পাতা:প্রবাসী (অষ্টম ভাগ).pdf/২৮০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

- 8৯৬ - --WikitanvirBot (আলাপ) ১৪:২৫, ২৪ মার্চ ২০১৬ (ইউটিসি) কথন লইয়াই ভগবদগীত রচিত হইয়াছে। ইহা ১৮ অধ্যায়ে বিভক্ত। আমরা Burnoofএর অম্বুবাদ হইতে কতকগুলি বচন উদ্ধৃত করিব। ভগবান শ্ৰীকৃষ্ণের মুখ দিয়া ভগবদগীতা, সাংখ্যের মতানুযায়ী জ্ঞানের ব্যাখ্যা করিয়াছেন -“যাহা নাই তাছার হওয়া’ হইতে পারে না, এবং যাহা আছে তাহার ‘না হওয়া হইতে পারে না, তত্ত্বদর্শীরা এই উভয়ের অন্ত দেখিয়াছেন।”—“যিনি এই সকল ব্যাপিয়া আছেন, তাহাকে অবিনাশী বলিয়া জানিবে। কেহই সেই অব্যয়ের বিনাশ করিতে পারে না।”—"নিত্য অবিনাশ ও অপরিচ্ছন্ন আত্মার এই দেহ সকল নশ্বর বলিয়া কথিত কয়।”—“ইনি কখনও জন্মেন না বা মরেন না ; অথবা উৎপন্ন হইয়া পুনরায় উৎপন্ন হয়েন না ; ইনি জন্মরহিত নিত্য, শাশ্বত, পুরাণ ; শরীর হত হইলেও ইনি হত হয়েন না।". —“জাত মাত্রের মরণ নিশ্চিত এবং মৃতের ও জন্ম নিশ্চিত।" ইহার পর ভগবান যোগবাদের কথা বলিতেছেন। যে কৰ্ম্ম একটা শৃঙ্খলের স্থায়, সেই কৰ্ম্মপরম্পরার ফলাকাঙ্ক্ষা-পরিত্যাগ করা এবং ধ্যানের দ্বারা যোগে নিমগ্ন হওয়াই এই যোগবাদের চরম লক্ষ্য।–“নিষ্কাম ধৰ্ম্মেই তোমার অধিকার হউক ; কৰ্ম্মফলে কদাচ যেন না হয় ; তুমি কৰ্ম্মফলার্থ হইও না ; সকাম কৰ্ম্মে যেন তোমার প্রবৃত্তি না হয়। ইন্দ্রিয়-সঙ্গ ত্যাগ করিয়া সিদ্ধি ও অসিদ্ধিতে সমভাবাপন্ন হইয়া, যোগে অবস্থিত হইয়া কৰ্ম্ম কর ; সমস্তই যোগ বলিয়া উক্ত হয়। জ্ঞানযোগ অপেক্ষা কাম্যকৰ্ম্ম অত্যন্ত অপকৃষ্ট ; অতএব তুমি সেই জ্ঞানকে আশ্রয় কর ; ফলকামী মানবেরা কৃপাপাত্র। বুদ্ধিযোগে নিরত মনীষীরা কৰ্ম্মজ ফল ত্যাগ করিয়া জন্মবন্ধন হইতে মুক্ত হইয়া মোক্ষপদ প্রাপ্ত হন। যখন তোমার বুদ্ধি মোহরূপ গহন দুর্গ পরিত্যাগ করিবে, তখন তুমি শ্রোতব্য ও শ্রাতার্থের বৈরাগ্য প্রাপ্ত হইবে। যখন শ্রুতিতে স্বপ্রতিপন্ন তোমার বুদ্ধি অবিচলিত হইয়া ঈশ্বরেতে নিশ্চল হইবে, তখন তুমি যোগ প্রাপ্ত হইবে।” • ধৰ্ম্মের জন্তই ধৰ্ম্ম সাধন করিবে, পুরস্কারের লোভে করিবে না, এই কথাটি সুস্পষ্টরূপে স্থাপন করিবার নিমিত্ত, নিম্নলিখিত উপদেশ প্রদত্ত হইয়াছে —“যোগ-বিরহিত ব্যক্তির প্রবাসী।


১৪:২৫, ২৪ মার্চ ২০১৬ (ইউটিসি)১৪:২৫, ২৪ মার্চ ২০১৬ (ইউটিসি)~

বুদ্ধি নাই ; যোগ-বিরহিত ব্যক্তির ধ্যানও হয় না ; আত্মধান বিহীন ব্যক্তির শাস্তি নাই, শান্তিহীনের সুখ কোথায় ? যেহেতু বায়ু যেমন নৌকাকে জলে বিক্ষিপ্ত করে, সেইরূপ মন, বিষয়ে ভ্রমণশীল অবশকৃত ইন্দ্রি যুগণের মধ্যে যে ইন্দ্রিন্থের। অনুগমন করে, সেই ইন্দ্রিমুই পুরুষের প্রজ্ঞাকে হরণ করে।”-- জ্ঞানবানও স্বীয় প্রকৃতির অনুসরণ করে ; প্রাণিগণও প্রকৃতির অনুসরণ করে ; অতএব ইন্দ্ৰিয়নিগ্ৰহ আর কি করিবে ! প্রত্যেক ইন্দ্রিয়েরই স্ব স্ব বিষয়ে অনুরাগ ও দ্বেষ অবশ্যম্ভাবী। অতএব এই উভয়ের বশীভূত হইবে না। কেন না, তাহার মুমুক্ষর প্রতিপক্ষ।” কিন্তু কে মানুষকে পাপপথে বলপূৰ্ব্বক লইয়া যায় ? কৃষ্ণ উত্তর করিলেন —“ইহা রজোগুণজাত ছপূরণীয় ও অতুাগ্র কাম ও ক্রোধ ; মোক্ষমার্গে এই কামকে বৈরী বলিয়া জানিবে। যেমন অগ্নি ধূম দ্বার, দর্পণ মলদ্বারা, গর্ভ জরায়ু দ্বারা আবৃত হয়, সেইরূপ জ্ঞানীর চিরশত্রু এই কামরূপ অপূরণীয় অগ্নি দ্বারা জ্ঞান আচ্ছন্ন থাকে। ইন্দ্ৰিয়সকল, মন ও বুদ্ধি এই কামের অধিষ্ঠান বলিয়া কথিত হয়। এই কাম ইন্দ্রিয়াদির দ্বারা জ্ঞানকে আবৃত করিয়া দেহীকে বিমোহিত করে। অতএব তুমি প্রথমে ইন্দ্রিয়গণকে সংযত করিয়া জ্ঞান ও বিজ্ঞান এই উভয়ের বিনাশক পাপরুপ এই কামকে জয় কর। ইন্দ্রিয়গণকে দেহ অপেক্ষ শ্রেষ্ঠ বলা যায় ; ইক্রিয়গণ অপেক্ষা মন শ্রেষ্ঠ ; মন অপেক্ষ বুদ্ধি শ্রেষ্ঠ ; বুদ্ধি অপেক্ষা যিনি শ্রেষ্ঠ তিনি সেই আত্মা। অতএব এইরূপে বুদ্ধি অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ আত্মাকে জানিয়া, আত্মার দ্বারা আত্মাকে নিশ্চল করিয়া এই দুনিবার শক্রকে জয় কর " জ্ঞানযোগে কৃষ্ণ,-ঈশ্বরের সহিত নিত্য যোগ নিবন্ধ করিবার উপদেশ দিয়াছেন, তাহার শরীরধারণের উদেশু কি তাহারও ব্যাখ্যা করিয়াছেন, এবং আপনার স্বরূপ-লক্ষণ নির্দেশ করিা: ছেন -“জন্মরহিত অবিনশ্বর ও প্রাণিগণের ঈশ্বর হইয়াওঁ আমি স্বীয় প্রকৃতিতে অধিষ্ঠান করিয়া আত্মমায়া বশত: প্রকাশিত হই। যখনই ধৰ্ম্মের হানি এবং অধৰ্ম্মের আধিকা হয় তখনই আমি আবিভূত হই। সাধুদিগের পরিত্রাণের জন্য, দুষ্কৰ্ম্মকারীদিগের বিনাশের জন্য, ধৰ্ম্ম স্থাপনের নিমিত্তে আমি যুগে যুগে আবির্ভূত হই। যিনি আমার এই দিব্য জন্ম ও কৰ্ম্ম যথার্থরূপে জানেন তিনি দেহত্যাগ করিয়া [ ৮ম ভাগ । --ഫ് ৯ম সংখ্যা । ] | পুনর্জন্ম প্রাপ্ত হন না ; কিন্তু আমাকেই প্রাপ্ত হন। অমুরাগ ভয় ও ক্রোধশ্বন্ত এবং মদেকচিত্ত হইয়া আমাকে আশ্রয় করিয়া, জ্ঞান তপস্তার দ্বারা পূত হইয়া অনেকে আমার ভাব প্রাপ্ত হইয়াছেন। যাহারা আমাকে যে ভাবে ভজনা করে তাহাদিগকে আমি সেই ভাবেই ভজন করি। মনুষ্যগণ সৰ্ব্বপ্রকারে আমারই পথ অনুবর্তন করে।" ইহাই ত্যাগ ও কৰ্ম্মের মতবাদ । এই মতবাদ ভারতবর্ষে একটা গুরুতর কার্য্য সাধন করিয়াছে; ইহা নিষ্ফল বাস্থ অনুষ্ঠানের প্রবণতা হইতে ভারতের চিন্তা ও ভাবকে উদ্ধে উত্তোলন করিয়াছে। খৃষ্টধর্মের যোগবাদের সহিত ইহার কতকটা মিল দেখিতে পাওয়া যায়। --“যিনি কৰ্ম্মে অকৰ্ম্ম ও অকৰ্ম্মে কৰ্ম্ম দেখেন, জনগণের মধ্যে তিনিই বুদ্ধিমান এবং সৰ্ব্বকৰ্ম্মকারী হইলেও তিনিই যোগযুক্ত। নিষ্কাম, সৰ্ব্ববন্ধনমুক্ত, জ্ঞানঅবস্থিত চিত্ত এবং প্রাণ-যজ্ঞানুষ্ঠানকারী ব্যক্তির সমুদয় কৰ্ম্ম বিলয় প্রাপ্ত হয়। র্তাহার অর্পণ ব্রহ্ম, স্কৃত ব্ৰহ্ম, ব্ৰহ্মরূপ অগ্নিতে ব্ৰহ্মকর্তৃক হোমও ব্রহ্ম, তিনি সেই ব্ৰহ্মকৰ্ম্মসমাধি দ্বারা ব্ৰহ্মকেই পাইয়া থাকেন। দ্রব্যময় যজ্ঞ হইতে জ্ঞানযজ্ঞ শ্ৰেষ্ঠ ; যেহেতু জ্ঞানেতেই সমুদায় কৰ্ম্মের পরিসমাপ্তি হয় ; —যে জ্ঞান অবগত হইলে পুনৰ্ব্বার এইরূপ মোহ প্রাপ্ত হইবে না এবং যদ্বারা আত্মাতে ও অনস্তর আমাতে ভূতগণকে অশেষরূপে দর্শন করিবে। যদি সমুদায় পাপী হইতেও তুমি অধিক পাপী হও, তথাপি সমুদায় পাপসমুদ্র জ্ঞানপোত দ্বারাই সম্যকরূপে উত্তীর্ণ হইবে। যেমন প্রদীপ্ত অগ্নি কাষ্ঠসকলকে ভস্মসাৎ করে, সেইরূপ- জ্ঞানরূপ অগ্নি সমুদায় কৰ্ম্মকে ভস্মসাৎ করে। ইহলোকে জ্ঞানের তুল্য পবিত্র কিছুই নাই। যোগসিদ্ধ ব্যক্তি সেই আত্মজ্ঞান আত্মাতে স্বয়ংই লাভ করে । শ্রদ্ধাবান, তৎপরায়ণ ও জিতেন্ত্রির ব্যক্তি জ্ঞানলাভ করেন ; জ্ঞানলাভ করিয়া অচিরাং মোক্ষ প্রাপ্ত হন। অতএব অজ্ঞানোৎপন্ন হৃদয়স্থ এই সংশয়কে জ্ঞানরূপ খড়গ দ্বারা ছেদন করিয়া ৰোগকে অবলম্বন কর। হে ভারত উঠ !” উক্ত বচনগুলির দ্বারা জানা যায় যে, যোগীরা জ্ঞানকেই তাহাদের প্রযত্নের পরম লক্ষ্য, এবং মোক্ষপ্রাপ্তির শ্রেষ্ঠ উপায় বলিয়া বিবেচনা করিত। ইহা সাংখ্যদর্শনের প্রতিকূল কৃষ্ণধৰ্ম্ম ।

    • ------------১৪:২৫, ২৪ মার্চ ২০১৬ (ইউটিসি)~...১৪:২৫, ২৪ মার্চ ২০১৬ (ইউটিসি)----------

৪৯৭ সমালোচকদিগের প্রতিবাদের একপ্রকার উত্তর বলিলেও হয়, যেহেতু, যোগীরা জ্ঞানবাদকে আদৌ পরিবর্জন করে নাই। বস্তুত কৃষ্ণ এই কথা বলেন ! “অজ্ঞেরাই জ্ঞানযোগ ও কৰ্ম্মযোগকে পৃথক্ বলিয়া থাকে, কিন্তু পণ্ডিতের তাহা বলেন না। একমাত্র সাধন সমাক্রূপে অবলম্বন করিলে দুয়েরই ফলপ্রাপ্ত হওয়া যায়। জ্ঞাননিষ্ঠগণ যে স্থান লাভ করেন, কৰ্ম্মযোগীরাও তাহাই প্রাপ্ত হন। যিনি সাংখ্য ও যোগকে এক দেখেন তিনিই সম্যক দর্শন করেন।” কিন্তু যোগমার্গে উপনীত হইতে হইলে, অগ্ৰে সন্ন্যাস অবলম্বন করা আবশুক । “যেহেতু, ফলকামনা ত্যাগ করেন नाहे यक्र° ८कट्ठे ८षाठी नररुन ! श्राग्ना श्राद्धा श्राद्मt८क অধঃপতিত করিবে না। যেহেতু আত্মাই আত্মার বন্ধু এবং আত্মাই আত্মার শত্রু। যিনি আত্মাকে বশীভূত করিয়াছেন, তিনিই আত্মার বন্ধু, অবশীভূত আত্মা শক্রবৎ আচরণ করিয়া থাকে।” তাহার পর, যোগীর লক্ষণ এইরূপ বর্ণিত হইয়াছেঃ– “যাহার আত্মা জ্ঞান ও বিজ্ঞানে পরিতৃপ্ত, যিনি কুটস্থ, জিতেন্দ্রিয়, লোষ্ট্র , পাষাণ কাঞ্চনে যাহার সমষ্টি, তিনিই যোগযুক্ত যোগী। যিনি আমাকে সৰ্ব্বভূতে দেখেন, এবং সৰ্ব্বভূত আমাতে দেখেন, আমি তাহার অদৃশু হই না, তিনিও আমার অদৃত হন না। যিনি সৰ্ব্বভূতে অবস্থিত আমাকে, একত্বকে আশ্রয় করিয়া ভজনা করেন, বিষয় সকলে পাকিয়াও সেই যোগী অামাতেই অবস্থান করেন। যিনি আত্মতুলনায় সৰ্ব্বত্র সমান দেখেন,—মুখ দুঃখ সমান দেখেন, সেই যোগীই শ্রেষ্ঠ। - জ্ঞানযোগের অধ্যায়ে, কৃষ্ণ আপনার স্বরূপের ব্যাখ্যা করিয়াছেন –ক্ষিতি, অপ, তেজ, বোম, মন, বুদ্ধি ও অহঙ্কার এই আটরূপে তাছার অপরা প্রকৃতি বিভক্ত। যে প্রকৃতি এই জগৎকে রক্ষা করিতেছে সেই জীবস্তৃত৷ প্রকৃতিই তাহার পরাপ্রকৃতি। “আমা হইতে শ্রেষ্ঠ আর কিছুই নাই ; স্বত্রে মনিগণের স্থায় আমাস্তে এই সমস্ত জগৎ গাথা আছে। আমি যে অদৃশু-অজ্ঞজনেরা আমাকে দর্শনের গ্রাহ বলিয়া মনে করে ; তাহারা আমার নিৰ্ব্বিকার ' পরাপ্রকৃতিকে জানে না।” সংক্ষেপে বলিতে গেলে,—