পাতা:প্রবাসী (অষ্টম ভাগ).pdf/২৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

88や প্রবাসী [ ৮ম ভাগ। সুপরি শবদ দেশজ কি ? জন্মে না। ভারতের সমুদ্রতটবর্তী স্থান হইতে কি - উত্তর ভারতে সুপরি লইয়া যায়। সফর করিয়া যায় ভাদ্র মাসের প্রবাসীতে 'চক্ষু পদার্থ কি? এই নামের প্রবন্ধের পাদটীকায় শ্রদ্ধাস্পদ শ্ৰীদ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর মহাশয় সুপারি শব্দ বাংগলা বলিয়াছেন। তাহার ভাষায়, গুবাক—ডাহা সংস্কৃত, গুয়া—ভাঙা সংস্কৃত, সুপারি— ডাহা বাঙলা । ‘ডাহা বাঙলা’ অর্থে বোধ করি বংগদেশজ শব্দ। কিন্তু বাংগলাভাষায় সুপরি শব্দ অধিক দিন প্রবেশ করে নাই। কৃত্তিবাসে (লংকাকাংডে, বাট ভরিয়া গুয়া দিব, কবিকংকণে, ‘তামুলিতে দেয় ওয়া পান । শ্রীচৈতন্য চরিতামৃতেও গুয়া”। ভারত চন্দ্রে, এমন কি প্রায় এক শত বৎসর পূর্বের মাণিক গাংগলীর ধর্মমংগলেও স্বপরি বা স্বপারি শব্দ পাই না, পাই গুয়া। পূর্ববংগে (যেমন ঢাকা ও ফরিদপুরে) নিম্নশ্রেণীর লোকের অদ্যাপি গুআ বলে। ওড়িয়াতে গুআ ; সুপরি বা সুপারি শব্দ অজ্ঞাত। তেলেগুতে বাকলু। বাক শব্দ সংস্কৃত গুবাক শব্দের সংক্ষেপ বোধ হয়। 'লুটা বিভকতি মাত্র। হিন্দী ও মরাঠাতে সুপারী শব্দ চলিত। উর্দুতে স্বপারী। বাংগলায় সুপরি বলে। পান সুপরি শুনি । সুপারী শব্দ উর্দুতে আছে বটে, কিন্তু আবী কিংবা ফার্সীতে নাই। অতএব যাবনিক বলিতে পারা যায় না। তবে উৎপত্তি কি ? দেশজ’ ? কোন দেশজ ? বংগদেশজ নহে । দুই অনুমান হয়। হয়ত সংস্কৃত থপুর শব্দ হইতে সপুর, সপুরী, সুপরী, স্বপারী আসিয়াছে। শব্দকল্পদ্রমে থপুর শব্দের এক অর্থ গুবাক আছে। খপুর শব্দটি অর্বাচন -সংস্কৃত বোধ হয় । সংস্কৃত শব্দের শ ষ স স্থানে হিন্দীতে খ হইতে দেখি। সংস্কৃত শব্দের থ স্থানে হিন্দীতে স হইতে দেখি না।--কিন্তু সংস্কৃত কছষ্ণ হইতে বাংগলা কুসুম কুসুম (গরম), হিন্দীতে স্বহম। এখানে সংস্কৃত শব্দের ক স্থানে श्निौष्ठ न श्हेब्राह्। ५ এমনও হইতে পারে, ঠুংদী সুপারী সংস্কৃতে থপুর আকার পাইয়াছে। তাহা হইলে মূল শব্দ সপুরী বা সপর হইতে পারে। সকলেই জানেন, সুপরি গাছ উত্তর ভারতে ~ ~ x বলিয়া সফরী, সপরী, সুপারী, সুপরি ? এই অনুমান সন্তা হইলে স্বপরি শব্দের মূল, যাবনিক সফর। ইহার সহিত বাংগলা সপর কুমড়া নাম তুলনা কর যাইতে পারে। বিলাতী কুমড়াকে কোন কোন স্থানে সপর কুমড়া বলে। ইংরেজী আনানস শব্দ হইতে বাংগল আনারস নাম হইয়াছে। বিদেশ হইতে আগত বলিয়া আনারসকে ওড়িয়াতে সপুর বলে। অতএব যাবনিক সফর হইতে সফরী, সুপারী, সুপরি শব্দ আসা অসম্ভব নহে । ঠাকুর মহাশয় বাংগলা ভাষায় অদ্বিতীয় পংডিত। এই হেতু তাহার অনুমানের বিরুধে কোন কথা বলিতে গেলে ভয়ে ভয়ে বলিতে হয়। আশা করি, তিনি সন্দেহ ভাংগির দিবেন। কটক । শ্রীযোগেশচন্দ্র রায়। অশরীরীর আবির্ভাব। গত চৈত্রের ও আষাঢ় মাসের “প্রবাসী"তে "ভূত নামানো" শীর্ষক দুইট প্রবন্ধ প্রকাশিত হইয়াছে। বর্তমান প্রবন্ধে “অঞ্জলি”র কবি শ্ৰীযুক্ত জীবেন্দ্রকুমার দত্ত মহোদয়, তাহা দের পরিবারে যে অভূতপূৰ্ব্ব ব্যাপার সংঘটিত হইয়াছিল বলিয়া আমার নিকট গল্প করেন, তাহা নিয়ে যথাযথ বিবৃত হইতেছে। “আমি গত ১৩১৪ সালের জ্যৈষ্ঠ মাসে রাঙ্গামাটীতে লেড়াইতে যাই ; সেখানেই ত্রিপাদবিশিষ্ট মেজে অশরীরীর আবির্ভাৰ প্রথমে দেখিতে পাই ; একদিন সন্ধ্যা বেলা আমাদের রাঙ্গামাটর বৈঠকখানায় প্রভাত বাবুর বর্ণনায়ু যায়ী প্রণালীতে প্রেতাত্মাকে আকর্ষণ করা হইয়াছিল। আমাদের প্রশ্নের উত্তরে প্রেতাত্মা সঙ্কেতে জানায় ফুে স্বশ্বেই আছে ; কিন্তু তাহার ভাত খাইবার ইচ্ছা করে, আমি এখনও বুঝিতে পারি নাই, তৃপ্তিহীন মুখ কিরূপ! আমাদিগের অনুরোধে পূৰ্ব্বোক্ত প্রেতাত্মাটা ঠিক একঘণ্টা পরে অল্পদিন পূৰ্ব্বে মৃত স্থানীয় একজন ভদ্রলোককে ।

o ৮ম সংখ্যা । ] মেঙ্গে আনয়ন করে। তিনি সঙ্কেতে উত্তর দেন, তিনি অত্যন্ত কষ্টে আছেন এবং এখনও তিনি তাহার বসতবাটতেই অল্পবয়স্ক ভাৰ্য্যা এবং শিশু পুত্র দ্বয়ের নিকটে অবস্থান করিতেছেন। আমি পূৰ্ব্বোক্ত প্রেতাত্মাকে আমার বয়স কত—এ সম্বন্ধে প্রশ্ন করিলে সমস্ত মেজটা হঠাৎ আমার দিকে ছুটিয়া আসিতে থাকে, তখন আমার জেঠা মহাশয় (রাঙ্গামাটর বর্তমান সিভিল সার্জন ) বলেন যে, "এরূপ প্রশ্ন করা সঙ্গত নহে, জীবিতাবস্থায় যাহা লোকে জানিতে পারে না, মৃত্যুর পরেও সে তদ্বিযয়ে অভিজ্ঞতালাভে সক্ষম নহে।” আমি ঐ প্রেতাত্মাটর সম্পূর্ণ অপরিচিত, সুতরাং প্রেতাত্মার প্রতি অবিশ্বাস হেতু তাহার পরীক্ষার্থ— অকস্মাং এরূপ প্রশ্ন করাতে সে হয়ত কিঞ্চিৎ ক্রুদ্ধ হইয়াছিল। যাহা হউক, চক্রস্থিত একজন ভদ্রলোক “জীবেন্দ্র বাবু তাহার প্রশ্ন প্রত্যাখ্যান করিলেন” এরূপ বলতে মেজ শান্ত ভাব ধারণ করিল : তারপর স্থানীয় একজন ভদ্রলোক সেই প্রেতাত্মাকে জিজ্ঞাসা করিলেন যে, সেখানকার পুলিস আফিসের হেড ক্লার্ক মহাশয়ের উপরে তাহার কোন বিদ্বেষ ভাব আছে কি না ? সে সঙ্কেতে উত্তর দেয়, “আছে।” স্থূলকায় হেড ক্লার্ক মহাশয় আমার পাশ্বে ই বসিয়া ছিলেন। তাহার প্রফুল্প বদন শুদ্ধ হইয়া গেল এবং তিনি ভয়ে একেবারে আড়ষ্ট হইয়া গেলেন । তথন আমার জেঠামহাশয়ের আদেশে প্রেতাত্মাকে প্রশ্ন করা হয় যে, সে তাহার কোন অনিষ্ট করিতে পারে কি না ? উত্তর পাওয়া গেল, “না।” তখন হেড ক্লার্ক মহাশয় অকস্মাৎ এক লক্ষ্ম প্রদান করিয়া বলিলেন “তবে রে বেটা শালা ভূত, তোকে কে ডরায় ?” হেড ক্লার্ক মহাশয় সিভিল সার্জন মহোদয়ের নিকট নিতান্ত নম্র ভাবে অবস্থান করিতেন ; অকস্মাৎ তাহার এই প্রকার ভাবোচ্ছ,সি দেখিয়া আমরা সকলেই যৎপরোনাস্তি বিস্মিত হইলাম। . ইহার কিছুদিন পরে আমি চট্টগ্রাম ফিরিয়া আসি। আমাদের নিকটে অশরীরীর আবির্ভাবের গল্প শুনিয়া অনেকে প্রেতাত্মাকে আকর্ষণ করিতে উৎসুক হন। কোন গ্রামস্থিতা আমার জনৈক আত্মীয়াও অশরীরী আত্মাকে আকধর্ণ করিয়া নিত্য নানা প্রকার প্রশ্ন করিয়া আনন্দামুভব অশরীরীর আবির্ভাব । 88인 করিতে থাকেন। গত অগ্রহায়ণ মাসে তিনি আমাদের বাড়ীতে আইসেন। সেই সময়ে আমরা তাহাকে লইয়৷ অশরীরী আত্মাকে আকর্ষণ করি। প্রথমতঃ স্থানীয় পরলোকগত প্রসিদ্ধ উকীল কমলাকাস্ত সেন মহাশয়কে আহবান করা হয়। সেই দিনই রাত্রে পরীক্ষার্থ আমার খুল্লতাত এবং পিতৃদেৰ মহাশয়.উক্ত আত্মীয়াকে লইয়া মেজ ধারণ করেন, আমার মাতামহ মহোশয়ও সেইথানে উপস্থিত ছিলেন। ২১ মিনিটের মধ্যেই প্রেতাত্মার আবির্ভাব হইলে পর তিনি জিজ্ঞাসা করিলেন “যদি বাস্তবিকই ভূত হও, তাহা হইলে মেজধানি শূন্তে উত্তোলন করিতে পরিবে কি না।” উত্তর হইল “পারিব না।" আমি তখন জিজ্ঞাসা করিলাম কয়জন প্রেতাত্মা হইলে মেজ থানি তুলিতে পারিবে” উত্তর হইল *১৪ জন” । অচিরকালমধ্যেই আমার অনুরোধে ১৪ জন প্রেতাত্মার আবির্ভাব হইল। তখন আমাদ্বিগের সুবিস্তৃত বৈঠক থানা গৃহের চারিদিকে সেই ক্ষুদ্র মেজ খানি ছুটিতে আরম্ভ করিল, সঙ্গে সঙ্গে আমার উক্ত আত্মীয়াও ছুটিতে লাগিলেন। কিছুক্ষণ চেষ্টার পর মেজখানি গৃহের মেঝের উপরে উল্টাইয়া পড়িয়া গেল। এইখানে একটা কথা বলিতে ভূলিয়াছি। প্রেতাত্মাদের নাম জিজ্ঞাসা করিলে আমাদিগের বহুকাল পূৰ্ব্বে মৃত আত্মীয়গণের নাম সঙ্কেতে জানিতে পার গিয়াছিল। বলা বাহুল্য, আমরা ইংরেজী বর্ণমালানুসারে এই নাম সংগ্ৰহ করিয়াছিলাম (মনিলাল বাবুর লিখিত উপায় । হইতে এই উপায়ই সহজ )। প্রেতাত্মার এত গোলযোগসত্বেও আমার মাতামহ প্রেতাত্মার উপস্থিতিতে সন্দেহ প্রকাশ করায় পুনৰ্ব্বার তখনই মেজ ধরা হয়। সেইবার আমার আত্মীয়া মহোদয় একলাই একটা অঙ্গুলি দ্বারা মেজ ধারণ করেন। কয়েক মুহূর্ত পরেই ’ “আমি আর হাত বাথিতে পারি না” বলিয়া হাতখানি তুলিয়া লইলেন, কিন্তু আমি বিশেষ ভাবে লক্ষ্য করিলাম, আমার আত্মীয়ার মস্তকট যেন একটা তীব্র আঘাত-লাগিয়া বাম দিকে ঈষৎ হেলিয়া পড়িল এবং তাহার দক্ষিণ হাতথানি তাঁরবেগে তিৰ্য্যকগতিতে মেল্প হইতে টানিয়া লইলেন, যেন অকস্মাৎ বিদ্যুৎ থেলিয়া গেল। তার পর . তিনি হঠাৎ চীৎকার করিয়া পড়িয়া গেলেন, এবং কয়েক