পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৫e সঙ্গে বাজায় । কাঠগুলির মাপায় দড়ি বা ন্যাকড়া পেচানো থাকে, তাতে ক’রে কাঠের ও কাসার সংঘর্ষে যে রকমের কর্কশ শব্দ হওয়া স্বাভাবিক তা হয় না, মোলায়েম শব্দ হয় । বাজিয়ে দন্সের রেয়ং যন্ত্রটি ছাড়া আর একটি ঠিক একই ধরণের বাজনা নৃত্য-আসরের সামনে সাজানে থাকে । এই বা জনায় ঘণ্টার সংখ্যা দশটি । এর নাম “ট্রম্পং” । নাচিয়ে হাতের পাখাটিকে রেখে অধিবসা অবস্থায় নীচের ভঙ্গীতে এগিয়ে এসে মাটি থেকে দুই হাতে দুটি কাঠি তুলে নিয়ে, সেই বাজনা বাজাতে স্বরু করে । কাঠি হাতে নিয়ে নান ভঙ্গীতে তাকে ঘোরায় ও সেই কাঠির:আঘাতে যন্ত্রে নানা প্রকার ছন্দ তোলে । অল্পক্ষণ বাজানোর পর আবার লাফাতে লাফাতে মাঝখানে ফিরে এসে পাখাটি হাতে তুলে নেয়। সকল নাচিয়ের পক্ষে ট্রম্পং বাজনা বাজানো সহজ নয়, এতে গামেলান যন্ত্র ও সঙ্গীতের গভীর জ্ঞান থাকা প্রয়োজন । এই কারণেই সব নাচিয়ে এ পদ্ধতিকে গ্রহণ করতে পারে নি, সকল নাচিয়ের এদিকে জ্ঞান থাকাও সম্ভব নয়। বালিতে থাকৃতে দেন।পাশার শহরে মারিয়ো-প্রবর্তিত নাচের এক প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা হয়েছিল, সে-দেশের এক বিশেষ উৎসব-উপলক্ষে । বলিদ্বীপের দশটি নাম-করা গ্রামের দল এই প্রতিযোগিতায় যোগ দেয় । দেখলাম দশটি গ্রামের দশটি নাচিয়েই কবিয়ার নাচ নাচল, কিন্তু প্রত্যেকের সঙ্গে প্রত্যেকের অনেক পার্থক্য, অথচ সকলে একক গুরুর ছাত্র । এই পরিবর্তন বিশেষ ভাবে লক্ষ্য ক’রে দেখলাম । কোন একটি দল এই নাচকে কোন একটা গল্পের মধ্য দিয়ে চালিয়ে দেবার চেষ্টা করেছে । মহাভারতের অর্জুনকে নিয়ে গল্পট নূতন করে তৈরি, সে আমাদের দেশের সঙ্গে মেলে না । কবিয়ার-নাচিয়ে ছিল অর্জুন, আরম্ভ করল কবিয়ার নাচ দিয়ে । গামেলান বাজনার কোন বদল হয় নি । অন্য দলে দেখলাম, গামেলান দলের জন কয়েক গাইয়ে প্রারম্ভে অনেক ক্ষণ গান গাইল । নাচের সময় নাচিয়ে গানের ভাবকে অভিনয়ে প্রকাশ করল। কয়েকটি নাfচয়েকে দেখলাম সব সময় নাচের ভিতর দিয়ে প্রেমের অভিনয় করে গেল। দেখলাম, নাfচয়ে বাজিয়েদের কোন এক জনের সামনে গিয়ে নাচে ভতর প্রবাসী d ృలిgఆ" প্রেম-নিবেদনের ভঙ্গী ও অভিনয় করতে লাগল । পরীক্ষকরা শেষ পর্য্যন্ত প্রথম পুরস্কার দিয়েছিলেন তাকে যে এই ভাবের পরিবর্তন না এনে, মারিয়োর পদ্ধতিতে নাচের ভিতর যতটা সম্ভব নৃতনত্বের আভাস দিতে পেরেছিল। সেই প্রতিযোগিতার নাচ দেখে বেশ বুঝতে পারলাম এদের চিন্তাধারার গতি—নুতন রচনা, নব পরিবর্তন করতে এরা কতখানি উংস্নক। আ র একটি ঘটনায় এ বিষয়ে মনের বিশ্বাস আরও দৃঢ়, হয়েছিল । পশ্চিম-বালির জুমরানা নামে এক বড় গ্রামে, মোড়লের পুত্রের বিবাহ, খুব ধুমধাম। বালির হিন্দুপ্রথায় বিবাহের অনুষ্ঠান। গ্রামের আবালবুদ্ধ সকলেই সন্ধ্যাবেলায় সমবেত হয়েছে। আমারও নিমন্ত্রণ ছিল। প্রাঙ্গণে গ্রামের গামেলান-দল খুব উৎসাহের সঙ্গে বাজাচ্ছে। হঠাৎ শুনি গ্রামের একটি অতি অল্প বয়সের বালক কবিয়ার নাচ নাচছে । তখনই দেখতে গেলাম । শুনলাম, বালকটি কোন শিক্ষকের কাছে কখনও হাতে ধরে এ নাচ শেখে নি । নাচে যারা প্রবীণ ও প্রাচীন তারাও জড়ো হয়েছে বালকের নাচ দেখতে। দেখলাম বালকটি আপন মনে নেচে চলেছে । বাজনার সঙ্গে হয়তে কখনও মিলছে কখনও মিলছে না তাতে গ্রামের দর্শকদের কেউ দুঃখিত নয়। সে যে না-শিখে এ ভাবে নাচতে পারছে এই দেখেই সকলে আনন্দিত । অনেকের মনে বিশ্বাস, ভবিষ্যতে এ বালক তাদের গ্রামের গৌরবের বিষয় হবে। আমাদের দেশে কেরলের কথাকলি-নাচিয়ে, মণিপুরী নাচিয়েদের অনেকের সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠ পরিচয় হয়েছিল। উত্তর-ভারতের কথক-নাচিয়েদের অবস্থাও জানি । এই সব প্রাচীন নাচে এ ধরণের স্বাধীনতার প্রশ্রয় দিতে এদের কখনও দেখি নি, বরঞ্চ যথাসম্ভব নিরুৎসাহ করতেই দেখা গেছে। এইখানেই আমাদের প্রাচীন নাচিয়েদের সঙ্গে এ-দেশের গ্রামের নাচিয়েদের মূল তফাৎ। এ-কথা যখনই মনে হয়েছে তখনই ভেবেছি বালির হিন্দুরা শিল্পকলায় এই স্বাধীন মনোবৃত্তি পেল কোথা থেকে। সকলেই জানেন এদের বর্তমান ধৰ্ম্ম বা সংস্কৃতি প্রাচীন হিন্দুভারতের কাছ থেকেই পাওয়া, তাই নিয়ে আজও