পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩৯৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পৌষ • বটে। তবে কি পরিণতি ! শুধালাম--কি হয়েছে তোমার ? —আর বাবু, ভুগে ভুগে ডো সারা হয়ে গেলাম। প্রথম তো হ’ল টাইফয়েড। এখন এখানের ডাক্তারবাবু বলছেন ‘সেকেণ্ডারি এনিমি । চমকে উঠলাম—সেকেণ্ডারি অ্যানিমিয়া ! তাহলে এত দিন তুমি ছিলে কোথায় ? —আপনাদের এখানেই আছি বাৰু। ঐ বড় বাড়ীটায় ছিলাম। আজ এখানে এনেছে । পতিতপাবনের দিন ঘনিয়ে এসেছে। তবু কপালে হাত বুলিয়ে নাড়ীটা একটু টিপে বলতে বাধ্য হলাম— কোন চিন্তা নেই। এখানে থাকলে ধীরে ধীরে ভাল হয়ে যাবে। - সহজ শাস্ত গলায় পতিতপাবন জবাব দিল—বঁাচার মেয়াদ আমার ফুরিয়েছে বাৰু, সে ভরসা আর দেবেন না। বড়সায়েব বলে গেছেন কাল, সুস্থ কোন মামুষের রক্ত না হ’লে এ রোগ সারবার নয় । কিন্তু আমার জন্যে আর কে রক্ত দিতে আসবে বাৰু? ও আশা আমি ছেড়ে দিয়েছি । মৌখিক সাস্তুলা এর পরে অচল । মনে সত্যি বড় আঘাত পেলাম। লোকটা শেষ পর্য্যন্ত ‘রক্তারি মলমে’র হাতেই মরল। অ্যানিমিয়া...রক্তশূন্ততা--তাজা রক্ত. রক্তারি মলম.মাসে ছ ছ-টাকার দুধ. ‘রক্তারি মলম’-এর পরীক্ষারই এই রক্ত wooe. তবে কি ? আশঙ্কা হ’ল। খোকা কোথায় আছে পতিতপাবন ? মুখের ফ্যাকাশে রঙের কোন পরিবর্তন হ’ল না । কিন্তু তার রোগজীর্ণ শরীর বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠল। করুণ চোখ তুলে বলল-থোকা আর নেই বাৰু। বিদ্যুৎ-আলোকিত ঘর যেন অন্ধকার হয়ে গেল । পতিতপাবনের গলা যেন অনেক দূর হতে ভেসে এল কানে—সেই ‘এনিমি’তেই থোকা মারা গেছে । আমিও যাব । সে জন্য দুঃখ করি না বাৰু। কিন্তু খোকার গর্ভধারিণীর যে কি হবে বাৰু— শুধালাম-তোমার পতিতপাবনের গলা ধরে গেল। কিন্তু আশ্চৰ্য্য তার সহিষ্ণুতা। অথবা আঘাতে আঘাতে মানুষ বুঝি এমনই হয়। তার দেহে বা মনে কোন উচ্ছ্বাস নেই, তরঙ্গ নেই। আধমরার মত বিছানায় পড়েই কথা কয়টি সে বলল। চীৎকার করল না, বুক চাপড়াগ না। শুধু দুই চোথ বেয়ে জল গড়াতে লাগল। বৈদ্যুতিক আলোয় চোখের জল ঝকঝক ক’রে উঠল । জল তো নয়, রক্ত । তাজা লাল রক্ত । প্রতি বিন্দুতে অসংখ্য রক্তকণিকা। জীবনযুদ্ধের অক্ষৌহিণী সৈন্য !-- কিছু দিন পরেই পতিতপাবন মারা গেল । - --- - -