বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

88 প্রবাসী రి3\ు মনের স্বন্দ্বের মীমাংসা হইয়া গেল, তিন পুরুষের মনিবের পক্ষ হইয়া সমগ্র বাগদীবাহিনী লইয়া লড়াই দিবার জন্য তাহার লাঠিয়াল-জীবন মাথা চাড়া দিয়া উঠিল । চক্রবত্তীবাড়ীর পুরাতন চাকর হিসাবে অন্দরে যাতায়াতের বাধা তাহার ছিল না, সে একেবারে মুনীতির কাছে আসিয়া অকপটেই সমস্ত বৃত্তান্ত নিবেদন করিয়া মাথা নীচু করিয়া দাড়াইয়া রহিল। হৃদয়াবেগের প্রাবল্যে তাহার ঠোট দুইটি থর থর করিয়া কঁাপিতেছিল। রংলাল দাড়াইয়াছিল দুয়ারের বাহিরে রাস্তাঘরে । সমস্ত শুনিয়া স্বনীতি কাঠের পুতুলের মত দাড়াইয়৷ রহিলেন, একটি কথাও বলিতে পারিলেন না। কথা বলিল মানদা, সে তীক্ষ স্বরে বলিয়া উঠিল—ছি লগী ছি ! গলায় একগাছা দড়ি দাও গিয়ে । সুনীতি এবার বলিল—না না মানদী ; দোষ নবীনের নয়, দোষ অহির । সাওতালদের যখন সে বিনা সেলামীতে জমি দিয়েছে, তখন নবীনকেও দেওয়া উচিত ছিল । সত্যিই ে নবীন কি আমাদের কাছে সাওতালদের চেয়েও পর ? নবীন এবার ছোট ছেলের মত কাদিয়া ফেলিল । দুয়ারের ওপাশ হইতে রংলাল বেশ আবেগ ভরেক্ট বলিল—বলুন মা, আপুনিই বলুন ! আমাদের অভিমান হয় কি না হয় আপুনিই বলুন। মনে ক’রে দেখুন— আমিই বলেছিলাম সৰ্ব্বপ্রথম যে, এ চর আপনাদের ষোল আনা । তবে ধন্মের কথা যদি ধরেন তবে আমরা পেতে পারি। আপুনি বলেছিলেন, ধৰ্ম্মকে বাদ দিয়ে কি কিছু করা যায় বাবা, তোমরা নিশ্চিস্তি থাক । তাতেই মা, সেই দাবীতে আমরা আবদার ক’রে বলেছিলাম—আমরা দিতে পারব না সেলামী । সুনীতি একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিয়া বলিলেন—সবই বুঝলাম বাবা, কিন্তু এখন আমি কি করব বল ? নবীন বলিল—আমাকে হুকুম দেন মা, আমি কাউকেই জমি চযতে দেব না । গোট বাগদীপাড়া লাঠি হাতে গিয়ে দাড়াব! থাকুক জমি এখন খাস দখলে । ংলাল বাহির হইতে গভীর ব্যগ্রতা-ব্যাকুল স্বরে বলিয়া উঠিল—এখুনি আমি আড়াই-শ টাকা এনে হাজির করছি নবীন—জমি আমাদিকে বন্দোবস্ত ক’রে দেন রাণীমা । নবীন বলিল—সেই ভাল মা, ঝঞ্চাট পোয়াতে হয় আমরাই পোয়াব। আপনাদের কিছু ভাবতে হবে না | স্থনীতি অনেক কিছু ভাবিতেছিলেন । তাহার মধ্যে যে কথাটা তাহাকে সৰ্ব্বাপেক্ষ পীড়িত করিতেছিল সেট নবীন ও রংলালের কথা । নিজের স্বার্থের জন্ত কেমন করিয়া এই গরিব চাষীদের এমন রক্তাক্ত বিরোধের মুখে ঠেলিয়া দিবেন । তাহার বোধ হইল—স্বার্থ টা ষোল আনা তো তাহারই ! মানদা কিন্তু হাসিয়া বলিল—সস্তায় কিস্তি মেলে ঝঞ্চটি পোয়াতে গায়ে লাগে না, না কি গো লগী ? আমিও কিন্তু বিঘে পাঁচেক জমি নেব মা ! আমারও তো শেযকাল আছে । আমিও টাকা দেব । লগদী যা দেবে তাই দেব। লগদীর চেয়ে তো আমি পর নই মা ! মানদার কথার ধরণটা শুধু ধারালোই নয়, বাকাও খানিকট বটে, নবীন অসহিষ্ণু হইয়া নড়িল, ছুয়ারের ও-পাশে রং লাল দাতে দাত টিপিয়া নিরালা অন্ধকারের মধ্যেই নীরব ভঙ্গিতে তাহাকে শাসাইয়া উঠিল । সুনীতি কি বলিতে গেলেন, কিন্তু তাহার পূর্বেই বাহির-দরজার ও-পাশে কে গলার সাড়া দিয়া আপনার আগমনবার্তা জানাইয়া দিল । গলার সাড়া পরিচিত। সুনীতি চঞ্চল হইয়া উঠিলেন, মানদা সবিস্ময় বলিল-ওম, নায়েব বাবু যে ! পর-মুহূর্তেই শাস্ত বিনীত কণ্ঠস্বরে মজুমদার বাহির হইতে ডাকিলেন—বউঠাকরুণ আছেন না কি ? নবীন খানিকট দুর্বলতা অনুভব করিয়া চঞ্চল হইয়া পড়িল, দরজার আড়ালে রংলালের মুখ শুকাইয়া গেল । মানদা মৃদুস্বরে স্বনীতিকে প্রশ্ন করিল—ম ? সুনীতি মৃদুস্বরেই বলিলেন—আসতে বল । মানদা ডাকিল—আসুন, ভিতরে আমন । সুনীতি বলিলেন—একখান আসন পেতে দে মানদণ । প্রশান্ত হাসিমুখে যোগেশ মজুমদার ভিতরে প্রবেশ সকলেরই অভ্যস্ত