পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৭৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ਾਂ উড়িষ্যায় ও বঙ্গের বিক্রমপুর-ত্রিপুরা অঞ্চলে নৃত্যমূৰ্ত্তির প্রসার ছিল। সারা ভারতবর্ষের মধ্যে দক্ষিণেষ্ট নটরাজের প্রাধান্ত ও মাহাত্ম্য বেশী। মান্দ্রাজ-অঞ্চলের বহু প্রসিদ্ধ তীর্থক্ষেত্রেই মৃত্যমূৰ্ত্তি ছিল বা আছে। চিদম্বরম, গঙ্গাইকোণ্ডচোলপুরম টেঙ্কাশি, তাঞ্জোর, কাঞ্চী, বেলুর, নম্বর, মাছরা প্রভৃতি বহু স্থানে পাথর ও ধাতুর মৃত্যমূৰ্ত্তি পাওয়া গিয়াছে। মাম্রাজ চিত্রশালায় এইরূপ মূৰ্ত্তির সংগ্রহ খুব বড়। দক্ষিণ-ভারত হইতে অনেক মূৰ্ত্তি ভারতের অন্যত্র ও বিদেশে চলিয়া গিয়াছে। এত বিস্তৃত স্থান ব্যাপিয়া এত অধিক মূৰ্ত্তি আর কোথাও পাওয়া যায় নাই । আর নটরাজ সম্বন্ধে এত স্তোত্র ও গ্রন্থ আর কোথাও পাওয়া যায় না। শৈবাগমে শিবের সূত্যের যে আধ্যাত্মিক ব্যাখ্যা দেওয়া হইয়াছে তাঙ্গার ফলেষ্ট বোধ হয় দক্ষিণ দেশে এইরূপ মূর্তির আধিক্য হইয়াছিল। দক্ষিণ-ভারত হইতে সহজেই মৃত্যমূৰ্ত্তি সিংহল পয্যন্ত গিয়াছে । সিংহলের পোলোয়ারুয়া নামক স্থানে নটরাজ মূৰ্ত্তি পাওয়া গিয়াছে। এগুলির শিল্পকাৰ্য্যে ক্রাবিড় দেশের ধারা অনুসরণ করা হইয়াছে। ডা: কুমারস্বামীর মতে এগুলি খ্ৰীষ্টীয় চতুর্দশ শতাব্দীর আগেকার। আগে মনে করা হইত নটমূৰ্ত্তি দক্ষিণ-ভারত ছাড়া অন্যত্র প্রচলিত ছিল না, কিন্তু এখন সে মতের মূল্য কমি। গিয়াছে। এখন দেখা যাইতেছে উত্তর-ভারতের বহু স্থানে ঐরুপ মূৰ্ত্তির পূজা হইত। কোথাও কোথাও মূৰ্ত্তি পাওয়া যায় নাই বটে, কিন্তু মন্দিরের নাম বা স্থানের নামের সঙ্গে ঐরুপ মূরি সংযোগ স্বচিত হয়, যেমন উড়িষ্যায় নাটকেশ্বর, বাংলায় নাটেশ্বর। দক্ষিণের তুলনায় উত্তরভারতে নটরাজ মূৰ্ত্তির সংখ্যা কম হইলেও একেবারে নগণ্য নয়। উড়িষ্যার নান স্থানে কতকগুলি মূৰ্ত্তি পাওয়া গিয়াছে। কোণারক, ভুবনেশ্বর, ময়ুরভঞ্জ রাজ্যের প্রাচীন রাজধানী খিচিঙে এইরূপ মূৰ্ত্তি দেখা গিয়াছে। উড়িষ্যা হইতে সংগৃহীত একটি অপূৰ্ব্ব নটরাজ মূৰ্ত্তি ব্রিটিশ মিউজিয়ামে স্বান পাইয়াছে। কোণারকে নিরাকার মঠ নামে অবধূত সম্প্রদায়ের একটি প্রতিষ্ঠান আছে। এই মঠের পশ্চিম দিকে পাথরের তৈয়ারী একটি শিবমন্দির আছে, উহ নাটকেশ্বর বলিয়া খ্যাত। এখন এই মন্দিরে কোন টি শিবের মৃত্যমূৰ্ত্তি Նօծ হইয়াছে। উড়িষ্যায় প্রাপ্ত মূৰ্ত্তিগুলি পাথর দ্বারা নিৰ্ম্মিত । বাংলা দেশের বিক্রমপুর ও ত্রিপুর অঞ্চলে কয়েকখানি মৃত্যমূৰ্ত্তি পাওয়া গিয়াছে। এইগুলি পাথরের তৈয়ারী। এই মূৰ্ত্তিগুলির কতকগুলি বিশেষত্ব আছে, তাই আমরা পরে আলোচনা করিব । বিক্রমপুরে রামপালের সংলগ্ন বা নিকটবৰ্ত্তী বল্লালবাড়ী, শঙ্করবন্ধ, রাণীহাটী, কলিকাল, চুরাইন প্রভৃতি স্থান হইতে অভয় বা ভয় অবস্থায় কয়েকখানি মূৰ্ত্তি উদ্ধার করা হইয়াছে। রামপালের কাছে একটি গ্রামের নাম নাটেশ্বর। এখানে কোন মুক্তি পাওয়া যায়ু নাই, কিন্তু নাম হইতেই মনে হয় এখানেও নৃত্যমূৰ্ত্তি ছিল। ওখানে ধে মন্দির ছিল তাহা দেউল' শব্দ ব্যবহৃত হওয়াতেই বুঝা যায়। ত্রিপুরা জেলার ভারেল্লা গ্রামে আবিষ্কৃত একটি লিপিযুক্ত নৃত্যমূৰ্ত্তি ডাঃ নলিনীকান্ত ভট্টশালী আলোচনা করিয়া একটি নূতন রাজার নাম পাইয়াছিলেন। এই মূৰ্ত্তিটি ভগ্ন। এই জেলার নাটম্বর নামক গ্রামে এখনও নটরাজ মূৰ্ত্তি পূজিত হইতেছে। ঐযুক্ত অজিত ঘোষের নিকট জানিতে পারা গেল তিনি চুচুড়ার নিকটে অতি জীর্ণ নটমূৰ্ত্তি দেখিয়াছিলেন। কাশীতে একটি ভগ্ন নটরাজ মূৰ্ত্তি পাওয়া গিয়াছে। কানিংহাম বহু পুৰ্ব্বে বুদ্ধগয়ার কাছে একটি নৃত্যশীল মহাকাল বা শিবের মূৰ্ত্তি দেখিয়াছিলেন। নটরাজ মূৰ্ত্তি যে ভারতের সীমার বাহিরেও প্রচলিত ছিল তাহার পরিচয় আমরা বহির্ভারতের কোথাও কোথাও পাই। ইন্দো-চীনের অন্তর্গত প্রাচীন চম্পা রাজ্যের মধ্যে মাইসন মন্দির-শ্রেণীর একটি অংশে ভগ্ন নটরাজ মুঞ্জি পাওয়া গিয়াছে । & নটরাজ মূর্তির বিষয় লইয়া এ-পর্য্যস্ত যে আলোচনা হইয়াছে তাহার ইতিহাসও কৌতুহলোদ্দীপক। নটরাজের মূৰ্ত্তি ও তত্ত্ব লইয়া দেশে-বিদেশে এবং পণ্ডিত-অপণ্ডিতের দ্বারা যত আলোচনা হইয়াছে, এরূপ বোধ হয় আর কোনও হিন্দু দেবতার