবনে চলিয়া গিয়াছিলেন । র্তাহার রক্ষকস্বরূপ পচিশ জন সৈনিক সঙ্গে গেল। রাজকণ্ঠ যে নগরে নাই, এ কথা কিছুদিন প্রকাশ পাইল না। নগরবাসীরা জানিল, রাজকন্তকে নগরে রাখিয়া রাজা যুদ্ধক্ষেত্রে গিয়াছেন। নগর-রক্ষার ভার প্রধানতঃ নাগরিক-সৈন্তের উপর, অপর সৈন্তসংখ্যা অল্প। গালিমের আলস্ত ও দীর্ঘস্বত্রত একেবারে বিলুপ্ত হইয়াছিল। সৈন্তদিগকে শিক্ষা দেওয়া, তাহাদিগকে সৰ্ব্বদা সতর্ক রাধা, নগরের সৰ্ব্বত্র পর্য্যবেক্ষণ করা, গালিমের দৈনন্দিন কৰ্ম্ম। তাহা ছাড়া রাত্রিকালে প্রহরে প্রহরে তিনি মগরের সর্বত্র ভ্রমণ করিতেন। তাহার উৎসাহে ও অক্লাস্ত অধ্যবসায়ে সমস্ত নগর উৎসাহিত হইয়। উঠিল, এমন কি, স্ত্রীলোকের পর্যন্ত অন্ত্রনিৰ্ম্মাণ, আঃাৰ্য্য সংগ্রহ প্রভৃতি করিতে লাগিল। যদি শত্রু রাজসৈন্তকে বঞ্চিত করিয়া নগর বেষ্টন করে, তাহা হইলে কিছুদিন নগরের বাহির হইতে কোনরূপ সাহায্য পাওয়া যাইবে না, এই সকল বিবেচনা করিয়া গালিম প্রচুর শস্ত সংগ্ৰহ করিলেন। শত্রু পাহাড়ের জলপ্রণালী বন্ধ করিয়া দিতে পারে, তাহার প্রতিকারস্বরূপ গালিম নগরের যাবতীয় তড়াগ ও কূপ জলপূর্ণ করিলেন। যে কয়টি বিমান ছিল, সেগুলি দিবাভাগে ও রাত্রে নগরের চতুর্দিকে বহুদূর ” পর্য্যস্ত ভ্রমণ করিত। অতি আল্পসংখ্যক অপর সৈন্ত ছিল, তাহার। গালিমের অনুগত, বিনাবাক্যে র্তাহার সকল আদেশ পালন করিত। নগরে যে কোন শত্রু জাছে অথবা শত্রুপক্ষীয় কেহ আছে গালিম সে সংশয় করিতেন না । ছদ্মবেশী রত্নবণিকের পরামর্শমত ফারেজ নাগরিক সৈন্যদলভূক্ত হইয়াছিলেন ও সকল কৰ্ম্মে উৎসাহী ছিলেন। গালিম তাহাকে । একদল সৈম্ভের ভার দিয়াছিলেন। ফারেজ যে শিক্ষা পাইছাছিলেন তাহা তাহার স্মরণ ছিল, কিন্তু শত্রুর সহায়তা তাহাকে কেমন করিয়া করিতে হইবে ঠিক বুঝিতে পারিতেন না। হয় সেই রত্নবণিক কিংবা অার কাহাকেও দেখিতে না পাইলে তিনি কি সন্ধান দিবেন ? ফারেজ যে ঠিক রাজদ্রোহী তাঁহা নয় ; কেন না, রাজা শিশেরার বিরুদ্ধে তাহার কোন অভিযোগ ছিল না । তাহার রাগ আরাতামার উপর। আরাতামার প্রতি রাজার বিশেষ অনুগ্রহ আর আরাতাম যথেষ্ট ক্ষমতা প্রাপ্ত হইয়াছেন। শত্রুর জয় হইলে আরাতামার শাস্তি হইবে, ফারেজের সেই আশা এবং সেইজন্ত তিনি বিশ্বাসঘাতকতা করিতে প্ৰস্তুত। তিনি একটা মুযোগের অপেক্ষা করিতে ছিলেন । লোবান নাগরিক-সেনার দলে যোগ দেন নাই। গালিম তাহাকে একবার বলাতে তিনি উত্তর করিয়াছিলেন আমি বিদেশী, কোন পক্ষে যোগ দিতে চাহি না । গালিম বলিলেন,-বিদেশী বলিলে ত শত্রুর কাছে রক্ষা পাইবেন না। —শত্রু আসিবার পূৰ্ব্বেই আমি নগর ছাড়িয়া যাইব । গালিম রুষ্ট হইয়া কছিলেন, নগর হইতে বাহিরে গিয়া আপনি যে শত্রুর সঙ্গে যোগ দিবেন না তাহা কেমন করিয়া জানিব ? লোবান রাগিয়া বলিলেন, আমি এখানকার রাজার প্রজা নই, আমার উপর আপনাদের কি ক্ষমতা ? '