পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বলিদ্বীপের নৃত্যকলা ঃ ‘কবিয়ার নৃত্য ঐশান্তিদেব ঘোষ { বালিতে গিয়ে অবাক হলাম সেখানকার সমাজে শিল্পের স্থান কতখানি সহজ হয়েছে তাই দেখে। দেখলাম, বালিব হিন্দুরা বালির গ্রামের বালক-শিল্পী মন্দিরের জন্য পাথরে মূৰ্ত্তি গড়ছে এখনও সচল ও প্রাণবান। তারাও ধৰ্ম্মভীরু জাত, কিন্তু ধৰ্ম্ম তাদেব মনের স্বাভাবিক শিল্পবোধকে নষ্ট করে নি। এখনও গ্রামে গ্রামে শিল্পীরা ছবি অ’াকছে—কাপড়ের উপরে, কাগজে বা দেয়ালে। আধুনিক তুলি বা রঙের খবর অনেকেই রাখে না, বাঁশের কঞ্চি নিয়ে কলমের মত একটা দিক কেটে নেয়, তাতে নানা প্রকার সুশ্ন লাইন টানার কাজ চলে, অপর দিকটা থে ২লে তুলির মত নরম করে নিয়ে ছবিতে রং বুলায়, রং প্রস্তুত করে নানা ঘর্ণের পাথর ঘষে। বহু গ্রাম্য শিল্পীর ছবি বত্তমান অনেক আধুনিক ছবির সমান সম্মান লাভের যোগ্য। প্রাচীন পদ্ধতিতে রামায়ণ-মহাভারতের গল্প অবলম্বনে ছবি অণকার যেমন চলন আছে তেমনি তাদের বর্তমান প্রতিদিনের জীবনের ছবিও তারা অাকছে নিজেদের চিত্রকলার ধারা ধাবা ও আদর্শটিকে বজায় রেখে। কাঠের ও পাথরের মূৰ্ত্তি গড়ায়ও এদের ক্ষমত অসামান্ত । এদেশের মন্দিরের প্রবেশ-দ্বার স্থাপত্যশিল্পের একটি বিশেষ গৌরবের জিনিয। বালির মন্দিরগুলি যদি কেউ পরীক্ষা করেন, লক্ষ্য করবেন প্রত্যেকটির সঙ্গে প্রত্যেকটির কতখানি তফাৎ । দক্ষিণ-ভারতের প্রায় সব বিখ্যাত মন্দিরগুলি দেখে আমার একটা ধারণ হয়েছে যে, সে-দেশের যে-কোন ছু-একটি বড় মন্দিব দেখলে আর অন্যান্য মন্দির ও তার কারুকার্য্য না দেখলেও চলতে পারে। বালির মন্দিরের প্রবেশ-তোরণে কিন্তু কারুকায্যের বৈচিত্র্য যথেষ্ট । বালির শিল্পকলা কোন বিশেষ স্থানে বা পরিবারে আবদ্ধ নয়। প্রতি গ্রামেই প্রতিদিনই তা গড়ে উঠছে । সব সময় মান্বযের চাহিদা মেটানোই যে এদের উদেখা ত মনে হয় নি । এদের নিজেদের প্রতিদিনের ব্যবহারের জিনিষটিকেও সূক্ষ্ম ও সুন্দর কারুকার্য্যের দ্বারা তৈরী করে নেয় । পুথিবীর যে-কোন দেশের দরিদ্র গ্রামবাসীদের সঙ্গে তুলনা করলে এ-কথা না বলে পাব। ধায় ন যে, এর একটা আশ্চৰ্য্য রকমের স্বভাব-শিল্পী জাত। আমাদের দেশের আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত সাধারণ ভারতবাসীদের অনেকের চেয়েও এদের রসবোধ অনেক উন্নত, আমার এই রকম মনে হয়েছিল । এদের সমাজে শিল্পের স্থান এত সহজ হয়ে গেছে যে অনেক সময় তার। নিজেরাই অবাক হয় যখন দেখে, বিদেশীরা তাদের নানা প্রকার শিল্পরচনা দেথে অবাক হয় । বলিদ্বীপের জনসমাজের সঙ্গে শিল্পকলার সম্পর্কে সাধারণ মন্তব্য এই পৰ্য্যস্ত ; এখন নৃত্যকলায় তাদের এই স্বষ্টিশীল শিল্পী-মন কি ভাবে কাজ করছে তার কিছু পরিচয় দিই । ] একথা অনেকেই শুনে থাকবেন যে বালির নৃত্যাভিনয় ও গামেলান সঙ্গীত একান্তভাবেই তাদের সমাজের দৈনন্দিন প্রয়োজনের বিষয়। এ দুটি না হ’লে মামুষের জন্ম থেকে মৃত্যু পৰ্য্যস্ত কোন সামাজিক অনুষ্ঠান সম্পূর্ণ হয় না। এ-সব নৃত্য বা নৃত্যাভিনয় ও গামেলান সঙ্গীত অনেক পরিবর্তনের ভিতর দিয়ে বর্তমান অবস্থায় এসে দাড়িয়েছে।