পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৬৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

وكاوه اول চান চিত্তকে স্থির ও শুদ্ধ করিতে। মানুষের সাধারণ চৈতন্য হইতেছে বিক্ষোভময়, দ্বন্দ্বপূর্ণ, কবির ভাষায়— লক্ষ্যশূন্য লক্ষ বাসন ছুটিছে গভীর আঁধারে, ন জানি কখন ডুবে যাবে কোন অকূল গরল পাথারে! মামুষের অস্তর-রাজ্যে শৃঙ্খলা নাই, মানুষ সেখানে রাজী হইয়াও তাহার কৰ্ম্মচারীদের বশ, প্রজাদেরই বশ, ইন্দ্রিয়ের অধীন, কাম ক্রোধ লোভের অধীন । এই যে বহুত, অধীনত, ইহা দূর করিয়া স্বরাজ্য স্থাপন করিতে হইবে । তাই রাজযোগের প্রাথমিক প্রক্রিয়া হইতেছে যম ও নিয়ম, প্রাণ মনের উচ্ছ জ্বল অভ্যাসগুলি দূর করিয়া তাহাদের পরিবর্তে সদ অভ্যাস দৃঢ়ীভূত করা* । অহিংসা, সত্য, অস্তেয়, ব্রহ্মচর্য্য ও অপরিগ্রহ এই পাচটিকে যম বলে । শৌচ, সন্তোষ, তপস্যা, স্বাধ্যায় ও ঈশ্বরপ্রণিধান এই পাচটিকে নিয়ম বলা হয় । সত্যকখন অভ্যাস করিয়া সকল প্রকার অহংমুখী বাসনা-কামনা বর্জন করিয়া, অপরের অনিষ্ট করা হইতে বিরত থাকিয়া, শুচিতা অবলম্বন করিয়া, মানসরাজ্যের ধিনি প্রকৃত অধীশ্বর সেই ভাগবত পুরুষে সৰ্ব্বদা মনোনিবেশ করিলে হৃদয় ও মনের শুদ্ধ, প্রসন্ন, স্বচ্ছ অবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয় । কিন্তু ইহা হইতেছে কেবল প্রথম ধাপ। ইহার পর মন ও ইন্দ্রিয়গণের সাধারণ প্রক্রিয়া সকলকে সম্পূর্ণভাবে শাস্ত করিতে হইবে, যেন অন্তর-পুরুষ এই সব বিক্ষোভ হইতে মুক্ত হইয়৷ উৰ্দ্ধতর চৈতন্যের মধ্যে উঠিতে পারে এবং পূর্ণতম সিদ্ধি ও আত্মজয়ের ভিত্তি স্থাপন করিতে পারে। তবে রাজযোগী ভুলিয়া যান না ষে মনের সাধারণ ক্রটিগুলির মূল হইতেছে স্বায়ুমণ্ডলী ও শরীরের প্রতিক্রিয়ার বহুতো । সেই জন্য তিনি হঠযোগী হইতে আসন ও প্রাণায়াম পদ্ধতি গ্রহণ করেন, তবে সে-সবকে নিজ প্রয়োজন অনুযায়ী সংক্ষিপ্ত ও সরল করিয়া লন । ও রাজযোগের অষ্ট অবস্থা— যম, নিয়ম, আসন, প্রাণাস্বাম, প্রত্যাহার, ধারণা, ধ্যান, সমাধি । প্রবাঙ্গী Segú এই ভাবে তিনি হঠযোগের জটিলতা বর্জন করিয়া তাত মূল পদ্ধতির সাহায্যে কুণ্ডলিনী শক্তিকে জাগ্ৰত কবি তোলেন। ইহা সিদ্ধ হইলে রাজযোগী অস্থির মন: সম্পূর্ণভাবে শাস্ত করিতে এবং ধ্যান ও ধারণা অভ্যাসে দ্বারা মনকে একাগ্র করিয়া সমাধি লাভ করিতে অগ্রসর ट्न ! সমাধির অবস্থায় মন তাহার সাধারণ সীমাবদ্ধ ক্রিযু হইতে প্রত্যাবৃত্ত হইয়া উচ্চতর চৈতন্যের মধ্যে প্রবেশ লাভ করে ; বাহিরের চৈতন্যের বিক্ষোভ আর তাহাকে স্পর্শ করে না, জীব তখন অতিমানস স্তরে নিও প্রকৃত অধ্যাত্ম সত্তায় প্রতিষ্ঠিত হইতে পারে। যোগী যে কেবল সমাধি অবস্থাতেই উচ্চতম লোকোত্তর জ্ঞান লাভ করেন তাহা নহে, জাগ্রত অবস্থাতেও তিনি যাহা জানিতে চান তাহ জানিতে পারেন এবং বাহ্যজগতেও অধ্যাতু শক্তি প্রয়োগ করিতে পারেন । এই ভাবে যোগী যে কেবল অন্তরকেই জয় করিয়া স্বরাজ্য লাভ করেন তাহা নহে, বাহাজগৎকেও নিয়ন্ত্রিত করিয়া সাম্রাজ্য লাভ করেন । রাজযোগের দুৰ্ব্বলতা হইতেছে এই যে, ইঙ্গ অস্বাভাবিক সমাধির অবস্থার উপৰুে অত্যধিক ভাবে নির্ভর করে এবং মাতুষকে সাধারণ জীবন হইতে সরাইয়া লয়। অন্যপক্ষে গীতা যে যোগের শিক্ষণ দিয়াছে তাহাতে মানুষ সাংসারিক জীবনে থাকিয়া কৰ্ম্মের ভিতর দিয়াই অধ্যাত্ম চেতনা লাভ করিতে পারে এবং ঐ চেতনার দ্বার। মামুষের সাধারণ জীবন ও কৰ্ম্মকেই দিব্য ভাবে রূপান্তরিত করিতে পারে । তবে গীতা রাজযোগের শক্তিও স্বীকার করিয়াছে এবং গীতার সাধনায় রাজযোগ কিরূপে সহায় স্বরূপ হইতে পারে, ষষ্ঠ অধ্যায়ে তাহা বর্ণিত হইয়াছে । গীতা বলিয়াছে, সকল প্রকার যোগ ও যজ্ঞই হইতেছে পরম লক্ষ্যে পৌছিবার এক-একটি পস্থা, সকলের দ্বারাই সত্তার শুদ্ধি সাধনে সহায়তা হয় । তবে গীতা যে পস্থা দেখাইয়াছে, তাহাতে সকল যোগের সমন্বয় হইয়াছে, তাহার দ্বারা অন্যান্য সকল যোগেরই ফল লাভ করা যায় অথচ তাহা সাধন করিবার জন্য অন্যান্য যোগের গুণয় সংসার ও কৰ্ম্ম ছাড়িয়া যাইতে হয় না ।