পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অগ্রন্থায়ণ এই মাথায় গোলমালের উপর এই খবরটা কানে গেলে কি ষে হবে, সেই আমার সকলের চেয়ে বড় ভাবনা । এই দাঙ্গার আগের দিন, মজুমদার-ঠাকুরপো ঐ শ্ৰীবাস পালকে সঙ্গে ক’রে একেবারে বাড়ীর মধ্যে চ’লে এলেন। আমি কি করব ভেবে না পেয়ে ছুটে গেলাম ও র কাছে । কথাটা ব'লেও ফেলেছিলাম । সেই শুনে কেমন যেন হয়ে গেলেন, বললেন—অামায় একটু জঙ্গ দিতে পার স্বনীতি ? আমি বুঝলাম— বুঝে মাথা ধুয়ে দিলাম, বাতাস করলাম-কিন্তু তবু সমস্ত রাত্রি ঘুমোলেন না । তাই ভাবছি, এই কথা কানে গেলে উনি কি তা সহ করতে পারবেন ? হেমাঙ্গিনী চুপ করিয়া রছিলেন, তিনি উপায় অস্থসন্ধান করিতেছিলেন । কিছুক্ষণ পর বলিলেন—তুমি বলে রাখ এখন থেকে—তুমি ব্রত করেছ, তোমায় গঙ্গাস্বানে যেতে হবে । ঠাকুরজামাইয়ের সেবাযত্নের ভার আমার উপর নিশ্চিন্ত হয়ে দিতে পারবে তো স্বনীতি ? মুনীতি বিস্ময়ে আনন্দে হতবাক হইয়৷ হেমাঙ্গিনীর মুখের দিকে চাঙ্গিয়া রহিলেন, আবার অজস্র ধারায় তাহার চোখ বাহিয়া জল ঝরিতে আরম্ভ করিল। হেমাঙ্গিনী বলিলেন—অহীনকে আসতে চিঠি লেখ । সে রাত্রে ওঁর কাছে থাকবে ; আমি তাহলে এ-বাড়ী ও বাড়ী দু-বাড়ীই দেখতে পারব। আর তোমার সঙ্গে আমার অমলকে পাঠিয়ে দেব। কেমন ? সুনীতির চোখে আর অশ্রুধারা প্রবাহের বিরাম ছিল না । হেমাঙ্গিনী আবার তাঙ্গার চোখমুখ সযত্নে মুছাইয়া দিয়া বলিলেন—কেঁদ না মুনীতি। আমিও যে আর চোখের জল ধ’রে রাখতে পারছি নে । আরও কিছুক্ষণ চুপ করিয়া থাকিয় হেমাঙ্গিনী ডাকিলেন—উমা ! উমা ! উমার সাড়া কিন্তু কোথাও মিলিল না । হেমাজিনী বিরক্ত হইয়া বলিলেন—বংশের স্ব ভাব কোথাও যায় না। মুখপুড়ী কলকাতা থেকে এসে এমন বেড়াতে ধরেছে। বলে, দেখব না, কলকাতায় এমন মাঠ আছে ? আকাশে মেঘ উঠেছে, এখুনি বৃষ্টি নামবে—মেয়ের সে খেয়াল নেই । স্বনীতি ডাকিলেন—মানদা ! গেল রে ? দেখ, তো । মানদারও সাড়া পাওয়া গেল না, স্বনীতি ঘর হইতে বারানদায় বাহির হইয়া অগসিয়া দেখিলেন— দিবানিদ্রায় পরম আরামে মানদার নাক ডাকিতেছে । অকস্মাৎ তাহার মনে হইল উপরে কোথায় যেন কলকণ্ঠে কেহ গান বা আবৃত্তি করিতেছে। হেমাঙ্গিনীও উমা-মা কোথায় ধগলিজী נרל বাহির হইয়া আসিলেন, তাহারও কানে স্মরটা প্রবেশ করিল, তিনি বলিলেন—ওই তো । সুনীতি বলিলেন—ওঁর ঘরে । সন্তপণেই উভয়ে রামেশ্বরের ঘরে প্রবেশ করিলেন ; দেখিলেন উমা গভীর একাগ্রতার সহিত ছন্দলীলায়িত ভঙ্গিতে হাত নাড়িয়া স্বমধুর কণ্ঠে কবিতা আবৃত্তি করিতেছে— নয়নে আমার সজল মেঘের নীল অঞ্জল লেগেছে লয়নে লেগেছে । নবতৃণদলে ঘন বনছায়ে হরফ আমার দিয়েছি বিছায়ে পুলকিত নীপ-নিকুঞ্জে আজি বিকশিত প্রাণ জেগেছে । নয়নে স্নিগ্ধ সজল মেঘের নীল অঞ্জন লেগেছে । সম্মুথে রামেশ্বর বিস্ফারিত বিমুগ্ধ দৃষ্টিতে আবৃত্তিরতা স্বচ্ছন্দ-ভঙ্গি উমার দিকে চাহিয়া আছেন। হেমাঙ্গিনী ও সুনীতি ঘরে প্রবেশ করিলেন ; তিনি তাহা জানিতেও পারিলেন না। বালিকার কলকণ্ঠের ঝঙ্কারে, নিপুণ আবুত্তিতে শকার্থে স্বপুস্থজনে, কবিতার ছন্দের অস্তনিহিত সঙ্গীত-মাধুর্য্যে একটি অপূৰ্ব্ব আনন্দময় আবেশে ঘরখানি যেন পরিপূর্ণ হইয়া গিয়াছে। তাহারাও নিঃশব্দে দাড়াইয়া রহিলেন। শ্লোকে শ্লোকে আবুত্তি করিয়া উমা শেষ শ্লোক আবৃত্তি করিল— হৃদয় আমার নাচে রে আঞ্জিকে ময়ুরের মত নাচে রে হৃদয় নাচে রে । ঝরে ঘন ধারা লব পঞ্জবে কঁাপিছে কানন ঝিল্লীর রকে জীর ছাপি নদী কল কল্পোলে এল পল্লীর কাছে রে । হৃদয় আমার নাচে রে আজিকে ময়ূরের মত নাচে রে ইদয় নাচে রে ; আবৃত্তি শেষ হইয়া গেল। ঘরের মধ্যে সেই আনন্দময় আবেশ তখনও যেন নীরবতার মধ্যে ছন্দে ছনে অমুভূত হইতেছিল। রামেশ্বর আপন মনেই বলিলেননাচে—নাচে–হৃদয় সত্যিই ময়ুরের মত নাচে। হেমাঙ্গিনী এবার প্রীতিপূর্ণ কণ্ঠে বলিলেন—ভাৰ আছেন চক্রবন্ত্ৰী-মশাই ? —কে ? স্বপ্নোখিতের মত রামেশ্বর বলিলেন—কে