পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩৬২ তাড়াতাড়ি তিনি কড়াইখানা নামাইয়া ফেলিলেন, কিন্তু হাতেও যেন কেমন সহজ শক্তি নাই, হাতখানা থরথর করিয়া কঁাপিয়া উঠিল। মানদার সতর্ক সযত্ন দৃষ্টিতে সেটুকুও এড়াইয় গেল না, সে এবার উৎকণ্ঠিত হইয়া বলিয়া উঠিল—কৰ্ত্তবাবু আজ কেমন আছেন মা ? মান হাসি হাসিয়া সুনীতি বলিলেন—তেমনই আছেন। —বাড়ে নাই তো কিছু, তাই জিজ্ঞাসা করছি। —না। ক-দিন থেকে বরং একটু শাস্ত হয়েই আছেন । —তবে ? মানদা আশ্চৰ্য্য হইয়া প্রশ্ন করিল। স্থনীতিও এবার বিস্ময়ের সহিত বলিলেন—কি রে ? কি বলছিস তুই ? মানদা বলিল—এমন মাটির পিতিমের মত ব'সে রয়েছেন যে ? গভীর একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিয়া সুনীতি বলিলেন— নবীনদের মামলার আজ রায় বেরুবে মানদা ! কি হবে বল তো ওদের ? যদি সাজা হয়ে যায়— আর তিনি বলিতে পারিলেন না, তাহার রক্তাভ পাতলা ঠোট দুইটি বিবর্ণ হইয়া থরথর করিয়া কঁাপিতে আরম্ভ করিল— কোমল দৃষ্টিভরা চোখ দুটি জলে ভরিয়া বেদনার সায়রের মত টলমল করিয়া উঠিল। মানদাও একটা গভীর দীর্ঘনিশ্বাস না ফেলিয়া পারিল না । দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিয়া সে বলিল—সে আর আপনিআমি কি করব বলুন । মামুষের আপন আপন অদেষ্ট ; কপালের লেখন কি কেউ মুছতে পারে মা । অসহায় মানুষের মামুলি সান্থনা ছাড়া মানদ আর কিছু খুজিয়া পাইল না, কিন্তু স্বনীতির হৃদয়ের অকৃত্রিম পরম মমতা চিরদিনের মতই আজও প্রবোধ মানিল না। জলভরা চোখে উদাস দৃষ্টিতে চাহিয়া থাকিতে থাকিতে তিনি বলিলেন-মানুষ মরে যায় বুঝতে পারি মানদা—তাতে মানুষের হাত নেই। কিন্তু এ কি দুঃখ বল তো, এক টুকরো জমির জন্তে মামুযে মানুষকে খুন ক’রে ফেললে, আবার তারই জন্তে, যে খুন করলে তাকে রেখে দেবে খাচায় পুরে জানোয়ারের মত, কিংবা হয়তো গলায় ফাসি লটকে-- কথা আর লী | " تميذ SVඑ8ම් শেষ হইল না, চোখের জলের সমুদ্র গভীরতর বেদনার অমাবস্তার স্পর্শে উচ্ছসিত হইয়া উঠিল—হু-হু ' করিয়া চোখের জল ঝরিয়া ঝরিয়া মুখ বুক ভাসাইয়া क्षिळ । মানদার চোখ ও শুষ্ক রহিল না, তাহারও চোখের কোণ ভিজিয়া উঠিল ; কিছুক্ষণ চুপ করিয়া থাকিয়া, সে আক্রোশভর কণ্ঠে বলিয়া উঠিল—তুমি ভেবো না ম', ভগবান এর বিচার করবেনই করবেন। ঘরে আগুন লাগবে, নিববংশ হবে— বাধা দিয়া সুনীতি বলিলেন—না না, মানদা, শাপশাপাস্ত করিস নে মা ! কত বার তোকে বারণ করেছি বল তো ! মানদী এবার স্থনীতির উপরেই রুষ্ট হইয়া উঠিল, স্বনীতির এই কোমলতা সে কোন মতেই সহ করিতে পারে না। ক্রোধ নাই আক্রোশ নাই সে কি মানুষ ! সে রুষ্ট হইয়াই সে স্থান হইতে অন্যত্র সরিয়া গেল । স্থনীতি বেদনাহত অস্তরেই আবার রাস্নার কাজে ব্যস্ত হইয়া উঠিলেন । রামেশ্বরের স্নান-আহারের সময় হইয়া আসিয়াছে। সেই ঘটনার পর হইতে রামেশ্বর আরও স্তব্ধ হইয়া গিয়াছেন ; পূৰ্ব্বে আপন মনেই অন্ধকার ঘরে কাব্য অfবৃত্তি করিতেন, ঘরের মধ্যে পায়চারিও করিতেন, কিন্তু এখন অধিকাংশ সময়ই স্তন্ধ হইয়া ঐ খাটখানির উপর বসিয়া থাকেন, আর প্রদীপের আলোয় হাতের আঙ লগুলি ঘুরাইয়া ঘুরাইয়া দেখেন। কখনও কখনও স্বনীতির সহিত কথার আনন্দের মধ্যে থার্ট হইতে নামিতে চাহেন, সুনীতি হাত ধরিয়া নামিতে সাহায্য করেন। অন্ধকার রাত্রে জানালার ধারে দাড়াইয়া অতি সস্তপণে মুক্ত পৃথিবীর সহিত অতি গোপন এবং অতি ক্ষীণ একটি যোগসূত্র স্থাপনের চেষ্টা করেন। আপনার তুর্ভাগ্যের কথা মনে করিয়া সুনীতি স্নান হাসি হাসেন—তখন চোখে তাহার জল আসে না । পিতলের ছোট একটি হাড়িতে মুঠাখানেক স্বগন্ধি চাল চড়াইয়া দিয়া, স্বামীর স্বানের উদ্যোগ করিতে স্বনীতি উঠিয়া পড়িলেন । এই বিশেষ চালটি ছাড়া অন্য চাল রামেশ্বর থাইতে পারেন না ।