পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কালিন্দী ঐতারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় Y ግ মামলার রায় বাহির হইল আরও আট মাস পরে। দাঙ্গার মোকদ্দমা—সাক্ষীর সংখ্যা এক শতেরও অধিক, তাহার বিবরণ-জেরা এবং এই দীর্ঘ বিবরণ ও জেরা বিশ্লেষণ করিয়া উভয় পক্ষের উকীলের সওয়াল জবাব শেষ হইতে দীর্ঘ দিন লাগিয়া গেল। দাঙ্গ ঘটিবার দিন হইতে প্রায় তিন বৎসর। রায় বাহির হইবার দিন গ্রামের অনেক লোকই সদরে গিয়া হাজির হইল । নবীন বাগদীর সংসারে উপযুক্ত পুরুষ কেহ ছিল না, তাহার উপযুক্ত পুত্র মারা গিয়াছে, থাকিবার মধ্যে আছে এক নাবালক পৌত্র, পুত্রবধূ ও তাহার স্ত্রী মতি বাগিনী । মতি নিজেই সেদিন পৌত্রকে কোলে করিয়া সদরে গিয়া হাজির হইল । রংলাল কিন্তু যাইতে পারিল না, অনেক দিন হইতেই সে গ্রামে বাহির হওয়া ছাড়িয়া দিয়াছে। অতি প্রয়োজনে বাহির যখন হয়, তখন সে মাথা হেঁট করিয়া চলে ; সদর রাস্তা ছাড়িয়া জনবিরল পথ বাছিয়া চলে । আজ সে বাড়ীর ভিতর দাওয়ার উপর গুম হইয়া বসিয়া রহিল । তাহার স্ত্রী বলিল-ইঁ্যা গো, বলি সকালবেলা থেকে বসলে যে ! আনুগুলো তুলে না ফেললে আর তুলবে কবে ? কোন দিন জল হবে—হ’লে আলু আর একটি থাকবে না, সব পচে যাবে। রংলাল বলিল—ছ । —ছ তো বলছ, কিন্তুক রইলে যে সেই বসেই রাজা-রুজিরের মতই। বলিয়া রংলালের স্ত্রী ঈযং না হাসিয়া পারিল না। অকস্মাং রংলাল অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হইয়া বলিয়া উঠিল— ভগমান! এত নোক মরছে, আমার মরণ হয় না কেনে বল দেখি ! সংসারের কচকচি আর আমি সইতে লারছি। বলিতে বলিতে সে ঝরঝর করিয়া কাদিয়৷ ফেলিল। তাহার স্ত্রী অবাক হইয়া গেল, সে কি যে বলিবে খুজিয়া পৰ্য্যন্ত পাইল না। বুঝিতেও সে পারিল না অকস্মাং সংসার কোন যন্ত্রণায় এমন করিয়া রংলালকে অধীর করিয়া তুলিল! দুঃখে অভিমানে তাহারও চোখ ফাটিয়া জল আসিতেছিল। রংলাল কপালের রগ দুইটা আঙুল দিয়া চাপিয়া ধরিয়া বলিল—মাথা আমার থ'সে গেল । আমি আজ খাব না কিছু। বলিয়। সে ঘরে গিয়া উপুড় হইয়া মেঝের উপর শুষ্টয়া পড়িল । আরও এক জন অধীর উৎকণ্ঠার উদ্বেগে অসহ মনঃপীড়ায় পীড়িত হইতেছিলেন । অতি কোমল হৃদয়ের স্বভাবধৰ্ম্ম অতি-মমতায়, এখন হঠতেই নবীন ও তাহার সহচর কয়জনের জন্য সুনীতি গভীর বেদনা অনুভব করিতেছিলেন। উৎকণ্ঠার উদ্বেগে তাহার দেহমন যেন সকল শক্তি হারাইয়া ফেলিয়াছে। উনানে একটা তরকারি চড়াইয়া স্থনীতি ভাবিতেছিলেন ঐ কথাই । সোরগোল তুলিয়া মানদা আসিয়া বলিল—পোড়া-পোড়া গন্ধ উঠছে যে গো! আপনি বসে এইখানে—আর তরকারি পুড়ছে । আমি বলি মা বুঝি উপরে গিয়েছেন । নামান, নামান । এতক্ষণে সচকিত হইয়া স্বনীতি গন্ধের কটুত্ব অনুভব করিয়া ব্যস্ত হইয়া উঠিলেন। চারি পাশে চাহিয়া দেখিয়া বলিলেন—ঐ যা, সাড়াশিটা আবার আনি নি। আন তো মা মানদী । মানদা অল্প বিরক্ত হইয়াই বলিল—ওই যে সাড়াশি– ওই যে গো। বঁ-হাতের নীচেই যে গো ! সুনীতি এবার দেখিতে পাইলেন—সাড়াশিটার উপরেই বঁ-হাত রাখিয়া তিনি বসিয়া আছেন।