পাতা:প্রবাসী (একত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৭১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

- ৫ম সংখ্যা } সেই হোটেঙ্গের ছোট্ট বালকটর সঙ্গে । আজ তাহার প্রন্থ অনেক পোলাও, পরোট, চাট্‌নী ইত্যাদি করিয়া পাঠাইয়াছে। দাম লইল মোট ২২ টাকা মাত্র । ছেলেটিকে সাতটা পয়সা বকশিস দেওয়াতে সে বলিল, “কাগজে ইহা লিখিয়া দিও না, তাহা হইলে মনিব কাড়িয়া লইবে ।” খাওয়া-দাওয়ার পর আবার বাহির হুইলাম বাজারে কিছু জিনিষ কিনিতে। তামাকু বাজারে ছিটের কাপড়ের দোকান। গলির দুধারে উচু ভিতের উপর ছোট ছোট দোকান। কেনা-বেচা যাওয়া-আসা সবই সেই পথের উপর । কাপড় রং করার কাজও খানিকটা পথে খানিকট ঘরে চলিতেছে। পথগুলি দেপিয়া আজ কাশীর পুরানো গলির সঙ্গে সাদৃপ্ত লাগিতেছিল। দিনের আলোতে মাহুষের মুখগুলি আজ একটু স্পষ্ট দেখিলাম । এদেশের মানুষের রূপ আছে । স্ত্রীপুরুষ কাহারও অতিশীর্ণ কি অতিস্থল অমুস্থ চেহারা সহজে চোখে পড়ে না । মেয়েদের মুখশ্ৰী ছবির মত, প্রশস্ত ললাট, উন্নত নাসা, আয়ত চক্ষু কত যে দেখিলাম তাহার ইয়ত্ত নাই । ইউরোপের জগদ্বিখ্যাত মুন্দরী অভিনেত্রী ও নর্তকীদের অপেক্ষ ইহাদের সহজী অনেক বেশী । রেল ষ্টেশনের পুরুষ ভৃত্যদেরও এমন স্বত্র চেহারা, উন্নত দেহ ও গৰ্ব্বিত পদক্ষেপ যে তাহাদের চাকর বলিয়া ফরমাস করিতে সঙ্কোচ হয় । একেবারে কালো রং দেখিয়াছি বলিয়া মনে পড়ে না । এখানকার মাড়োয়ারীদের যে শুধু স্থল বপুর অভাব তাহা নয়, অসভ্যতারও অভাব। পট্টিতে দোকানে দোকানে বুরিয়াও দেখিলাম তাহারা আশ্চৰ্য্য ভদ্র। পাগড়ীর কাপড় ও ওড়ন রং করা যোধপুরেরই কাজ । শাড়ী এদেশের মেয়ের পরে না, তবে আমেদাবাদ, বোম্বাই প্রভৃতি জায়গায় গুজরাটি মেয়েদের জন্য ইহারাই ছাপা শাড়ী সরবরাহ করে। সব ১০ হাত লম্ব ও ৫২ ইঞ্চি বহর । আমি শাড়ী কিনিব শুনিয়া টাঙ্গার চারিপারে পনেরকুড়ি জন কাপড়ওয়ালা বস্তা বস্ত কাপড় লইয়া ভিড় করিয়া দঁাড়াইয়া গেল। দর্শকও কম জুটল না। কত রকম স্থদের স্বন্দর নক্সা ও রঙের কাপড়। কিন্তু দুঃখের . বিষয় পাগড়ী প্রভৃতির কাপড়ে অনেক বিলাতী নক্সাও .۹۹-------8 যোধপুর Wh99 ঢুকিয়াছে। আমিকিনিলাম মাত্র দু-তিন থানা কাপড় । একজন দোকানদার যাচিয় তাহার ঠিকানা দিল । অন্তদের কাছে চাহিয়াও পাইলাম না। কার্ডের ধার তাহার ধারে না । কয়েকটা গহনার দোকানে ভাল গহনা দেখিতে চাওয়াতে তাহারা বিলাতী প্যাটার্ণের স্কুল দুই-একট। দেখাইল । আমাদের বাংলা দেশের গহনা দেপিয়া স্যা করার মুগ্ধ হইয়া ভারিফ করিতে লাগিল। কিন্তু তাহদের দেশী জিনিষের ধে কিছু মূল্য আছে তাহা তাহারা জানে না। অনেক কষ্ট্রে বুঝাইয় একটা যোধপুরী ধুক্‌ধুকি বাহির করা গেল। জয়পুরের দোকনদাররা গাৰ্ণেট, রুবি, ডায়মগু, য়্যাম্বার, পেণ্ডেণ্ট, নেক্লেস কত হাজার রকম ইংরেজী নাম হড় হড় করিয়া বলিয়া যায়-এখানের জহুরীদের সাচ্চ আর ঝুটা ছাড়া আর কিছু বুঝানই শক্ত। এটা যে দোকান বাজার, ব্যবসার দেশ এখনও ইয় নি তাহ! সহজেই বোঝা যায়। জয়পুর অনেক দিক দিয়া অনেক রকম বাজারের কেন্দ্র। যোধপুরের দোকান ঘরগুলি অত্যন্ত ছোট, দরজা পৰ্য্যস্ত এত নীচ ও সঙ্কীর্ণ যে খাচা মনে হয় । এইপানে সোনারূপার বার হাতে করিয়া জহুরীর পরস্পরকে দেখাইতেছে ; গলিতে দাড়াইয়াক্ট দেপাশুনা কথাবা"। চলিতেছে। দিনে দেখিয়া বুঝিলাম এপানে পাথরের রংটা সেকেলে বলিয়া অনেকের অপছন হুইয়া যাইতেছে। অনেক বাড়িকেই পাথরের সাদা চুনকাম করিয়া ভদ্র করা হইয়াছে। গোটাকয়েক ছবি কিনিয়া আমরা ফিরিয়া ষ্ট্রেশনে চলিলাম। ছবি এখানে ভাল পাগুয়া ধায় না। টাঙ্গাচালক বালক সারাদিনের ভ্রমণের জন্য ২৮y লইয়া প্রস্থান করিল। রাজপুতানায় চিতোর উদয়পুর দেখিবার ইচ্ছা ছিল, কিন্তু মোহুেন-জে-দাড়ে। না দেখিয়া ফিরিব না বলিয়া এবারকার মত সে ইচ্ছা ছাড়িতে হইল। সন্ধ্যা ৬টায় যোধপুরের ট্রেন ধরিয়া লুনীর দিকে চলিলাম । ট্রেন ছাড়িবার পূৰ্ব্বে মিউজিয়মের অধ্যক্ষ বিশ্বেশ্বরনাথ রাও প্রভূতি কয়েকজন পরিচিত ভদ্রলোকের সাক্ষাৎ মিলিল । তাহারা দুঃগ করিতে লাগিলেন যে র্তাহারা থাকিয়াও আমাদের যোধপুর দেখানোর ভার লইতে পারিলেন না। ভবিষ্ণুতে কখনও গেলে ভাল করিয়া দেখিবার সুবিধাটা ছাড়িব না। এবারকার মত অনেক জিনিষ নাদেখার ও ন-বোঝার দুঃখ লইয়াই ফিরিতে হইল ।