পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অগ্রহায়ঃ বিশ্বপ্রীতি ՀճՖ তাদের সমাজ বেঁচে আছে। অথচ আমাদের দেশের বৰ্ত্তমান সাধারণ হিন্দুসমাজের সঙ্গে এদের আকাশ-পাতাল তফাৎ। আমাদের দেশে রাজা-মহারাজা, ধনী ও শিক্ষিত দের সাহাধ্য বা প্রেরণার অভাবেই আমাদের দেশের গ্রাম্যশিল্পীর। মৃতপ্রায়, এই পোষকতা ছাড়া গ্রাম্যশিল্প বাচতে পারে না এই ধারণা আমরা সকলেই মনে মনে পোষণ করি । কিন্তু বালির হিন্দুদের তো কোনদিন রাজা-মহারাজা, ধনী বা শিক্ষিতদের সাহায্য বা প্রেরণার প্রয়োজন হয় নি। শিল্পকলার যা কিছু উন্নতি হয়েছে সে কেবল তাদের নিজেদেরই চেষ্টায় । এখনও বালিতে যে কয়টি রাজা বা জমিদার আছেন তাদের এক জনকেও কোন নাচিয়ে অথবা গামেলান সঙ্গীতের দলকে পোষণ করতে হয় না । নাচের ও বাজনার দল সব গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে রয়েছে, সেখানেই তৈরি হচ্ছে—দরকার হ’লে রাজারা সেই সব গ্রামে খবর পাঠান। জাভা এত নিকটের দেশ, এবং শোনা যায় জাভায় মুসলমান ধর্মের প্রথম প্রবর্তনের সময় জাভার হিন্দুরা এবং জাভার তৎকালীন হিন্দু সংস্কৃতি বালিতে আশ্রয় গ্রহণ করেছিল । অথচ আজ জাভায় সব শিল্পই ব্যক্তিবিশেষের হাতে এসে ঠেকেছে, সেখানকার সুলতানদের ও ধনীদের পৃষ্ঠপোষকতায় ও প্রেরণায় বেঁচে আছে । বহু শতাব্দী ধরে সে-দেশে এই সব শিল্পের কোন পরিবর্তন হয়েছে ব’লে কেউ বলতে পারে না ; বিশেষ করে নাচ ও বাজনায় । বিদেশীরা বালির নাম দিয়েছে “ধরার শেষ স্বৰ্গ” । এই স্বর্গের মোহে প্রতি মাসে এ-দেশে অসংখ্য বিদেশীর আমদানি হয়। তারা প্রশংসা করে সে-দেশের নিসর্গশোভার, তার স্ত্রীপুরুষের দৈহিক সৌন্দর্য্যের, তাদের শিল্পের ও তাদের নাচের । আমার মনে হয় তার চেয়েও বড় কথা এই যে বান্সির অধিবাসীর সহজ শিল্পী, যে শিল্পী-মন নিয়ে তার প্রতিদিনই নূতন কিছু কল্পনা করছে ও গড়ে তুলছে। বালির সব চেয়ে বড় এবং গৌরবের দিক হচ্ছে তার শিল্পস্থষ্টির এই নিত্যনবত্ব । বিশ্বপ্রীতি শ্ৰীইলারাণী মুখোপাধ্যায় আমার চিত্ত-দোলায় দোল দিয়ে যায়, কে আজিকে দোল দিয়ে যায় ! অচিন দেশের অজানা সুর বাজিয়ে যে হায়, বাজিয়ে যে হায় ! স্বপন-পুরী দুয়ার খুলে হাতছানি দেয় দুলে দুলে ; আকুল পবন মনের আগল খুলতে যে চায়, খুলতে যে চায় ! উদার আকাশ মেলে আঁখি বারে বারে কয় যে ডাকি— ‘সকল ফেলে আমার বুকে আয় চলে আয়, আয় চলে আয় ।” কুঞ্জবনে কুমম ফুটে, পরাণ যে আজ গন্ধ লুটে । পুষ্পকলি দল মেলে আজ গন্ধ বিলায়, গন্ধ বিলায় । সন্ধা আসে মধুর সাজে, চন্দ্র হাসে হৃদয়মাঝে, তরুণ অরুণ অfজ যে হেসে মোর পানে চায়, মোর পানে চায় । হৃদয় নিঝর বাধন-হারা ধায় যে আজি পাগলপারা ; নিঝর গীতি সাগর-গীতি এক সাথে যে আজকে মিশার ! শম্প-শু্যামল আসনখানি ভুবন আজি দেয় যে আনি, শু্যামল তরু নবীন পাতার মুকুটখানি পরিয়ে দে যায় ! মেঘের রথে আজকে কেন কে আমারে ডাকছে যেন । বিশ্ব-প্রীতি কানে কানে গুঞ্জরিয়া গান গেয়ে যায় !