পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৭৫০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ማዓ• স্থানবিশেষে চাষীদের পক্ষে বিপদ-আপদের সময়েও টাকা সংগ্রহ করা যে বিশেষ কঠিন হয়ে উঠেছে সে কথা অস্বীকার করা চলে না। সরকারী ভাবে একথা স্বীকৃত হয়েছে। এর সঙ্গে যদি বন্ধকের একমাত্র জিনিস জমি সম্বন্ধেও এ আইন হয় তা হ’লে চাষীদের পক্ষে ঋণসংগ্ৰহ করা ফুষ্কর হয়ে পড়বে। সেই জন্য যদি সরকার বা আইনসভা শুধু এই আইনটি পাস করেই কৰ্ত্তব্য শেষ হয়েছে মনে করেন তাহ’লে চাষীদের প্রতি যে-দরদ দেখানো হবে সে-দরদের প্রকৃত দাম কিছু নেই, তার অধিকাংশই ভূয়া । যদি চাষীদের সত্যিকারের কোনও উন্নতি চাই তা হ’লে তাদের বর্তমানে ধারের সমস্ত ব্যবস্থা বন্ধ ক’রে দিলেই হবে না—প্রয়োজন-মত সরকারী তহবিল হ’তে স্বল্প সুদে টাকা ধার দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে । কোন একতরফ ব্যবস্থা হিতজনক হবে না—একথা প্রত্যেকেই বুঝবেন। সেই কারণে এ সমস্তার সমাধানের জন্য আমাদের দৃষ্টিভঙ্গী অপেক্ষাকৃত ব্যাপক হওয়া দরকার ; তা না হ’লে এর প্রকৃত সমাধান নেই । 8 এই ব্যাপক দৃষ্টিভঙ্গীর কথা থেকে আর একটু দূরে অগ্রসর হওয়া যেতে পারে। এ আইনের মূলগত তাৎপৰ্য্য কি ? বৰ্ত্তমান যুগে চলতে দাও" নীতির পরিবর্জনের সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্র বহুপরিমাণে অর্থনৈতিক এবং সমাজজীবনের ভার গ্রহণ করেছে এবং ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের বুলি আজকাল অসম্ভব হয়ে উঠেছে । সেই জন্যে ব্যক্তিগত অধিকারে হস্তক্ষেপ আজ প্রয়োজনীয় । কিন্তু কৃষি এবং শিল্প ব্যবস্থাও রাষ্ট্রব্যবস্থার অমুরূপ হ’তে বাধ্য এবং রাষ্ট্রব্যবস্থাগুলিকে যেমন ধনিকতন্ত্রী এবং সমাজতন্ত্র। এই দুই প্রধান ভাগে ভাগ করা চলতে পারে, কৃষিব্যবস্থাও ঠিক সেই রকম দুই ভাগে পড়ে। বহু সমৃদ্ধিশালী দেশে কৃষিতে ধনিকতন্ত্র খুব সাফল্যের সঙ্গে চলেছে। কানাডার প্রত্যেক জায়গায় ‘মালিক চাষীদের প্রাধান্য । তারা নিজেরাই জমির মালিক, জমিদার কেউ নেই, এবং তাদের অধীনে দিনমজুর ছাড়া অন্য কোনও স্বত্বাধিকারী নেই এবং প্রত্যেক চাষীরই জমি বহুশত একর। এক্ষেত্রে এই ধনিকতন্ত্র যে যথেষ্ট সাফল্যের সঙ্গে চলেছে একথা অস্বীকার করা যায় না। আবার ইংলণ্ডে জমির প্রত্যক্ষ অধিকার রাষ্ট্রের নয়। কিন্তু দু-চার জন অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞের মতে তাতে কোনও ক্ষতি হয় নি, কারণ ●बांजो లిgt; সেখানে জমিদারেরা যত স্বল্প স্বদে মূলধন সরবরাহ করতে পারেন অন্য কেউ তা পারেন না । কিন্তু অপর দিকে সোভিয়েট তন্ত্র বা এমন কি ডিকৃটেটরী শাসন-ব্যবস্থায় যেখানে কোনও অর্থনৈতিক পরিকল্পনা আছে, সেখানে চাষীদের যা খুশী চাষ করার অধিকার নেই-চাষের সমস্ত ব্যবস্থা নিৰ্দ্ধারণ করার ভার রাষ্ট্রের উপর। তাতে অল্প সময়ের মধ্যে চাষের যে উন্নতি হয়েছে তা শুধু যে বহু সময় বিস্ময়কর তাই নয়, তার ব্যবস্থা আরও যুক্তিসঙ্গত ব’লে মনে হয় । জগতে ধনিকতন্ত্রের ভিত্তি দুৰ্ব্বল হয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে যে-সব দেশে এত দিন পর্য্যস্ত কৃষি বা অন্য বিষয়ে চলতে দাও" নীতি চলে আসছিল, সেখানেও রাষ্ট্র বহু পরিমাণে নাড়াচাড়া মুরু করেছে। ইংলণ্ডে, অষ্ট্রেলিয়ায় বহু নূতন নূতন আইন এর প্রমাণ। আমাদের দেশেও ঠিক সেই অবস্থা। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য হচ্ছে, আমরা সমাজতন্ত্রের দিকে এগিয়ে চলেছি সত্য, কিন্তু এদেশের বর্তমান সমাজব্যবস্থ। ধনিকতন্ত্রের পর্য্যায়েও বহু স্থানে পৌছয় নি। কুষিতে সামস্ততান্ত্রিক ব্যবস্থার ছাপ স্থপরিস্ফুট। কাজেই সমাজবিবর্তনের এক ধাপ থেকে আর এক ধাপে যাওয়ার মধ্যে অন্য দেশের তুলনায় একটা ফাক থেকে যাচ্ছে। তাতে যে কোনও অসুবিধা হ’তে বাধ্য এমন কোনও কথা নেই। তবে আমরা যখন এ রকম আইনগুলি প্রণয়ন করি, তখন সেগুলির সার্থকতা যে কেবল একটি সমস্যার সমাধানে নয় সে কথা স্মরণ রাখা উচিত, কারণ কোনও সমস্যাই অদ্বৈত নয় এবং ঐ আইনগুলি এই সমাজ-বিবর্তনের বাহ প্রকাশ । কোনও কোনও জায়গায় সমাজ-শরীরের উপর এই সাময়িক অস্ত্রোপচারের ফলে দূষিত ক্ষত উৎপন্ন হওয়া অসম্ভব নয়। যেমন চাষীদের নিকট হ’তে ঋণআদায় সম্বন্ধে যথেষ্ট কড়াকড়ি করা হয়েছে, কিন্তু তার ফলে চাষীদের ঋণ পাওয়ার যে-অসুবিধা হয়েছে সেঅসুবিধা দূর করার ভার রাষ্ট্র এখনও উপযুক্ত ভাবে নিতে পারে নি। কাজেই শুধু নেতিবাচক আইনে সাময়িক অস্ত্রোপচারের বেশী কিছু আশা করা চলবে না। তাই যারা আমাদের এই বহুভুর্ভাগানিপীড়িত দেশের কিছু উপকার করতে চান, র্তাদের মনে রাখতে হবে যে, আমাদের সমাজ-শরীরের নব কলেবর অত্যন্ত প্রয়োজন সন্দেহ নেই, কিন্তু তা কেবল নেতিপস্থায় সম্ভব নয়—এর জন্যে কোনও ব্যাপক পরিকল্পনা এবং ব্যাপক দৃষ্টিভঙ্গী থাকা প্রয়োজন এবং তা অনতিবিলম্বেই প্রয়োজন।