পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বৈজ্ঞানিকের বিপত্তি ঐকমলেশ রায় --লীলা, শুনে যাও— —আসছি। একটু-পাচ মিনিট’ লীলা ফিরে আসবার আগে বিমলের পরিচয় একটু দিয়ে নিই । লম্বা, দোহারা গড়ন, চোখ দিয়ে বুদ্ধির আলো ঠিকরে পড়ছে। অল্প ক-দিনেই সে এক জন ভাল প্রফেসর ব’লে কলেজে নাম ক’রে ফেলেছে । কিন্তু তার আসল পরিচয়, সে এক জন নিষ্ঠাবান বৈজ্ঞানিক । কত বিনিদ্র রজনী সে ল্যাবরেটরিতে কাটিয়ে দিয়েছে গবেষণার কাজে ; কত দিন তার খাওয়া হয় নি, ভূলে গিয়েছে বলে ; কত রাতে ঘুম ভেঙে লাফিয়ে উঠেছে তার রিসার্চের হঠাং-মনে-লাগা পন্থার নোট টুকে রাখতে। এমনি ভাবে মনেপ্রাণে একান্তভাবে সে বিজ্ঞানের এক জন সেবক । তবে বর্তমানে এতটা হয় না, ত’তে পায় না। এক দিন রাতে অসম্ভব দেরি ক’রে এসে বিমল বলে—তাড়াতাড়ি খেতে দাও, আবার ল্যাবরেটরিতে যেতে হবে । লীলা তার পরিশ্রান্ত মুখের দিকে তাকিয়ে বললে—ইস, কি রকম শুকনে চেহারা হয়েছে সারাদিনের খাটুনিতে, আয়না দিয়ে দেখ তো । বিছানা পেতে রেখেছি, খেয়ে দেয়ে এখুনি শুয়ে পড়। এত খাটলে শরীর টেকে ? কী যে কর পাগলামি । এর পর আর কথা চলে না। কিন্তু সে যাই হোক, এ-হেন বৈজ্ঞানিকের সহধৰ্ম্মিণী সহকম্মিণী হয়ে লীলা ষে চিরকাল শুধুই গৃহস্থালী নিয়ে থাকবে সে-কথা আমাদের মনে করা ভূল এবং সেই ভুল ভাঙবার জন্য বিমলষ্ট যে প্রথমে উদ্যোগী হবে, সে-কথা ব’লে দেবার প্রয়োজন নেই । পাচ মিনিটের মধ্যে বলছিলে ? —ভুলে গিয়েছ ? কি কথা ছিল, আজ সন্ধ্যে থেকে ? —ণ্ড, হ্যা, মনে পড়েছে। আরম্ভ কর । লীলা ফিরে এল –কি লীলা বিমলের কাছে বিজ্ঞান শিখবে। তাকে ষে শিখতেই হবে ; বিমল এত বড় এক জন বৈজ্ঞানিক, গবেষক । —বেশ, মন দিয়ে শোন। আর, বুঝতে না পারলে, কি, কোন রকম সন্দেহ মনে হ’লে তখনি আমাকে জিজ্ঞাসা ক’রে । বুঝলে ? — আচ্ছা | লীলাকে কিন্তু একেবারে লেখাপড়া-না-জানা গেয়ো মেয়ে মনে করলে অত্যন্ত ভুল হবে । লীলার বাবা এক জন বিলাতফেরত ডাক্তার। কাজেই বুদ্ধ চিকিৎসক মেয়েকে মুখ ক’রে রাখেন নি, সে-কথা বলা বাহুল্য। বিজ্ঞানে অনভিজ্ঞ শিক্ষাধিনীকে গোড়ায় একটু প্রাথমিক বক্তৃতা দেওয়া দরকার, তাতে জিনিষটা অনেকখানি সহজ সরল হয়। নানান প্রয়োজনীয় অপ্রয়োজনীয় আনুসঙ্গিক কথার পর বিমল বললে, —এমনি ভাবে ধৰ্ম্মগত ও সামাজিক কুসংস্কারের বাধা কাটিয়ে বিজ্ঞান ধীরে ধীরে আপনার সত্যের পথ দিগদিগন্তে বিস্তুত ক’রে দিল । তার পরে আমরা বৈজ্ঞানিক গ্যালিলিওর নাম পাই । —দেখ, আজও ধোপ ক্লাপড় দিয়ে গেল না। টেবলক্লথটা কী রকম ময়লা হ’য়েছে। কত দিন যে— —স্থ, কাল দেবে বোধ হয় । গ্যালিলিওর যে-বছর মৃত্যু হয়, নিউটন সেই বছর জন্মগ্রহণ করেন। নিউটন— —শোন, মুধাদিকে চেন তো ? স্বধাদির ছোট ছেলেটি, মিণ্ট, যেবছর মারা যায় সেই বছর, না সেই মাসেই, তার বোনের একটি ছেলে হ’ল ; শিমলায় থাকে তারা। মা'রা সবাই বলে ও-ই মিণ্ট, । সত্যি তাই হয় নাকি, বল না ? —যা, তা কি ক’রে হবে ? তা হয় না। একটু চুপ ক’রে থেকে বিমল বললে- না, আমি সে-ভাবে কিছু