পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

হিন্দুসমাজে নারীর স্থান ঐআনিলবরণ রায় অনেকের ধারণ বৰ্ত্তমানে হিন্দুসমাজে নারীর যে স্থান তাহা চিরকালই এইরূপ ছিল, এই ব্যবস্থাই সনাতন হিন্দুধর্শের অন্থকূল, হিন্দুর বৈশিষ্ট্য, এ-ব্যবস্থার কোনরূপ পরিবর্তন করিলেই হিন্দুধৰ্ম্ম, হিন্দুসমাজ নষ্ট হইবে। এরূপ ধারণা অজ্ঞান ও তামসিকতার লক্ষণ । তামসিকতাই সকল প্রকার পরিবর্তনের বিরোধী, নূতনকে সে ভয় পায়, যে পুরাতন চালে সে অভ্যস্ত হইয়া পড়িয়াছে তাহার এতটুকু ব্যতিক্রম হইলেই সে “সৰ্ব্বনাশ হইল” বলিয়। আতঙ্কিত হইয়া উঠে, কোনটা ভাল, কোনটা মন্দ, কোনটা সত্য, কোনটা মিথ্যা তাহ বিচার করিয়া দেখিবার শক্তি তাহার নাই, গতানুগতিক ভাবে নির্বিববাদে নিঝঞ্জাটে কোনও রকমে জীবনের কয়েকটা দিন কাটাইয়া দিতে পারিলে আর সে কিছুই চাহে না । তাহার এই দুৰ্ব্বলতা, এই রৈব্যকেই সে বড় বড় পণ্ডিতের মত কথা বলিয়া, শাস্ত্রবচন উদ্ধৃত করিয়া সমর্থন করিতে চায়, প্রজ্ঞাবাদাংশ্চ ভাষসে । এই তামসিকতা অতি নিরুষ্ট গুণ, মাছুষকে ইহা ক্রমে নীচের দিকে, অধৰ্ম্মের দিকে, ধ্বংসের দিকে লইয়া যায় । সমস্ত হিন্দুসমাজ আজ এইরূপ তামসিকতায় আচ্ছন্ন হইয়া পড়িয়াছে, তাই কোথাও একটু উন্নতি বা সংস্কারের চেষ্ট হইলেই অমনিই চারি দিকে “গেল গেল” রব উঠিতেছে! হিন্দুকে এই তামসিক অজ্ঞান ও অপ্রবৃত্তি ছাড়াইয়া উঠিতেই হইবে, নতুবা তাহার পরিত্রাণ নাই । হিন্দুসমাজের ইতিহাস আলোচনা করিলে দেখা যায় যে, জগতের চরম সত্য সম্বন্ধে হিন্দু যে সকল তথ্য অবগত হইয়াছে, সমাজে স্কুল ভাবে সেই সকল সত্যকেই রূপ দিতে চাহিয়াছে। অত্যুচ্চ অধ্যাত্ম সত্যকে অনুসরণ করিয়া মাতুষকে ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবন যাপন করিতে হইবে, ইহাই হিন্দু শিক্ষাদীক্ষার মূলকথা। যাহাতে জনসাধারণ এই সত্যের আভাস পায় সেজন্য হিন্দু মুনিঋষিগণ নানা রূপকের ছলে, উপমার ছলে সে-সব সত্য বর্ণনা করিয়াছেন, হিন্দুর বেদ, উপনিষদ, দর্শন, পুরাণ, তন্ত্র, এইরূপ রূপকে পরিপূর্ণ। হিন্দুর সমাজ-জীবনেরও অনেক অনুষ্ঠান এইরূপ রূপক। দৃষ্টান্তস্বরূপ, হিন্দুর বিবাহ-অনুষ্ঠানের কথা বলা যাইতে পারে। বর-কন্তু একসঙ্গে সপ্ত পদ গমন করিলেই বিবাহ সম্পূর্ণ হয়। এই সপ্ত পদ হইতেছে জীবনের সপ্ত স্তরের রূপক, প্রাকৃত জীবনের স্তর—দেহ, প্রাণ, মন ; অধ্যাত্ম জীবনের স্তর— বিজ্ঞান, সং, চিৎ, আনন্দ ৷ স্ত্রী ও পুরুষে যখন জীবনের এই সকল স্তরে পরস্পরের সহিত নিবিড়ভাবে যুক্ত হয়, তখনই তাঙ্গদের মিলন পূর্ণ হয়, তাহাদের জীবনে পুরুষ ও প্রকৃতির লীলা সার্থক হয়। বিবাহের সময় দুই জনে একসঙ্গে সপ্ত পদ গমন করিয়া, তাহাদের সেই পূর্ণ মিলনেরই স্বচনা করে। কিন্তু আজকাল কয় জন লোক হিন্দু বিবাহের এই প্রকৃত মৰ্ম্ম বুঝে ? হিন্দু আজকাল বিবাহ করে, শুধু দেহের মিলনের জন্ত, তাই বিবাহিত জীবনের ভিতর দিয়া পশুত্বের উপরে আর বেশী দূর অগ্রসর হইতে পারে না, দাম্পত্য জীবনে যে অত্যুচ্চ প্রেম ও আনন্দ আছে তাহার কোন সন্ধানই পায় না। অথচ মুখে হিন্দুত্বের বড়াই করিতে কেহই কম নহে । হিন্দুসমাজে নারী ও পুরুষের সম্পর্কও অনেকটা রূপকের মত। জগতের চরমতত্ত্ব পুরুষ ও প্রকৃতির সম্বন্ধ হিন্দু যখন যে ভাবে বুঝিয়াছে, সমাজে পুরুষ ও স্ত্রীর সম্বন্ধও অনেকটা তদনুরূপ হইয়াছে। পুরুষ ভগবানের পুংভাব, প্রকৃতি ভগবানের স্ত্রীভাব—এই দুই তত্বের ংযোগেই বিশ্বলীলা চলিতেছে। বেদে এই দুই তত্ত্ব, নৃ ও জ্ঞ, বিশ্বের দেবতত্ত্ব ও দেবীতত্ত্ব, অনেকটা সমপৰ্য্যায়