পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৭৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দ্বিতীয় পক্ষ স্ত্রীপ্রমথনাথ বিলী দেখ, ওঠ, ওঠ-নূতন বধু নীলিমা শেষরাত্রে স্বামীকে ঠেলা মারিয়া জাগাইয়া দিল । অন্নদাপ্রসাদ বড়ফড় করিয়া উঠিয়া বসিল, শুধাইল—কি হয়েছে নীলি ? নীলিমা বলিল-আমার কেমন ভয় করছে। অন্নদা সাস্তনীর ও জিজ্ঞাসার স্বর মিশাইয়া বলিল— ভয় কিসের ? —বড় দু:স্বপ্ন দেখেছি । —কি বল তো ? বধু বলিতে লাগিল—যেন কে আমার শিয়রের কাছে বসে ছিল ; ঘুম ভেঙে গেল ; আবার ঘুমলামআবার তাকে দেখলাম, লাগ শাড়ী-পরা, গায়ে ফুলের গঠন, যেন সে-ও এক নূতন বউ ! অন্নদা পরিহাস করিয়া নিজেকেই দেখেছ ? বধু বলিল—ন, তার মুখে যেন কত দুঃখের চিহ্ন, এমন বিষন্ন চোখ আমি দেখি নি । এক মুহূর্তের জন্য অন্নদাপ্রসাদের মুখ কালে হইয় গেল কিন্তু প্রদীপের স্তিমিত আলোকে তাহা নীলিমার চোখে পড়িল না। স্বামী বলিল—কিছু ভয় নেই লক্ষ্মীট-আমি আছি, ঘুমোও। ভৗত নীলিমা স্বামীর বুকের কাছে আশ্রয় লইয়া শুইয়া পড়িল । বলিল—ও; তাইলে দিনের বেলায় এ-বিষয়ে আর কেহ কোন কথা তুলিল না বাড়ীতে নূতন গোটাছুই চাকর ছাড়া তৃতীয় আত্মীয়স্বজন কেহ না থাকাতে স্বভাবতই এবিদ কাহাকেও বলিবার সুযোগ নীলিমার ছিল না। কিন্তু রাত্রিতে আবার নীলিমা জাগিয়া উঠিয়া স্বামীকে জাগাইয়া দিল—ওগো শুনছ, ওঁঠ, ওঠ । —আবার কি হ’ল ? অন্নদাপ্রসাদ জাগিয়া উঠিল। —সেই স্বপ্ন আবার দেখেছি । —কি বল দেখি । অন্নদাপ্রসাদ আগের রাতের ঘটনা বোধ হয় ভুলিয়া গিয়াছিল। বন্ধু বলিল—লাল শাড়ী আর ফুলের গহনা পরা কে এক জন যেন আমার শিয়রের কাছে— নীলিমার মুখের অৰ্দ্ধসমাপ্ত বাক্যকে পূরণ করিয়া অন্নদাপ্রসাদ বলিল-চুপ করে বসে ছিল। এই তো— তা থাকুক না । নীলিমা বলিল—না, আজ সে কথা বলেছে । –কথা ? অন্নদা চমকিয়া উঠিল।—কি কথা ? —সে বলছিল, আমাকে ঠেলা মেরে, তোর জায়গায় যা, এখানে কেন ? অন্নদাপ্রসাদ এবারে সত্যই চমকিয়া উঠিল। এমন সময়ে ঘরের প্রদীপ নিবিয়া গেল—অজ্ঞাতসারে তাহারা পরম্পরের কাছে সরিয়া আসিল ; আর সেই শর্তের রাত্রেও দু-জনের কপালে ফোটা ফোটা ঘাম জমিতে লাগিল—অন্ধকার বলিয়া কেহ দেখিতে পাইল না। স্বামী শুষ্ক কণ্ঠে বলিল-ও কিছু না । অমন হয়ে থাকে । --কেন হয় বল না ? অন্নদা আর কিছু বলিবার পাইল না, তাই বলিল— আচ্ছা কাল বুঝিয়ে দেব। সে শুইয়া পড়িল—বধু তাহার কোল ঘেষিয়া শুইল । প্রবীণ পাঠক বোধ হয় এতক্ষণে অনুমান করিতে পারিয়াছেন যে নীলিমা অন্নদাপ্রসাদের দ্বিতীয় পক্ষের বধূ। প্রথম পক্ষের বধু প্ৰলেখা তিন বছর ধর করিবার পরে কয়েক মাস আগে মারা গিয়াছে। অন্নদার পুনরায় বিবাহ করিবার ইচ্ছা ছিল না, কিন্তু না করিবারও কোন কারণ ছিল না ; তাহার বয়স সবে সাতাশ ; সস্তানাদি নাই, প্রচুর টাকাকড়ি আছে। শেষে ইচ্ছায় হোক, অনিচ্ছায় হোক, সে নীলিমাকে