পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কাত্তিক কালিলী 8૭. श्रृखलंद्र মুত্তিকার প্রতি অপরিমেয় লোভ—এই দুয়ের তাড়নায় সে যেন দগ্বিদিক জ্ঞানশূন্ত হইয়া উঠিয়াছিল। সে মুখ বিকৃত করিয়া ভেঙাইয়া বলিয়া উঠিল—ই্যা হ্য, সে জানি । যা যা, বেটা বাগদী, ঘরে পরিবারের আঁচল ধরে বসে থাক গে যা । নবীন জাতে বাগদী, আজ তিন পুরুষ তাহার। জমিদারের নগদীগিরিতে লাঠি হাতেই কাল কাটাইয় আসিয়াছে, কথাটা তাহার গায়ে যেন তীরের মত গিয়া বিধিল । সে রূঢ় দৃষ্টিতে রংলালের মুখের দিকে চাহিয়া বলিল—আমি পরিবারের আঁচল ধ’রে ব’সে থাকি আর যাইকরি, তুমি যেন যেয়ে । চরের উপরেই আমার সঙ্গে দেখা হবে বুঝলে । শুধু আমি নয়, গোটা বাগদাপাড়াকে ওই চরের ওপর পাবে । বলিয়া সে হন হন করিয়া চলিতে আরস্ত করিল। কথাটা রং লাল রাগের মুখে বলিয়া ফেলিয়া নিজেই অন্যায়ুটা বুঝিয়াছিল, এ ক্ষেত্রে বাহুবলের একমাত্র ভরসাস্থল ৪ষ্ট নবীন। মুসলমানদের বিরুদ্ধে দাড়াইতে হঠলে বাগদীদের দলে না লইলে উপায়াস্তর নাই । নবীন সমস্ত বাগদী পাড়াটার মাথা । তাহার কথায় তাহারা সব করিতে পারে । মূকর্তে রং লাল আপনা হইতেই যেন পাণ্টাইয়া গেল—একেবারে স্বর পাণ্টাইয়া সে ডাকিল— নলীন নবীন ! ৪ নবীন ! শোন হে শোন ! ভ্র কুঞ্চিত করিয়া নবীন ফিরিয়া দাড়াইয়া বলিল— বল ! রসিকতা করিয়া অবস্থাটাকে সহজ স্বচ্ছন্দ করিয়া লইবার অভিপ্রায়েই রংলাল বলিল—ঐ রাগের চোটে যে পথই তুলে গেলে হে ! ওঁ দিকে কোথা যাবে ! —যাব আমার মনিব-বাড়ী । অনেক মূন আমি থেয়েছি, তাদের অপমান লোকসান আমি দেখতে পারব না পাল । আমি হুকুম আনতে চললাম, তোমাদিকেও জমি চযতে দোব না, ও শ্রীবাসকেও না। গোট বাগদীপাড়া আমরা মনিবের হয়ে যাব। এ তোমরা জেনে রাখ ! রংলাল একটু চিন্তা করিয়া বলিল—চল, আমিও যাব। টাকা দিয়েই বন্দোবস্ত আমরা ক’রে নেব । নবীন খুশী হইয়া বলিল—সে আমি কতদিন থেকে বলছি বল দেখি ! নবীন চক্রবর্তী-বাড়ীর পুরানো চাকর। শুধু সে নিজেই নয়, তাহার ঠাকুরদাদা হইতে তিন পুরুষ চক্রবর্তীবাড়ীর কাজ করিয়া আসিয়াছে । এই জমি বন্দোবস্তের গোড়া হইতেই মনে মনে সে একটা দ্বিধা অকুভব করিয়া আসিতেছিল । সেলামী না দিয়া জমি বন্দোবস্ত পাইবার আবেদনের মধ্যে তাতার একটা দাবী ছিল, কিন্তু অঙ্গীন্দ্র তাহাতে অসম্মতি জানাইলে রং লাল যখন আইনের ফঁাকে ফাকি দিবার সংকল্প জ্ঞাপন করিল, তখন মনে মনে একটা অপরাধ-বোধ সে অতুভব করিল। কিন্তু সে-কথাটা জোর করিয়া সে প্রকাশ করিতে পারিল না দলের ভয়ে । বৃংলাল এবং অন্য চাষী কয়জন যখন এই সংকল্পই করিয়া বসিল, তথন সে এক অন্য অভিমত প্রকাশ করিতেও কেমন যেন সঙ্কোচ অনুভব করিল। তাহার সঙ্গে সঙ্গে খানিকটা লোভও ছিল । অন্তকে ফাকি দেওয়ার আনন্দ না হইলে ও তাহাদিগকে খাতির বা স্নেহ করিয়া এমনি দিয়াছেন, ইহার মধ্যে ধে একটা আত্মপ্রসাদ আছে, তাহার - প্রতি একটা আসক্তি তাহার অপরাধ-বোধকে আরও খানিকট সঙ্কুচিত করিয়া দিয়াছিল । সৰ্ব্বশেষ রংলাল যখন বলিল—ঐ সাওতালদের চেয়েও কি আমরা চক্ৰবৰ্ত্তী-বাড়ীর পর ?--তখন মনে মনে সে একটা ক্রুদ্ধ অভিমান অন্তভব করিল, যাহার চাপে ঐ সঙ্কোচ বা দ্বিধাবোধ একেবারেই ধেন বিলুপ্ত হইয়া গেল যাহার জন্য অসঙ্কোচে রং লালদের দলে সে মিশিয়া গেল, উচ্চকণ্ঠে ন হইলেও প্রকাশ্ব ভাবেই বিদ্রোহ ঘোষণা করিয়া উঠিয়া আসিল । কিন্তু ধীরে ধীরে আবার সেই দ্বিধ। তাহার মনে জাগিয়া উঠিতেছিল। সেই জন্যই মামলা-মোকদ্দমায় সম্মতি সে দিতে পারে নাই । তাহার পর শ্রীবাসের এই ষড়যন্ত্রের কথা প্রকাশ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সে স্পষ্ট দেখিতে পাইল চারি দিক্ হইতেই এই চক্ৰবৰ্ত্তী-বাড়ীকে ফাকি দিবার আয়োজন চলিতেছে, তাহারা, শ্ৰীবাস, মজুমদার—সকলেই ফাকি দিতে চায় ঐ সহায়হীন চক্ৰবৰ্ত্তীবাড়ীকে—তাহারই পুরোনো মনিবকে। এক মুহূর্তে তাহার অকস্মাং