পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৭০৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ੋਗ ভাব। ক্রমে চারিটার সময় তিনি পরব্রহ্মে বিলীন হইয়া গেলেন। মৃত্যুর কিছু পূর্বেও তিনি মুগুক উপনিষদের “দ্ধ সুপর্ণা” কবিতাটির বঙ্গানুবাদ করেন। মৃত্যুদিনেও তিনি একটি কবিতা রচনা করেন, তাহার শেষ কয় পংক্তি দেখিলে বুঝা যায় তাহার মৃত্যুর কথা তিনি আগেই বুঝিয়াছিলেন কিন্তু মৃত্যুর মধ্যে র্তাহার আর ভয়ের হেতু কিছুই ছিল না। তোমার অনিমো করি ধ্রুবতারা ভাসাই তরণী । দুদিনে পাইলে ভয় তুমি হও দিনমণি ৷ মাথায় করি লব যবে তুমি পাঠাইবে মরণ। মরণে সে ডরে লী ক হে যে ধরি চরণ ॥ —ভারতী, মাঘ ১৩৩২, পৃ. ৩৪৮ । পূর্বেই বলা হইয়াছে র্তাহার চরিত্রের মধ্যে অদ্ভুত রকমের বিরোধের সমাবেশ ছিল । তিনি এক দিকে ছিলেন ধ্যানলোকের মানুষ, অথচ তাহার কবিতা ও প্রবন্ধগুলির মধ্যে দেখা যায় মনুষ্য-চরিত্রের বিষয়ে আশ্চৰ্য্য র্তাহার অনুভূতি । তাঙ্গর চমৎকার সরস রসিকতাগুলি দেখিলে মনেই হয় না যে তিনি এক জন ধ্যানলোকবাসী অনাসক্ত যোগিপুরুষ । তাহার ধ্যান এত বিশাল ছিল যে সেই ভাবের সঙ্গে রফ করিয়া কোনো কাজ সমাধা করিয়া তোলা তাহার পক্ষে অসম্ভব ছিল । তাই তাহার বড় বড় সব লেখাই প্রায় অসমাপ্ত । তাহার প্রথম দিকের স্বপ্নপ্রয়াণ ও তত্ত্ববিদ্যা তিনি সমাপ্ত করিয়াছিলেন । কিন্তু পরে তাহার সার সত্যের আলোচনা, হারামণির অন্বেষণ, গীতাপাঠ কিছুই তিনি সমাপ্ত করিয়া যাইতে পারেন নাই। এই সব কাজের ধ্যানরূপটিই তাহার এত বিরাট ছিল যে কাজে তদনুরূপ করিয়া তোলা কিছুতেই তাহার পক্ষে সম্ভবপর হয় নাই । কায়াধোগের সঙ্গে তাহার কতকটা যে পরিচয় ছিল তাহা আমি জানিতাম । তিনি নিজেও কোনো কোনো শ্বাসক্রিয়া করিতেন । ঔষধাদিতে র্তাহার কখনও বিশ্বাস ছিল না। র্তাহার অসুখবিসুখও বড় একটা হইত না । তাহার পরলোকপ্রয়াণের নয়-দশ বৎসর পূৰ্ব্বে এক বার তাহার খুব অস্থখ হয়। তখনও তিনি কিছুতেই ঔষধ মহামতি দ্বিজেন্দ্রনাথ ՊՀ» খাইবেন না । তাহার কুইনাইন খাওয়া প্রয়োজন । তিনি বলিলেন, “আমার অস্থখ না হয় ঔষধে সারিবে কিন্তু ঔষধ সারিবে কিসে?” অনেক সাধ্যসাধনায় দুইএক মাত্রা ঔষধ খাইয়াই তিনি ছাড়িয়া দিলেন। তবে তিনি সারিয়া উঠিলেন । তাহার পরও প্রায় দশ বৎসর মুস্থভাবে বাচিয়া রহিলেন। সেই সময় তিনি বলিয়াছিলেন, "জানেন, আমার জীবনে কখনও অসুখ-বিমুখ বড় একটা হয় নাই। একবার আমার স্কন্ধদেশে বাতের ব্যথা হয় তাহা আমি মননক্রিয়ার দ্বারাই দূর করিয়া দিয়াছিলাম। স্নানাদি কিছুই বন্ধু করি নাই । ঔষধ তো স্পর্শই করি নাই ।” মৃত্যুর দিন পর্য্যন্ত তিনি ঠাণ্ডা জলে স্বান করিতেন। তাঙ্গার মত ছিল, "শরীর ক্ষিতি-অপ তেজ-বায়ু-বোম এই পঞ্চতত্ত্বে রচিত। পঞ্চতত্বের সঙ্গে যোগের সামঞ্জস্ত হইলেই রোগ দূর হয়। তাহা কবিতে যে জানে না সে ঔষধ নামে বিষ সেবন করিতে বাধা হয় । তাহার রোগ সারিলেও ঔষধ সারে না ।" যোগ ও তন্ত্রের কায়াসাধনায় তাহার বিশ্বাস ছিল । কতকটা তাহার জানাও ছিল । তবে তিনি সবই ধ্যানদৃষ্টির দ্বারা দেখিতেন এবং ধ্যানযোগেই তাহার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন । ঠিক যোগী বলিতে যাহা বুঝায় তিনি তাহ। ছিলেন না। তাহার ভাব-ঐশ্বর্য্যের মধ্যে যোগিভাবও গভীর ভাবে বিদ্যমান ছিল । সৰ্ব্ববিষয়েই র্ডাহার সম্বন্ধ ছিল ধ্যান ও ভাবের দ্বার, দেহের সম্বন্ধের দ্বারা নহে । র্তাহার প্রতিভা ছিল বিরাট । সেই প্রতিভার অজস্রতার পরিমাণ নাই। রবীন্দ্রনাথের জীবন-স্মৃতিতে তাহার কিছু কিছু পরিচয় মেলে। স্বপ্নপ্রয়াণ ও রেখাক্ষর গ্রন্থ লেখার সময় কত চমৎকার সব কবিতা ষে বসন্তের শুষ্ক পত্রের মত তিনি চারি দিকে ঝরাইয়া ছড়াইয়া দিয়াছেন তাহার হিসাব কে করিবে? অনেক সময় তাহার বাতিল করা কবিতাগুলিই ছিল বেশী সুন্দর । সঞ্জীবচন্দ্রের কথা লিখিতে গিয়া রবীন্দ্রনাথ যে লিখিয়াছেন, “র্তাহার প্রতিভার অজস্রতা ছিল কিন্তু গৃহিণীপনা ছিল না”—এই কথা দ্বিজেন্দ্রনাথ সম্বন্ধেও থাটে । তত্ত্ববোধিনী পত্রিকার ও ভারতী পত্রিকার সম্পাদকতা