পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পোষ 籃 অপরাহ্লের দিকে স্বনীতির মনের উদ্বেগ ক্রমশ: যেন বাড়িয়াই চলিয়াছিল ; সংবাদ পাইবার জন্য র্তাহার মন অস্থির হইয়া উঠিল । অন্য দিন খাওয়াদাওয়ার পর স্বামীর নিকট বসিয়া গল্পগুজবে তাহার অস্বাভাবিক জীবনের মধ্যে সাময়িক ভাবে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরাইয়া আনিবার চেষ্টা করেন, কোন কোন দিন রামায়ণ বা মহাভারত পড়িয়া শুনাইয়া থাকেন, কিন্তু আজ আর সেখানেও স্বস্থির হইয়া বসিয়া থাকিতে পারিলেন না। আজও তিনি বই লইয়া বসিয়াছিলেন, কিন্তু পড়ার মধ্যে পাঠকের অস্তরের যে তন্ময় যোগ থাকিলে শ্রোতার অন্তরকে আকর্ষণ করা যায়, আপন অস্তরের সেই তন্ময় যোগটি তিনি আজ আর কোন মতেই স্থাপন করিতে পারিলেন না । একটা ছেদের মুথে স্বনীতি আসিয়া থামিতেই রামেশ্বর বলিলেন—তুমি যদি সংস্কৃতটা শিখতে স্বনীতি, তোমার মুখে মূল মহাকাব্য শুনতে পেতাম। অনুবাদ কি না— এতে কাব্যের আনন্দটা পাওয়া যায় না। সুনীতি অপরাধীর মত স্বামীর মুখের দিকে চাহিয়৷ বলিলেন—আজ তা হ’লে এই পৰ্য্যন্তই থাক । রামেশ্বর অভ্যাসমত মৃদু স্বরে বলিলেন—থাক । তার পর মাটির পুতুলের মত নিম্পলক দৃষ্টিতে চাহিয়া বসিয়া রহিলেন । স্থনীতি একটা গভীর দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিলেন । রামেশ্বর সহসা বলিলেন—অহীন, অহীন কোথায় পড়ে বল তো ? —বহরমপুর মুরশিদাবাদে । এই যে কাল তুমি মুরশিদাবাদের গল্প করলে, বললে—অহীন খুব ভাল জায়গায় আছে ; আমাদের দেশের ইতিহাস মুরশিদাবাদ না দেখলে জানাই হয় না। —হঁ্যা হ্যা। রামেশ্বরের এবার মনে পড়িয়া গেল । সম্মতিসূচক ঘাড় নাড়িতে নাড়তে বলিলেন—হঁ্যা হ্যা ! জান সুনীতি, এই— —বল । —এই—মামুযের সকলের চেয়ে বড় অপরাধ হ’ল মানুষকে হত্যা করার অপরাধ। সেই অপরাধ কখনও ভগবান ক্ষমা করেন না। মুরশিদাবাদের চারি দিকে استیاس-۹۱ 8 रुणिब्झैँौ A ملي من المه সেই অপরাধের চিহ্ন দেখতে পাবে। আর সেই হ’ল তার পতনের কারণ । স্বনীতির চোখ সজল হইয়া উঠিল—নীরবে নতমুখে বসিয়া থাকার সুযোগে সে জল তাহার চোখ হইতে মেঝের উপর ঝরিয়া পড়িতে আরম্ভ করিল। তাহার মনে পড়িতেছিল--হতভাগ্য ননী পালকে, হতভাগ্য ধীরেন, তাহার ধীরেনকে ; চরের দাঙ্গায় নিহত সেই অজানা অচেনা হতভাগ্যকে, হতভাগ্য নবীন ও তাহার সহচর কয় জনকে । তিনি গোপনে চোখ মুছিয়া ঘরের বাহিরে যাইবার জন্য উঠিলেন, এক বার মানদাকে পাঠাইবেন সংবাদের জন্য । রামেশ্বর ডাকিলেন—সুনীতি ! কণ্ঠস্বর শুনিয়া স্থনীতি চমকিয়া উঠিলেন, রামেশ্বরের কণ্ঠস্বর বড় স্নান, কাতরতার আভাস তাঙ্গতে সুস্পষ্ট । স্বনীতি উদ্বিগ্ন হইয়াই ফিরিলেন-কি বলছ ? রামেশ্বর কাতর দৃষ্টিতে স্ত্রীর দিকে চাহিয়া বলিলেন— দেখ! আমার-আমার শরীরটা—দেখ আমাকে একটু শুইয়ে দেবে। সযত্নে স্বামীকে শোয়াইয়া দিয়া সুনীতি উৎকণ্ঠিত চিত্তে বলিলেন—শরীর কি খারাপ বোধ হচ্ছে ? সে কথার জবাব না দিয়া রামেশ্বর বলিলেন—আমার গায়ে একখানা পাতলা চাদর টেনে দাও তো, আর ঐ আলোটা-ওটাকে সরিয়ে দাও । বলিতে বলিতেই তিনি উত্তেজিত হইয়া উঠিতেছিলেন—ঈষৎ উত্তেজিত স্বরেই এবার তিরস্কার করিয়া বলিলেন—তুমি জান, আমার চোখে আলোর মধ্যে যন্ত্রণা হয়, তৰু ওটা জালিয়ে রাখবে দপদপ করে। প্রতিবাদে ফল নাই, স্থনীতি তাহা ভাল করিয়াই জানেন, তিনি নীরবেই আলোটা কোণের দিকে সরাইয়া দিলেন, পাতলা একখানি চাদরে স্বামীর সর্বাঙ্গ ঢাকিয়া দিয়া ঘর হক্টতে বাহির হইয়া গেলেন । তাহার মন বার-বার বাহিরের দিকে ছুটিয়া যাইতে চাহিতেছিল। ঘর হইতে বাহির হইয়া বারান্দায় দাড়াইয়া সুনীতি ডাকিলেন—মানদা ! মানদা দিবানিদ্রা শেষ করিয়া উঠান ঝাট দিতেছিল, সে বলিল—কি মা ? v@y@ §