পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\bog —এক বার একটা কাজ করবি মা ? —বলুন । —এক বার পাড়ায় একটু বেরিয়ে জেনে আয় না মা— সদর থেকে খবরটবর কিছু এসেছে কি না । মানদা ঘাড় নাড়িয়া বলিল-এর মধ্যে কোথায় কে ফিরবে গো, আর ফিরবেই বা কেমন ক’রে । ফিরতে সেই রাত আট ন-টা । সে-কথা স্থনীতি নিজেও জানেন, তবুও বলিলেন— ওরে, বাৰ্ত্ত আসে বাতাসের আগে। লোক কেউ না আম্বক-খবর হয়তো এসেছে, দেখ না এক বার । মায়ের কথা শুনলে তো পুণ্যিই হয় । ঝাটাটা সেইখানেই ফেলিয়া দিয়া মানদা বিরক্তিভরেই বাহির হইয়া গেল । মুনীতি স্তব্ধ হইয়া বারান্দায় দাড়াইয়া রহিলেন । সহসা তাহার মনে হইল-বাগীপাড়ায় যদি কেহ কঁাদিতেছে তবে সে কান্না তো ছাদের উপর হইতে শোনা যাইবে । কম্পিত পদে তিনি ছাদে উঠিয়া শূন্ত দৃষ্টিতে উৎকৰ্ণ হইয়া দাড়াইয়া রহিলেন । কিছু ক্ষণ পরে তিনি স্বস্তির একটা নিশ্বাস ফেলিয়া বাচিলেন, না: কেহ কাদে নাই ! এতক্ষণে র্তাহার দৃষ্টি সজাগ হইয়া উঠিল, আপনাদের কাছারির সম্মুখের খামার-বাড়ীর দিকে তাকাইয়া তিনি দেখিলেন, একটা লোক ধানের গোলার কাছে দাড়াইয়া কি করিতেছে। লোকটা তাহাদেরই গরুর মাহিদার ; ভাল করিয়া দেখিয়া বুঝিলেন—খড়ের পাকান মোট বড় দিয়া তৈরি গোলাটার ভিতর একটা লাঠি গুজিয়া ছিদ্র করিয়া ধান চুরি করিতেছে। তিনি লজ্জিত হইয়া পড়িলেন, উপরে চোখ তুলিলেই সে তাহাকে দেখিতে পাইবে । অতি সস্তপণে সেদিক হইতে সরিয়া ছাদের ওপাশে গিয়া দাড়াইলেন । গ্রামের ভাঙা তটভূমির কোলে কালীর বালুময় বুক চৈত্রের অপরাহ্লে উদাস হইয়া উঠিয়াছে। কালীর ওপারে চর—সৰ্ব্বনাশা চর! কিন্তু চরখানি আজ র্তাহার চোখ জুড়াইয়া দিল। চৈত্রের প্রারম্ভে কচি কচি বেনাঘাসের পাতা বাহির হইয়া চরটাকে যেন সবুজ মখমল দিয়া মুড়িয়া দিয়াছে। ঘন সবুজের মধ্যে সাওতালদের পল্লীটির গোবরে মাটিতে নিকানো খড়িমাটির আলপনা দেওয়া ঘরগুলি যেন ছবির প্রবাঙ্গী ՖՓ86, মত সুন্দর। আর পল্লীটি ইহারই মধ্যেই কত বড় হইয়। উঠিয়াছে! সম্পূর্ণ একখানি গ্রাম। পল্লীর মধ্য দিয় বেশ একটি স্বন্দর পথ, সবুজের মধ্যে শুভ্র একটি আঁকাবাকা রেখা, নদীর কূল হইতে ওপারের গ্রামের ঘন বনরেখার মধ্যে মিশিয়া গিয়াছে। সাওতালদের পল্লীর আশেপাশে কতকগুলি কিশোর গাছে নূতন পাতা দেখা দিয়াছে। চোখ যেন তাহার জুড়াইয়া গেল । তবুও তিনি একটা দীর্ঘনিশ্বাস না ফেলিয়া পারিলেন না। এমন স্বন্দর চর, এমন কোমল- এখান হইতেই সে কোমলতা তিনি যেন অনুভব করিতেছেন—তাহাকে লইয়া এমন হানাহানি কেন মাচুর্য করে ? নীচে হইতে মানদা ডাকিতেছিল, স্থনীতি ত্রস্ত হইয়া দোতলার বারানায় নামিয়া গেলেন । নীচের উঠান হইতে মানদা বলিল—এক-এক সময় আপনি ছেলেমামুষের মত অনবুঝ হয়ে পড়েন মা। বললাম—রাত আট ন-টার আগে কেউ ফিরবে না, আর না ফিরলে খবরই বা আসবে কি ক’রে । টেলিকেরাপ তো নাই মা আপনার শ্বশুরের গায়ে যে তারে তারে খবর আসবে । —সুনীতি । ঘরের ভিতর হইতে রামেশ্বর ডাকিতেছিলেন । শাস্ত মনেষ্ট স্বনীতি ঘরের ভিতরে প্রবেশ করিলেন, দেখিলেন রামেশ্বর বালিশে ঠেস দিয়! অৰ্দ্ধশায়িতের মত বসিয়া আছেন, মুনীতিকে দেখিয়া স্বাভাবিক শাস্ত কণ্ঠেই বলিলেন—অহিনকে লিখে দাও তে, রবীন্দ্রনাথ ব’লে যে বাংলা ভাষার কবি, তারই বই যেন সে নিয়ে আসে। তা হ’লে তুমি পড়বে, তাতে কাব্যের রস পুরোই পাওয়া যাবে। হ্যা, আর কাদম্বরীর অনুবাদ যদি থাকে। বুঝলে ! ংবাদ যথাসময়ে আসিল এবং শ্ৰীবাস মজুমদারের কল্যাণে উচ্চরবেই তাহ তৎক্ষণাৎ প্রচারিত হইয়া গেল । সেই রাত্রেই সৰ্ব্বরক্ষা দেবীর স্থানে পুজা দিবার অছিলায় গ্রামের পথে পথে তাহারা ঢাক-ঢোল লইয়া বাহির হইল । ইন্দ্র রায়ের কাছারিতে রায় গম্ভীর মুখেই দাড়াইয়া ছিলেন। তাহার কাছারির সম্মুখে শোভাযাত্রাটি আসিবামাত্র