পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩০৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\ SSty ും ബ ব্যাপার সম্পূর্ণ রূপক মাত্র এবং কৃষ্ণ অৰ্জ্জুন ও গীতায় উল্লিখিত অন্তান্ত ব্যক্তিগণের নাম পরমাত্মা, জীবাত্মা এবং জীবের অষ্ঠাষ্ঠ মানসিক বৃত্তির প্রতিরূপ মাত্র । গ্রন্থকারও এই মতই পোষণ করেন ; এই জঙ্কই তাহার মত “ঞ্জীবকে ভগবৎসান্নিধ্য লাভ করিতে যে জ্ঞানগতির মধ্য দিয়া যাইতে হয় তাহাই গীত।" এই ভাব সম্মুখে রাখিয়। গ্রন্থকার গীতার আদ্যন্তু যে ব্যাখ্যা করিয়াছেন তাহা তাহার নিজস্ব । ইহা গ্রন্থকারের পাণ্ডিত্য এবং তত্ত্বজ্ঞানের সুস্পষ্ট প্রমাণ। গ্রন্থকারের মতের আলোচনা এস্থলে সম্ভব নহে। তবে র্যাহারা গ্রন্থকারের ব্যাখ্যার সহিত একমত হইবেন না তাহারাও ইহা পাঠে তৃপ্তিলাভ করিবেন, ইহা নিশ্চিতরূপে বলা যায়। ঐঈশানচন্দ্র রায় চম্পা ও পাটল—প্রিয়ম্বদা দেবী। ৪৬, ঝাউতলা রোড, বালিগঞ্জ, কলিকাতা হইতে প্রসন্নময়ী দেবী কর্তৃক প্রকাশিত। বাংলা কবিতা পড়িবার উৎসাহ এবং আগ্রহ র্যাহীদের আছে র্তাহীদের নিকট প্রিযম্বদা দেবীর নাম সুপরিচিত। র্যাহার কাব্যামোদী নহেন তাহদের নিকট প্রিয়ম্বদা দেবী কেন কোনও মুকবির পরিচয় দিতে যাওয়াই পণ্ডশ্রম। কবির এই ক্ষুদ্র অথচ শোভন গ্রন্থখানির দুইটি ভাগ। চম্পা' অংশে যোলটি এবং ‘পাটল’ অংশে প্রায় পচিশটি কবিতা সন্নিবেশিত করা হইয়াছে। অলঙ্কার-বাহুল্যবজ্জিত সহজ ছনের এই নাতিদীর্ঘ কবিতাগুলির তুলনা শেষ-বসন্তের চম্পকের সহিতই করিতে হয়। সৌরভের উগ্রতা স্নান হইয়াছে অথচ মধুকোষ আপনার ঐশ্বর্ঘ্যের পূর্ণত হারায় নাই, এই কবিতাগুলি সেইরূপ পুষ্পেরই সগোত্র। বিশিষ্ট কোন নামের বন্ধনে অধিকাংশ কবিতাকেই বাধিবার চেষ্টা না থাকিলেও, তাহাদের রসের নিদিষ্ট আবেদন কোথাও ব্যর্থ হয় নাই। জীবনের চরম বেদনাগুলিকে রসের এক অপরূপ রসায়নে বিগলিত করিয়া কবি র্তাহার কাব্যে তাহাদের এমন নিবিড় করিয়া মিশাইয়। দিয়াছেন যে প্রতিটি কবিতাই পাঠকের হৃদয়ে অশ্রুর আবেগের সহিত সৌন্দর্ঘ্যের এক অলৌকিক অনুভূতি জাগাইয়। অভিভূত করিবার ক্ষমতা রাখে। ভাষা তাহার মিথ্যা বলে নাই ; “তাই বলি অযাচিত আনন্দে ব্যথায়, হিসাবের হয় নিক কোনো গরমিল— অশ্রীর ফটিক মোর আলোকের মত অনাবিল !" কয়েকটি কবিতায় হাসপাতালে থাকা কালে রোগব্লান্ত ব্যথাতুর জীবনের প্রত্যক্ষ অনুভূতির কিছু বর্ণনাও তিনি দিয়াছেন। তাহাতে আধুনিক কবিসুলভ সত্য-বর্ণনার অসুস্থ উগ্রত নাই, কষ্টকল্পনার নিজীব দুৰ্ব্বলতারও লেশমাত্র চিহ্ন নাই। সত্য এবং কবিকল্পনার রসমিশ্রণে ভাষায় যাহা রূপ পাইয়াছে তাহার তুলন। আধুঙ্গিক বাংলা সাহিত্যে দুলভ । কবিতাগুলির ভাষার সহজ মৰ্য্যাদার অতি লক্ষ্য করিয়া ভূমিকায় ক্লবীন্দ্রনাথ যাহা বলিয়াছেন গ্রন্থটির আলোচনা-প্রসঙ্গে তাহ উল্লেখযোগ্য ঃ “প্রিয়ম্বদার অধিকার ছিল যে-সংস্কৃত বিদ্যায় সেই বিদ্যা আপন আভিজাত্য ঘোষণাচ্ছলে বাংলা ভাষার মর্য্যাদা কোথাও অতিক্রম করে নি ; তাকে একটি উজ্জ্বল শুচিত। দিয়েছে, তার সঙ্গে মিলে গিয়েছে অনায়াসে গঙ্গা যেমন বাংলার বক্ষে এসে মিলেছে ব্ৰহ্মপুত্রের সঙ্গে " জীবনের যে স্থলভ অবসরে বহিঃপ্রকৃতির সহিত আত্মার নিগুঢ় যোগ সহজে সাধিত হইয়া থাকে, যখন সাধারণ মানব-চিত্তও কবির ভাষার ভিতর আপনার হারা-ভাষী অশ্বেষণ করিয়া ফেরে, এই কাব্যগ্রন্থটি রসিক পাঠকবর্গের সেই সকল নিভূত লয়ের অকৃত্রিম সাথী হইবার যথার্থই উপযোগী । ঐনিৰ্ম্মলচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় প্রবাসী ১৩৪৬ . ব্ৰহ্মপ্রেমমূধাসিন্ধু বা আরাধনামিশ্রিত প্রার্থনাবলীপণ্ডিত সীতানাথ তত্ত্বভূষণ প্রণীত। ২১৪ পৃষ্ঠা, মুলা আট আন। ২১ •॥৬২ কর্ণওয়ালিস স্ট্রট প্রণেতার নিকট প্রাপ্তব্য। এই গ্রন্থমধ্যে সৰ্ব্বশুদ্ধ ৭৫টি প্রবন্ধবিশেষ আছে। ইহাদের কয়েকটির নাম, যথা –(১) নুতন ধরণে পুরাণ কথা, (১৬) জ্ঞানের প্রমাণ প্রেম, (২• ) ভেদাভেদতত্ত্ব (৩২) জীবনের সার্থকতা, (৩৮) সমাধি, (৪১) অহেতুকী কৃপ, (৫১ ) ভেদাভেদ, (৪২) প্রেম সত্য, প্রেমপত্রও সত্য, (৬১ ) মাতৃভাবে সিদ্ধি, ( ৭s ) মিথ্যা ও সত্য আমি, ( ৭৪ ) প্রেমের আনন্দ, ( ৭৫ ) নিষ্ফল ও সফল কৰ্ম্ম, ইত্যাদি। ইহাদের মধ্যে “সমাধি” নামক প্রবন্ধের কিছু অংশ, যথা-“এই তুমি আমার আত্মা। এই আত্মত্বে আমি তোমার সঙ্গে এক । তোমার সঙ্গে এক বলেই আমি তোমাকে দেখতে পাচ্চি। তোমার দর্শন দিবার জন্তেই তুমি আমাকে এই নিভৃত স্থানে নিয়ে এসেছ। এখানে আর কেউ নেই। অন্ধকার ছাড়া আর কোন বস্তুও নেই। তুমি এই অন্ধকারের জ্ঞাত। এর আশ্রয়। এতে তোমার অখণ্ডত্ব, অদ্বিতীয়ত্ব, ভঙ্গ কচ্ছে না। তুমি এই অন্ধকার বোধরূপে প্রকাশ পাচ্ছ । এই বোধ আমার। এই বোধে তুমি আমি এক । কিন্তু এই একত্ব সত্ত্বেও তুমি’ ‘আমির ভেদ গেল না। আমি তোমাকে আমার আত্মীরূপে জানছি। এমন স্পষ্টভাবে জনছি বে ভাবে আগের মুহূৰ্ত্ত পৰ্য্যন্ত জানতে পারি নি। তোমার এই অভেদ ভাবের ভিতর আমি আনব্বচনীয় ভাবে ভিন্ন হয়ে আছি । * * * এখন তোমার অহেতুকী কৃপার শরণাপন্ন হই। আমার অস্তুর বাহির অধিকার কর, অামাকে সমাধিস্থ করে আমার জীবন সার্থক কর, এই অশান্ত জীবনে তোমার শাস্তির রাজ্য স্থাপন কর।” ( ৪।৪।৩৬ ) এই গ্রন্থে এই ভাবেই অবশিষ্ট প্রবন্ধগুলি লিখিত । তত্ত্বভূষণ মহাশয় ১৯১৮ সাল হইতে এইরূপ প্রার্থনা সময় সময় লিখিয়া রাখিতেন । র্তাহার তৃতীয় কন্যা শ্ৰীমতী শান্তিময় দত্তার এই প্রবন্ধ পাঠে আগ্রহকে উপলক্ষ্য করিয়া তত্ত্বভূষণ মহাশয় এগুলি সাধাৰণকে উপহার দিলেন । মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্যদেবের সন্ন্যাসী শিষ্য প্রবেধানন্দ সরস্বতীর “রাধাপ্রেমমুধাসিন্ধু" নামক গ্রন্থের নাম মুকরণে ইহার নাম “ব্ৰহ্মপ্রেম হুধাসিন্ধু" রাখা হইয়াছে। এই গ্রস্থের বিশেষত্ব এই যে, বৰ্ত্তমান সাধারণ ব্রাহ্ম সমাজ বহুলস্কপে পরিগৃহীত পাশ্চাত্য ভেদাভেদবাদ বা অনন্ত উন্নতিবাদ অনুসারে সাধকের উপাস্ত তত্ত্ব এবং উপাসনকালে উপাসকের অবস্থা যেরূপ হওয়া উচিত, তাহাই ইহাতে পরিস্ফুট হইয়াছে। এই বিষয়টি এতই মধুর ভাবে, এতই চিত্তাকর্ষ ভাবে মাজিত কথোপকথনের ভাষায় লিখিত হইয়াছে যে, পাঠকালে পাঠকের গ্রন্থকারের ভাবে ভাবিত ন৷ হইয়া থাকিবায় উপায় মাই ! প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য ভাবের সমন্বয়চেষ্টার মধ্যে অকপট সাধক তত্ত্বভূষণ মহাশয়ের আজীবন দার্শনিক চিস্তার মনোহর মধুময় ফলের অtশ্বদন করিতে যাহার ইচ্ছা হইবে, এ গ্রন্থ উাহার সে ইচ্ছা পূর্ণ করিবে সন্দেহ নাই। জীবজগৎ ও জগৎকারণ বিষয়ে ভারতীয় ভেদবাদী অথবা অভেদবাদীর, এমন কি, ভেদাভেদবাদীরও, দৃষ্টিতে এই আলোচ্য ভেদাভেদবাদের রসাস্বাদ সম্পূর্ণ তৃপ্তিপ্রদ না হহলেও ইহার নিজস্ব মধুৰ্য্য যে, পাঠকমাত্রেরই চিত্ত বিমোহিত করিবে তাহাতেও সন্দেহ মাই। আজকাল পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত সমাজে দার্শনিক চিন্তায় বিশুদ্ধ ভারতীয় ভাব দুৰ্ল্লভ হইয়া উঠিতেছে, এ সময় এ গ্রন্থ বে তাদৃশ অনেকেরই তর্ককর্কশ প্রাণে শান্তিবারি সেচন করিবে তাহ সুনিশ্চিত । ঐরাজেন্দ্রনাথ ঘোষ ১২-২, জাপার সারকুলার রোড কলিকাতা, প্রবাসী প্রেস হইতে শ্ৰীলক্ষ্মীনারায়ণ নাথ কর্তৃক মুদ্রিত ও প্রকাশিত