পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৬৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૧ફ૦ হইতেই কাকাবাৰু কেজোমির বিরুদ্ধে মাঝে মাঝে মন্তব্য করিতেছেন। সৌরীনবাৰু বলিলেন—কাজের মানুষ মাত্রেই পাজি লোক এ কথা আমি বলছি না, কিন্তু যে-সব মাছুষ কাজ ছাড়া আর কিছু জানে না এবং না-জানাটাকে গৌরবের ব’লে মনে করে, তাদের সম্বন্ধে আমার কেমন যেন একটু সন্দেহ হয় ! —কি সন্দেহ হয় ? —সন্দেহ হয় যে তারা ছদ্মবেশী মশা, মাছি, ছারপোকা, শকুনি, বাঘ, ভালুক অর্থাৎ নিছক একটা. প্রাণী, বেঁচে থাকবার জন্যেই কেবল ছটফট করছে— ঠিক মাম্য নয়! —অর্থাৎ অকেজো লোকই ঠিক মানুষ তোমার মতে ! সৌরীনবাবু সিগারে একটা টান দিয়া বলিলেন— ঠিক তা নয়, নিছক প্রাণী হিসেবে টিকে থাকবার জন্যে যে বাধা পথ জাছে সেই পথ ছেড়ে যে যতটা বিপথে যেতে পারে সে-ই ততটা মনুষ্যধৰ্ম্মী। মানুষ ছাড়া অন্ত কোন জানোয়ার বিপথে যেতে পারে না। মানুষই গান গায়, ছবি অ’াকে, কবিতা লেখে, থিয়েটার করে। মনের আনন্দে সে এত কাল এই সব কাজে কাজ ক’রে এসেছে। কিন্তু ইদানীং নিছক এই আনন্দটুকুর জন্যই আর সে এ সব করতে প্রস্তুত নয় দেখা যাচ্ছে । আজকাল আমরা গান গাই, ছবি আঁকি, কবিতা লিখি, থিয়েটার করি আনন্দের জন্তে নয়--পয়সার জন্যে, সব কিছুকেই কাজে লাগাবার জন্তে ব্যস্ত হয়ে উঠেছি আমরা। তুমি ঐ যে সোয়েটারটা বুনছ ওটা নিছক শিল্পচর্চা নয়, তুমি বুনছ আমার শীতনিবারণের জন্যে— স্বপ্রিয়ার মা বলিলেন—তাতে ক্ষতি কি ! —সব কিছুই উদেশ্বমূলক হয়ে উঠলে কেমন যেন লাগে। প্রত্যেক কাজের পেছনে একটা মতলব আছে মনে হ’লে কেমন যেন একটা অস্বস্তি হয়। মনে হয় জীবন ধারণ করা মানে এক দল প্যাচালো মতলববাজ লোকের সঙ্গে ক্রমাগত মোকদ্দমা করা ! ব্যাপারটা হয় তো তাই-ই, কিন্তু অবস্থাটা স্বর্থের নয়-- ●वाजौ Yègo, এই বলিয়া তিনি সিগারের ছাইটি ঝাড়িয়া আর একটি টান দিলেন। সুপ্রিয়া অনেকক্ষণ আগেই তাহার হাতের বইখানি খুলিয়া পড়িতে স্বরু করিয়াছিলেন, সুপ্রিয়ার মা-ও এ কথার কোন জবাব দেওয়া প্রয়োজন মনে করিলেন না। বিমল চুপ করিয়া ভাবিতেছিল অদ্ভুত লোক তে ইহারা। যাহার অস্বশ্বের জন্ত র্তাহাকে ডাকা হইয়াছে, তিনি বলিতেছেন তাহার কোন অসুখই নাই এবং এভক্ষণ ধরিয়া যে-সব কথাবার্তা চলিতেছে তাহার সহিত অমুখের কোন সম্পর্কও নাই। আশ্চৰ্য্য ব্যাপার! নীরবতা ভঙ্গ করিয়া সৌরীনবাবু পুনরায় বলিলেন—অথচ মজা এই যে আমরা সেই সব মানুষের সঙ্গই পছন্দ করি যারা এই সব বাজে কাজে মজবুত। এই যে বিমলবাবুকে আজ ডাকা হয়েছে এটা তার ভাক্তারি নৈপুণ্যের জন্যে ততটা নয় যতটা তার অভিনয়নৈপুণ্যের জন্ত। মুপ্রিয়া এর অভিনয় দেখে খুশী হয়েছিল, সম্ভবতঃ সেই জন্যেই ইনজেকশন দেবার জন্যে এত লোক থাকতে একেই ডেকে আনা হ’ল ! সুপ্রিয়া বই হইতে মুখ তুলিলেন এবং ভ্ৰলত ঈষৎ আকুঞ্চিত করিয়া বলিলেন—এত বাজে কথাও বলতে পারেন কাকাবাবু । সৌরীনবাবু একটু হাসিয়া বলিলেন-হীরালাল আমার নাম দিয়েছে বৈজিক-সম্রাটু, অবশু বাজে কথার জন্তে নয়, আমি ভাল বেজিক খেলতে পারি ব’লে ! জুলফি-সমম্বিত ভদ্রলোকটি কতকগুলি কাগজ হন্তে এবং আর এক জন ভদ্রলোক সমভিব্যাহারে আসিয়া হাজির হইলেন। পিছনে স্থই জন চাকর চায়ের সরঞ্জাম প্রভৃতিও আনিয়া সাজাইতে লাগিল। জুলফি-সমন্বিত ভদ্রলোকের নাম স্বধীর এবং তাহার সঙ্গে যিনি আসিয়াছিলেন তঁtহার নাম স্বত্রত। সুধীর স্বপ্রিয়ার দাদা এবং সুব্রত মুপ্রিয়ার স্বামী । বিমল পরিচয় পাইয়া স্বত্রতবাবুকে নমস্কার করিল। মনে মনে বিস্থিত হইল—অতিশয় জীর্ণশীর্ণ ভদ্রলোক তো । চোখের জ্যোতি তীব্র, গালের হাড় দুইটা উচু হইয়া আছে, নাকটা খঙ্গের মত। পরিধানে ঢিলা পায়জামা ও পাঞ্জাৰী, পায়ে স্বদ্বগু একজোড়া চটি। তিনি কলিকাতার নামজাদ দুই-তিন জন