পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৯১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আধুনিক কালে ভারতবর্ষে বিশেষতঃ বাংলাদেশে শিম্পবিস্তার শ্রীপঞ্চানন নিয়োগ, এম, এ, পিএইচ. ডি. সে আজ প্রায় পয়ত্রিশ বৎসরের আগেকার কথা । সালে রাষ্ট্রগুরু সুরেন্দ্রনাথ বঙ্গভঙ্গ রহিত করিবার জন্য এক অভিনব অস্ত্র আবিষ্কার ও প্রয়োগ করিতে বঙ্গবাসীকে শিথাইলেন । এই দিব্যাস্ত্রের নাম সকলেই জানেন—বিদেশী পণ্য বর্জন। সুরেন্দ্রনাথের দক্ষ পরিচালনায় কয়েক বৎসরের মধ্যে বিযুক্ত বঙ্গ পুনরায় সংযুক্ত হইল এবং ১৯১২ সালে স্বয়ং ভারতসম্রাট ভগ্ন বঙ্গ সংযোগ দিল্লীর মহাদরবারে ঘোষণা করিয়া বঙ্গবাসীর হৃদয় জয় করিলেন । ইহার পরে বিদেশী পণ্য বজ্জন রাজনৈতিক যুদ্ধাস্ত্ররূপে পরিত্যক্ত হইয়াছিল বটে, কিন্তু সেই আন্দোলনের ফলে স্বদেশী পণ্য গ্রহণের মহাব্ৰত বাঙ্গালী তথা ভারতবাসী গ্রহণ করিলেন । সুরেন্দ্রনাথ যেদিন বিদেশী পণ্য বর্জন তাহার স্বভাবসিদ্ধ বজ্রনির্ঘোষে ঘোষণা করিলেন তাহার পর দিনই বঙ্গবাসী সবিস্ময়ে দেখিল ষে বঙ্গদেশ তথা ভারতবর্ষ ত কেবল কৃষিজাত দ্রব্যই উৎপাদন করে, তাহার শিল্পবাণিজ্য ত বহু দিন লোপ পাইয়াছে, তাহার পরিধেয় বসন সরবরাহ করে ম্যাঞ্চেষ্টার ও জাপানের কলসমূহ। তাহার জন্য চিনি আসে জাভা, স্বমাত্রা, মরিসাস প্রভৃতি দ্বীপপুঞ্জ হইতে । লবণ আসে লিভারপুল হইতে । বৎসরে প্রায় পচিশ-ত্রিশ কোটি টাকার লৌহের জিনিষ, মায় ছুরি, কাচি, স্বচ, আলপিন আসে জাৰ্ম্মানী, জাপান, ইংলণ্ড, আমেরিকা হইতে । দেশলাই আসে জাপান বা সুইডেন হইতে, এমন কি কাপড়-কাচা সাবানও ভারতে প্রস্তুত হয় না—গসেজের বার সোপ ব্যবহার করিয়া ভারতবাসী ময়লা পরিধেয় বসন পরিষ্কার করে। কাচ, পোস লেন ও এনামেলের জিনিষ আসে বেলজিয়ম জাৰ্ম্মানী হইতে। গৃহনিৰ্ম্মাণ 3 ఫిe 8-d কার্ষ্যে তখন ব্যবহৃত হইত জাপানী বা বিলাতী হোয়াইট ব্রাদাসের সিমেন্ট এবং ইংলিশ বা কটিনেন্টাল ষ্টিলের কড়ি, বরগা, রড প্রভৃতি। সৰ্ব্ববিধ ঔষধ জোগাইত প্রধানত: জাৰ্ম্মানী ও ইংলও ; অন্যান্য দেশ হইতেও অনেক ঔষধ আসিত । বঙ্গদেশ ম্যালেরিয়ার আবাসস্থল, কিন্তু কুইনাইন আসিত বিদেশ হইতে। গায়ে-মাথা সাবান জোগাইত পিয়াস কোম্পানী ও সুগন্ধি দ্রব্য আসিত ইংলণ্ড ও ফরাসী দেশ হইতে । লিখিবার বা ছাপিবার কাগজ বা কালিও বিদেশী । পায়ের জুতার চামড়াও বিদেশজাত। চাউল, ডাইল তরিতরকারি, মাছ ছাড়া প্রায় সব জিনিষই আসিত বিদেশ হইতে । স্বরেন্দ্রনাথের বিদেশী বর্জন আন্দোলন যখন প্রবর্তিত হয় তখন সবেমাত্র বোম্বাইয়ে কাপড়ের কল স্থাপিত হইয়াছে। সেই মোটা কাপড় লইয়া কলেজের ছাত্রের বাড়ী বাড়ী ফিরি করিয়া বেড়াইল । স্বদেশী ময়লা দোলে| চিনি ব্যবহার করাতে সন্দেশ রসগোল্লার তুষারধবল রূপ মলিন হইয়া গেল। বিদেশী লবণ র্যাহারা ছাড়িলেন তাহাদিগকে মাদ্রাজের কালো করকচ ব্যবহার করিতে হইল। অস্ববিধা পদে পদে হইতে লাগিল । কিন্তু বাঙালীর নজর এখন হইতে পড়িল তাহার শিল্প-দৈন্তের প্রতি এবং এখন হইতে বাঙালী এই দৈন্ত দূর করিবার জন্য বদ্ধপরিকর হইল । কাস্তকবি রজনীকান্ত দেশবাসীকে উৎসাহ দিবার জন্য গান রচনা করিলেন— - “মায়ের দেওয়া মোট কাপড় মাথায় তুলে নে রে ভাই, দীন দুখিনী মা ষে তোদের তার বেশী জার সাধা নাই ।”