পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাবুই পাখীর বুলানো বাসা লেখক কর্তৃক গৃহীত ফটে। ] গৰ্ত্ত থাকে। এই গৰ্ত্তের মধ্যেই বাবুই পার্থী সাধারণতঃ তিনটি ডিম পাড়িয়া রাখে। বাচ্চ ফুটিয়া উহার মধ্যেই ঠেসাঠেসি করিয়া অবস্থান করে। গর্তের বিপরীত পাশ্বে বারান্দার মত ছোট্ট একটু স্থান দেখিতে পাওয়া যায়। বাচ্চাগুলি গৰ্ত্ত হইতে উঠিয়া আসিয়া সে স্থানেই মল পরিত্যাগ করে । বাসাগুলি লম্বায় দেড়হাতেরও বেশী । এই ধরণের বাসাগুলি তাহারা বাচ্চাদের ব্যবহারের জন্যই নিৰ্ম্মাণ করিয়া থাকে। সময়ে সময়ে একটা বাসার নিম্নভাগ হইতে আর একটা বাস গাথিয়া দুই পরিবার থাকিবার ব্যবস্থা করে। সেই অবস্থায় এক-একটা বাসা প্রায় তিন হাত সাড়ে তিন হাত লম্বা হয়। বাবুই পার্থীর বিশ্রামগৃহ বাচ্চাদের বাস হইতে সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরণে নিৰ্ম্মিত হইয়া থাকে। কোন কোন বিশ্রামগৃত হয় রবারের বেলুনের মত ডিম্বাকুর্তি। ইহার মধ্যস্থলে বেশ বড় প্রবেশ-পথ রাখিয়া দেয়। নীচের দিক সম্পূর্ণ বন্ধ এবং অভ্যন্তরে উপরে নীচে ফাকা। এইরূপ বাসার মধ্যে তাহারা সময়ে সময়ে ডিম পাড়িয়াও থাকে। আর এক প্রকারের বিশ্রামগৃহের নমুনা অদ্ভুত। ইহা অনেকটা ঘণ্টার মত দেখিতে । প্রবাসী 蠍 `ඵ8'L ঘণ্টাটি মজবুত বোটার সঙ্গে ঝুলিয়া থাকে। অভ্যন্তরভাগ সম্পূর্ণ ফাঁকা। ঘন্টার নিম্নমুখে এপাশ হইতে ওপাশ পৰ্যন্ত একটা দাড় বুনিয়া দেয়। ইহার উপর বসিয়াই তাহারা বিশ্রামমুখ উপভোগ করে এবং রাত কাটাইয়। দেয়। এই ঘণ্টাকুতি বাসাও সকলগুলি এক রকমের নহে । এক-একটা এক এক প্রকার আকৃতি ধারণ করে । যে তাল গাছে বাবুই পার্থী বাসানিৰ্ম্মাণ করে তাহার আশেপাশে বহুদূর পর্য্যন্ত সুপারি বা ওই জাতীয় গাছের পাতা আর অবিকৃত দেখিতে পাওয়া যায় না । ইহার সকাল হইতে সন্ধ্যা পৰ্য্যন্ত সুপারি পাতার সূক্ষ্ম সুহ্ম ফালি ছিড়িয়া লইয়া আসে। ফিতার মত এই সূক্ষ্ম সুহ্ম ফালির সাহায্যে তালপাতার ডগার প্রায় হাতখানেক উপর হইতে বাসা বাধিতে সুরু করে। কিছুদূর অগ্রসর হইবার পর ক্রমশঃই বাসার পরিধি বিস্তৃত হইতে থাকে। তখন স্ত্রীপুরুষ উভয়ে মিলিয়া একযোগে বোন আরম্ভ করে। একটি পার্থী বাসার ভিতরে অপরটি বাহিরের দিকে থাকিয়া পত্রের তত্ত্বগুলি সেলাই করিয়া গাথিয়া দেয় । বাহিরের পার্থীটি ঠোটের সাহায্যে ফিতার এক প্রাস্ত ভিতরে গুজিয়া দেয় ; ভিতরের পার্থীটি আবার সেই প্রাস্ত টানিয়া লইয়া অন্ত ছিদ্রপথে বাহিরে ঠেলিয়া দেয়। এই ভাবে উভয়েত্ব অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে সাত-আট দিনের মধ্যেই পূর্ণাঙ্গ বাসা গড়িয়া উঠে। তৈয়ারী হইবার পর কিছুদিন পর্য্যন্ত বাসাটা সবুজ এবং ভারী থাকে, কিন্তু শুষ্ক হইতে হইতে ক্রমশ: রং বদলাইয়া যায় এবং ওজনেও খুল হাল্কা হইয়া পড়ে। ঝুলানো হাস্কা বাসায় ঝড়ের ভয় খুব বেশী। কারণ একটু বাতাসেই বাসা ভয়ানক দোল থাইতে থাকে। ঝড়ের বেগে বাসা ছিড়িয়া না গেলেও ওলটপালট হইলেই ডিম অথবা বাচ্চ পড়িয়া যাইবার যথেষ্ট সস্তাবনা থাকে। ংস্কার বশেই হউক অথবা অভিজ্ঞতার ফলেই হউক, মনে হয় যেন এই অসুবিধা দূর করিবার জন্যই তাহারা বাসার ভিতরে খানিকট কাদামাটি জুড়িয়া দেয়। এই মাটির ভারে বাসাটা অনেকট স্থির ভাবে থাকে, দোলন কম হয় । বাবুই পার্থী বংশামুক্রমে একই গাছে বাস বাধিয়া থাকে এবং সকাল হইতে সন্ধ্যা পয্যন্ত বাসস্থানের চতুদ্ধিক কলরবে মুখরিত করিয়া তুলে। রাতদিন চেচামেচিতে মনে হয় যেন সৰ্ব্বদা ইহাদের একটা উংসব লাগিয়াই আছে । আবার ঝগড়া-মারামারিতেও ইহার কম যায় না । সেই ভীষণ কলরবে মানুষের কান ঝালাপালা হইয়া উঠে।