পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

>१९ তার পর ভাল করিয়া দেখিয়া বলিলেন–রায়-গিল্পী ! আম্বন, আসুন, কি ভাগ্য আমার ! হেমাঙ্গিনী বলিলেন—ও রকম ক’রে বললে বে লজা পাই চক্ৰবৰ্ত্তী-মশাই ! আমি আপনাকে দেখতে এসেছি। তার পর কন্যাকে বলিলেন—তুমি প্রণাম করেছ উমা ? নিশ্চয় কর নি। তোমার পিসেমশায় । সবিস্ময়ে রামেশ্বর প্রশ্ন করিলেন--আপনার মেয়ে ? -ξη —সাক্ষাৎ সরস্বতী । আহা ময়ুরের মত নাচে রে’ হয় নাচে রে কি মধুর! উমা এই ফাকে টুপ করিয়া রামেশ্বরের পায়ে হাত দিয়া প্রণাম করিয়া লইল । পায়ে স্পর্শ অনুভব করিয়া দৃষ্টি ফিরাইয়া উমাকে প্রণাম করিতে দেখিয়া রামেশ্বর চমকিয়া উঠিলেন, আৰ্ত্তস্বরে বলিলেন—ন না, জামাকে প্রণাম করতে নেই ! আমার হাতে— হেমাঙ্গিনী বাধা দিয়া সকরুণ মিনতিতে বলিয়া উঠিলেন–চক্ৰবৰ্ত্তী-মশাই, না, না ! রামেশ্বর স্তন্ধ হইয়া গেলেন। কিছুক্ষণ পর মান হাসি হাসিয়া বলিলেন—জানলার ফাক দিয়ে দেখলাম, আকাশে মেঘ করেছে, দিক হস্তীর মত কালো বিক্রমশালী জলভরা মেঘ । মহাকবি কালিদাসকে মনে পড়ে গেল । আপনার মনেই শ্লোক আবৃত্তি করছিলাম মেঘদূতের। এমন সময় আপনার মেয়ে এসে ঘরে ঢুকল আমার মনে হ’ল কি জানেন, মনে হ’ল চক্রবত্তী-বাড়ীর লক্ষ্মী বুঝি চিরদিনের মত পরিত্যাগ ক’রে যাবার আগে আমাকে এক বার দেখা দিতে এসেছেন। আমি আবৃত্তি বন্ধ করলাম। আপনার মেয়ে—কি নাম বললেন— হেমাঙ্গিনী উত্তর দিবার পূৰ্ব্বেষ্ট উমাই উত্তর দিল— উমা দেবী । —উমা দেবী ! হ্যা তুমি উমাও বটে—দেবীও বটে। উমা আমায় বললে—কিসের মন্ত্র বলছিলেন আপনি ? আর এক বার বলুন না। আমি বললাম মন্ত্র নয় শ্লোক, সংস্কৃত কবিতা। কবি কালিদাস মেঘদূতে বর্ষার বর্ণন করেছেন তাই আবৃত্তি করছিলাম। আমায় বললে উমা— আপনি বাংলা কবিতা জানেন না ? কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, তিনি কি পুরস্কার পেয়েছেন। তার খুব ভাল কবিতা আছে । আমি বললাম, তুমি জান ? ও আমায় কবিতা শোনালে। বড় সুন্দর কবিতা, বড় সুন্দর ! ংলায় এমন কাব্য রচিত হয়েছে ...ভাগ্য, আমার ভাগ্য! পৃথিবীতে বঞ্চনাই আমার ভাগ্য । বাঃ, ‘নীল জঞ্জন লেগেছে, নয়নে লেগেছে’ ! সকলেই স্তন্ধ হইয়া রহিল। উমা কিন্তু চঞ্চল হইয়া প্রবাসী ృeశిvు উঠিতেছিল, কয়েক মুহূৰ্ত্ত কোনরূপে আত্মসম্বরণ করিয়া সে বলিল—আপনি কিন্তু সংস্কৃত শ্লোক আমায় শোনাবেন বলেছেন । রামেশ্বর হাসিয়া বলিলেন—তোমার মত সুন্দর ক’রে কি বলতে আমি পারব মা ? উমা হাসিয়া বলিল—ওট। আমি আবৃত্তি-প্রতিযোগিতার জন্যে শিখেছিলাম কি না । কিন্তু আপনিও তো খুব ভাল বলছিলেন, বলুন আপনি ! রামেশ্বর কয়েক মুহূৰ্ত্ত চিন্তা করিয়া লইয়া বলিলেন— বলি শোন – তাং পাৰ্ব্বভীতাভিঙ্গনেন নামা, বন্ধপ্রিয়াং বন্ধুজনে জুস্তাব । উমেতি মাত্র। তপসে নিষিদ্ধ। পশ্চাত্নমাখ।াং সুমুখী জগাম । মঙ্গীভূত: পুত্ৰবতোহপি দৃষ্টিস্তম্মিন্নপত্যে ন জগাম তৃপ্তিম । অনন্ত পুষ্পস্য মধেীষ্টি চুতে, দ্বিরেফমালা সবিশেষসঙ্গ । এর মানে জান মা ? পৰ্ব্বতরাজ হিমালয়ের এক কন্যা হ’ল, গোত্র ও উপাধি অনুসারে আত্মীয়বর্গ বন্ধুজনপ্রিয় সেই কন্যার নাম রেখেছিল পাৰ্ব্বতী। পরে হিমাদ্রিগৃহিণী সেই কন্যাকে তপস্যপরায়ণা দেখে বললেন—উ মা ! অর্থাৎ বংসে, ক’রো না, তপস্যা ক’রে না । সেই থেকে স্বমুখী কন্যার নাম হ’ল উম। তারপর কবি বলছেন, পৰ্ব্বতরাজের পুত্রকন্যা আরও অনেকই ছিল, কিন্তু বসন্তকালে অসংখ্যবিধ পুষ্পের মধ্যে ভ্রমর যেমন সহকার-পুষ্পেষ্ট অহরক্ত হয় তেমনি পৰ্ব্বতরাজের চোখ দুটি উমার মুখের পরেই আকৃষ্ট হ’ত বেশী—সেইখানেই ছিল যেন পূর্ণ পরিতৃপ্তি। তুমি আমাদের সেই উম! আমি বেশ দেখতে পাচ্ছি তুমি প্রচুর বিদ্যাবতী হবে। আজ যা তুমি আমায় শোনালে—আহা! সেই উমারই মত বিদ্যা তোমার আপনি আয়ত্ত হবে । তাং তৎসমালা: শরীব গঙ্গাং, মঙ্গেীযধিং নক্তfমবাত্মভাস: | স্থিরোপদেশামুপদেশকালে, প্রপেদিরে প্রাক্তনজন্মবিদ্যা । হেমাঙ্গিনী ও সুনীতির চোখ জলে ভরিয়া উঠিয়াছিল। এই এক মানুষ-আবার এই মানুষই ক্ষণপরে এমন অসহায় আত্মবিস্মৃত হইয়া পড়িবেন—নিজের প্রতি নিজেরই অহেতুক ঘৃণায় এমন একটা অবস্থার স্বষ্টি করিবেন যে অন্যের ইচ্ছা হইবে আত্মহত্যা করিতে ! উমা বলিল—আমায় সংস্কৃত কবিতা শেখাবেন আপনি ? এখানে ষে ক'দিন আছি আমি রোজ আপনার কাছে আসব ৷ —আসবে ? তুমি আসবে মা ? —হঁ্যা । কিন্তু এমন ক’রে ঘরের মধ্যে দরজা-জানালা বন্ধ ক’রে থাকেন কেন আপনি ? ওগুলো খুলে দিতে হবে কিন্তু ।