পাতা:প্রবাসী (অষ্টম ভাগ).pdf/১৯৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S8x তখন সেই দলের প্রধান ব্যক্তি কহিলেন—“কিন্তু ধূমসেবনের জন্ত কোন যন্ত্র না থাকায় আমাদিগকে বিশেষ কষ্ট পাইতে হইতেছে।” এই বলিয়া তিনি আমুপূৰ্ব্বিক সমস্ত বর্ণনা করিলেন। মহাদেব শুনিয়া পরম সস্তুষ্ট হইলেন, এবং তাহদের উন্মুমের ভূয়সী প্রশংসা করিয়া কহিগেন“তোমাদের চেষ্টায় যদি একটা যন্ত্র স্মৃষ্টি হয় তাহা হইলে আমিও বাচি, গঞ্জিকা সেবনে আমারও , তেমন সুবিধা হইতেছে না,-ইচ্ছা হয় সমস্ত ধূমটাই গলাধঃকরণ করি, কিন্তু তাহা পারি না।” দলের প্রধান ব্যক্তি তখন বলিলেন—“হে দেবোত্তম! যন্ত্ৰ-নিৰ্ম্মাণ অসাধ্য বলিয়া অনুমিত হইতেছে না, বিশ্বকৰ্ম্ম আমাদিগকে ভরসা দিয়াছেন, ব্ৰহ্মার কাছ হইতে কমণ্ডলুট পাইয়াছি। এখন আপনি কোন উপকরণ দিলেই হয় ।” মহাদেব উত্তর করিলেন—“দেখ ভক্তগণ, প্রায়ই আমার মনে হয় যে, আমার ডমরুটার দ্বারা জগতের অশেষ উপকার সাধিত হইবে ; যখন বাজাই তখন তাহার গম্ভীর রব হইতে যেন অন্মুট আভাস পাই–যেন সে আপনি গুমরি গুমরি বলে—“হে দেব, আমার কার্য্যের প্রসার বৃদ্ধি করিয়া দাও, শুধু শব্দ স্বজন আমার চরম লক্ষ্য নয় ; আমার অন্ত যা গুণ আছে তাহা প্রকাশিত হইতে দাও, কেবল ভালমানলয়ের মধ্যে আবদ্ধ রাখিও না।” তাই বলিতেছি হে ধূমপায়িগণ! দেখদেখি পরীক্ষা করিয়া আমার অনুমান সত্য কি না। আমার বিশ্বাস ডমরুট ধূমসেবন যন্ত্রের একটা অত্যাবশ্যক উপাদান হইতে পারিবে।” এই বলিয়া তিনি ভৃঙ্গীকে ডমরু আনিতে আদেশ করিলেন। ভূঙ্গী তাহা উঠাইয়া আনিল। কঁাধ হইতে গামছাথান লইয়া তাহার ধূলা ঝাড়িয়া মহাদেবের হাতে দিল । তিনি তাহ গ্রহণ করিয়া নিজের পাশে রাথিয়া দিলেন । তারপর অন্ত কথাবার্তা আরম্ভ হইল ; ইতিমধ্যে ভৃঙ্গী সিদ্ধি আনিয়া হাজির করিল, মহাদেব থানিকটা পান করিয়া ভক্তদিকে প্রসাদ দিলেন। ধূমপান যন্ত্রের কথাটা আর উঠিল না। ধূমপায়ীর দল প্রস্থান করিবার জন্য ব্যস্ত হইয়া উঠিলেন, কিন্তু ডমরুট হস্তগত না হইলে যাইতে । পারেন না, মহাদেবের কোলের কাছে সেটা পড়িয়া আছে, তিনি তাহ দিবার নামও করেন না। সকলে প্রমাদ প্রবাসী। SSMSSSMSSSMSSSMSSSMSSSMSSSMSSSMSSS [ ৮ম ভাগ। গণিলেন। অনেকক্ষণের পর একজন মাথা চুলকাইন্তে চুলকাইতে বলিলেন—“হে দেব! তাহ হইলে ডমরুনী লইবার জন্ত কবে আসিব ?” মহাদেব একটু অপ্রতিভ হইয়া বলিলেন—“ন, ন, ওটা আজই নিয়ে যাও। আমি ওটার কথা একদম ভূলেই গিয়াছিলাম।” তারপর একটু হাসিয়া বলিলেন—“এই জন্তেই ত নূতন উপাধি পেয়েছি,-ভোলানাথ।” ( & ) বিষ্ণু ধূমপানীদের উপর বড় চটা ছিলেন। ধূমপানী সভা উঠাইয়া দিবার জন্ত স্বর্গের কীেগুলি সভায় অনেকবার প্রস্তাব উত্থাপন করিয়াছিলেন, কিন্তু দেবাদিদেৰ মহাদেবের জন্ত তাহ পারেন নাই, তিনি বরাবর বিষ্ণুর প্রস্তাবের তীব্র প্রতিবাদ করিয়া আসিতেছেন। বিষ্ণু তথাপি ছাড়েন নাই ; উন্নতিবিধায়িনী পত্রিকায় ধূমপানের বিরুদ্ধে লম্বা লম্বা প্রবন্ধ লিখিয়া বিষয়টাকে সঙ্গীর রাখিয়াছিলেন। কিন্তু কিছুতেই বিশেষ কোন ফল হয় নাই ;–এ সমস্ত বাধা সত্ত্বেও ধূমপায়ী সভা দিন নি শ্ৰীবৃদ্ধিলাভ করিতেছিল। যে দিন প্রতিনিধিদল উপকরণ আহরণের চেষ্টায় তাহার প্রাসাদে আসিল, তিনি অগ্নিশৰ্ম্ম হইয়া উঠিলেন ; প্রহরীকে ডাকিয়া বলিলেন—“যা বোলগে আমার সঙ্গে দেখা হইবে না।” প্রহরীর মুখে এ কথা শুনিয়া ধূমপায়ীর দল পশ্চাৎপদ হইল না, “তোমার মনিবকে বলগে যে, আমরা অতি অর সময়ের জন্তই তাহার সহিত সাক্ষাৎ করিতে চাই ।” প্রহরী প্রভুর অগ্নিমূৰ্ত্তি দেখিয়া আসিয়াছিল, সে অবস্থায় তাহার কাছে আর যাইতে সাহস করিল না, বলিল—“বৃথা চেষ্টা, দেখা হবে না।” অমনি করিয়া তিন তিন দিন ধূমপায়ী সভা প্রতিনিধিদল বিষ্ণুর বহিদ্বার’ হইতে ফিরিয়া আসিল। তখন তাহার এক মতলব আঁটিলেন। মৰ্ত্ত স্বজন হইবার পর হইতে সেখানে লীলা খেল ; করিবার জন্য স্বর্গের অনেক দেবতা আদিষ্ট হইয়াছিলেন। বিষ্ণুর উপর ভার পড়িয়াছিল যে তাছাকে মৰ্ত্তাধামে বংশ: বাদন করিয়া গোপিনীকুলের মনোরঞ্জন করিতে হইৰে৷ SMSMSMMSMMSMSMSMSMMSSMMMMSS বাণ বাজান তাহার কথন অভ্যাস ছিল না, সেইজন্ত আজ সেবনের জন্য কেবলমাত্র কাল প্রত্যহ সন্ধ্যাবেলা একটা কন্সাটের আড্ডায় বঁাশী বাজান শিখিতে যান। ধূমপায়ীরা সে সন্ধান পাইয়াছিলেন। একদিন সন্ধ্যাবেলা ধূমপারিদলের একটা ছোকরা ছদ্মবেশে সজ্জিত হইয়া বিষ্ণুর বাড়ীর সম্মুখে পায়চারি করিতেছিল। সে দিন বিষ্ণু বাণীট হাতে করিয়া যেমনি ৰাছির হইয়াছেন, অমনি সেই ছোকর চিলের মত ঢেঁ মারিয়া বিষ্ণুর হাত হইতে বাণীটা কাড়িয়া লইয়া ছুট দিল— তাহার বাষ্পময় স্বগদেহ নিমেষের মধ্যে সন্ধ্যার অন্ধকারে কোথায় মিলাইয়া গেল তাহা বিষ্ণু দেখিতে পাইলেন না ; বিরস বদনে বাটীতে ফিরিয়া গেলেন । সেই অবধি তাহার কন্সার্টের আড়ায় যাওয়া বন্ধ হইল । বিষ্ণু অল্পদিনের মধ্যেই জানিতে পারিলেন যে, ধূমপায়ীদিগের চাতুরীতে তাহার বাণীটা গিয়াছে। বাণীটা যে কেহ কাড়িয়া লইয়াছে, সে কথা লজ্জায় দেবসভায় প্রকাশ করিতে পারিলেন না ; ধূমপায়ীরাও কি উপায়ে তাহ সংগ্ৰহ করিয়াছেন অপ্রকাশ রাখিলেন। আসল ব্যাপারটা কেহ জানিল না ; সকলে বুঝিল, ব্রহ্মা এবং মহেশ্বরের স্থায় তিনিও দান করিয়াছেন। কিন্তু বঁাশীট হস্তান্তর হওয়ায় বিষ্ণুর মৰ্বে আসিবার দিন পিছাইয়া গেল। "(s) ব্ৰহ্মার কমণ্ডলু, বিষ্ণুর বঁাশী ও মহেশ্বরের ডমরু পাইয়া বিশ্বকৰ্ম্ম যন্ত্ৰ নিৰ্ম্মাণে লাগিয়া গেলেন । এই তিনটি সামগ্ৰী দর্শনমাত্রেই তাহার উদ্ভাবনীশক্তিসম্পন্ন মস্তিষ্কে ধূমপান যন্ত্রের একটি ছায়া পড়িল ; তাহারই অনুকরণ করিয়া তিনি একটি কায় রচনা করিলেন । কমণ্ডলুর মুখের ফাঁদ কমাইয়া ফেলিলেন, বাশীর ছিদ্রগুলি বুজাইয়া দিলেন, ডমরুর দুই মুখের চৰ্ম্ম ফাসিয়া গেল। তখন কমণ্ডলুর উপর বঁাশী, বঁাশীর উপর চৰ্ম্মবিহীন ডমরুট স্থাপন করিয়া দেখিলেন, ঠিক হইয়াছে। সকলিকা হুকার স্মৃষ্টি হইল। বিষ্ণু ক্ষুব্ধ হইলেন, ব্ৰহ্মা নিশ্চিন্তু হইলেন, মহেশ্বর মহা খুলী। তাহার ডমরুটকে তিনি যে বাষ্ঠজন্ম হইতে মুক্তি দিতে পারিয়াছেন, সেই জন্ত তাহার বেশী আনন্দ । প্রিয় ডমরুটকে তিনি এক ভাবে I দান করিয়া আর একভাবে গ্রহণ করিলেন ; গঞ্জিকা छ्कांद्र खश् । ○8マ) কলিকাটি লইয়া তাহাকে শ্রেষ্ঠত্ব ও অমরত্ব দান করিলেন। সেই অবধি গঞ্জিকা সেবনে কলিকাই প্রশস্ত । - হকা সৃষ্টি হওয়ার কথা ইন্দ্রের কানে পৌছিল। তিনি চুটিয়া আসিয়া ব্ৰহ্মাকে কহিলেন—“করিয়াছেন কি দেব! স্বষ্টি রক্ষা হইবে কি করিয়া ?” ব্ৰহ্মা বাগ্রস্বরে বলিয়া উঠিলেন—“কেন, কেন ?" ইন্দ্ৰ—“মর্ত্যলোকবাসীরাও যজ্ঞকাৰ্য্য বন্ধ করিয়াছে, তাহার উপর আমার বজট চুরি করিয়া লওয়া অবধি তাহাকে তাহারা সকল কাযে লাগাইতেছে, অগ্নিদেবকে আর বড় কেয়ার’ করে না ; ধূম্ৰঅভাবে বরুণ কোথাও রীতিমত জলবর্ষণ করিতে পারিতেছেন না ; তামাকু ব্যবহারের সর্বত্র বহুল প্রচার হওয়ায় একটু আশার উদয় হইতেছিল। তাহার ধূমও যদি যন্ত্র সাহায্যে টানিয়া লইবার ব্যবস্থা করিয়া দেন, তবে আর উপায় কি ? বারি অভাবে পৃথিবী প্রাণশূন্ত হইয়া পড়িবে—আপনার সৃষ্টি রসাতলে যাইবে।” . ইন্দ্রের কথা শুনিয়া ব্ৰক্ষার চতুর্মুখ ভয়ে একেবারে বিবর্ণ হইয়া গেল, তিনি জড়িত কণ্ঠে বলিলেন—“তাই ত, তাই ত, ধূম্রলোকবাসীরা ত আমায় এ কথা বলে নাই, তাহারা আমাকে ভয়ঙ্কর ঠকাইয়াছে।” ইন্দ্র বলিলেন,—“ইহার উপায় বিধান করুন।” ব্ৰহ্মা বলিলেন—“নিশ্চয়ই, ধূমপায়ীরা আমার সঙ্গে যেমন- জুয়াচুরি করিয়াছে, আমি তাহাজের তেমনি অভি. সম্পাত দিব। ইন্দ্র । তুমি জল আন।” জলগণ্ডুষ লইয়া ব্ৰহ্মা তখন শাপ দিলেন—“কোন ধূমসেবী আজ হইতে ধূমপানযন্ত্রনিঃস্থত সমস্ত ধূম গলাধঃকরণ করিতে পারিবে না,—ধূমের অধিকাংশ ভাগ তাহাকে ফু দিয়া মুখের ভিতর হইতে বাহির করিয়া দিতে হইবে। যে এই নিয়ম লঙ্ঘন করিবে সে ধূমপানে কোন তৃপ্তিলাভ করিতে পারবে না, তাহাকে ক্ষাকাশে অকালে দেহত্যাগ করিতে হইবে।”- -

  • যাহারা তামাকু সেবন করেন উাহারা জানেন যে, ধোয় টানিয়া মুখ হইতে বাহির করিয়া দিয় তাহ চোখের সামনে স্পষ্ট দেখিতে । না পাইলে তামাকু খাইরা কোন তৃপ্তি হয় না। তাহার কারণ আমার মনে হয় ব্রহ্মার এই অভিশাপ।-লেখক।

---