পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩য় সংখ্যা ] ম্পর্শমণি ○bなy সাঙ্খ্যদর্শনের পরেই কণাদ ঋষির বৈশেষিক সিদ্ধাস্তের বিষয় জানা যায়। ইমিও পদার্থের উৎপত্তির সোপানাবলি সাঙ্খ্যদর্শনের স্তায় দেখাইয়া গিয়াছেন। ইহঁার মতের বিশেষত্ব, ইহার অণুর সংজ্ঞায় পাওয়া যায়। ইহার মতে অণুর বিশ্লেষণ অসম্ভব, অর্থাৎ অণুকে বিভক্ত করা যায় না। এই পরমাণুবাদ দুই সহস্ৰ বৎসর পরে ইয়োরোপে ডান্টন নামক ইংরেজ রাসায়নিক দ্বারা পুনর্বার বিবৃত হয়, এবং তাহা দ্বারা আধুনিক রসায়নের নবজীবন-লাভ হয়। কণাদ ঋষি অণু কেমন করিয়া অন্য অণুর সহিত মিলিত হইয়া স্কুল হইতে স্থূলতর আকার ধারণ করে, তাহারও বর্ণনা করিয়াছেন। এইরূপে যুক্ত অণু ত্রি-অণুক-সমষ্টি (অর্থাৎ পরস্পর সংলগ্ন তিনটি যুগল অণু) রূপ ধারণ করিলে পরে মনুষ্যচক্ষুর গোচর হয়। চরকের রসায়ন কেবলমাত্র দ্রব্যগুণ ও ঔষধি-সংক্রাস্ত ছিল। চরক অনুসারে, “যাহা কিছু দীর্ঘ জীবন-স্মৃতিশক্তি, স্বাস্থ্য, বল ইত্যাদি বৰ্দ্ধন করে, তাহাই রসায়ন ।” স্বশৃঙ্খলভাবে বৈজ্ঞানিক তথ্য পর্যবেক্ষণের কোনও বিশেষ লক্ষণ চরকে পাওয়া যায় না। ইহা অসংলগ্ন ক্ষুদ্রক্ষুদ্র বৈজ্ঞানিক নিবন্ধ এবং ঔষধ প্রস্তুত-করণের ব্যবস্থাপত্রের সংগ্ৰহ-বিশেষ । চরক স্বয়ং বাস্তবিক কোন ব্যক্তি-বিশেষ ছিলেন বা কাল্পনিক ( বা পৌরাণিক ) নাম মাত্র, সে-বিষয়ে কোনওপ্রকার ঐতিহাসিক প্রমাণ পাওয়া যায় না। তবে বাস্তব বা কাল্পনিক, যাহাই হউক, ঐ-নামে পরিচিত গ্রন্থ যে ঐতিহাসিক বস্তু, সে-সম্বন্ধে কোনও সন্দেহ নাই। বুদ্ধদেবের সহস্ৰ বৎসর পূর্ববর্তী কালে ইহা লিখিত হয়। চরকের পর হিন্দু-রসায়নে স্থশ্ৰতের আগমন হয়। স্বশ্ৰত, চরক অপেক্ষা অনেক অধিক স্বশৃঙ্খল এবং বৈজ্ঞানিকভাবে লিখিত । রাসায়নিক বস্তু-অাদির পরিচয়, প্রস্তুত-করণ, দ্রব্যগুণবিবরণ ইত্যাদি স্থশুতে যথেষ্টই পাওয়া যায়, এবং অধিকাংশ স্থলে এইসকল ক্রিয়া-প্রক্রিয়া সমসাময়িক পাশ্চাত্য (গ্রীক এবং ঈজিপ্টীয় ) রাসায়নিকদিগের প্রথা অপেক্ষা অনেক অংশে শুদ্ধ । স্বপ্রতের যে ভাষ্য এখন প্রচলিত, তাহ অনেকের হইয়া পড়ে । মতে বিখ্যাত বৌদ্ধ রাসায়নিক নাগার্জন-লিখিত। এই মহাজ্ঞানী রাসায়নিকের প্রথা এবং মতাদি এদেশে এখনও প্রচলিত আছে। দক্ষিণ দেশে অষ্টাঙ্গহৃদয়-লেখক বাগ ভটের মতই শুদ্ধ বলিয়া গৃহীত হয়। ঐ সময়ে হারীত, ভেল, পরাশর ও অন্যান্ত রাসায়নিক এবং চিকিৎসাশাস্ত্রকারের নাম বাগ ভটের লেখায় পাওয়া যায়। কিন্তু দুঃখের বিষয় আমাদের দেশে এই জ্ঞানীগণের নাম ভিন্ন অন্য কোনরূপ চিহ্ন এখন বর্তমান নাই। স্বশ্ৰতে পারদ বা রসের প্রয়োগ-সম্বন্ধে বিশেষ কিছু নাই। অতি প্রাচীন কাল হইতে খৃঃ ৯ম শতাব্দী পৰ্য্যস্ত রসায়নের বিস্তারের পরিচয় এইসকল রসায়ন ও আয়ুৰ্ব্বেদমিশ্রিত গ্রন্থাবলীতে পাওয়া যায়। এই সময়ের সকল পুস্তকাবলীই প্রায় সম্পূর্ণভাবে চরক, স্থশ্রত এবং নাগার্জনের মতে পরিপূর্ণ। খৃঃ দশম শতাব্দী হইতে ১১শ শতাব্দীর মধ্যে দুইজন মাত্র রাসায়নিকের নাম পাওয়া যায়। ইহাদের সময়ে চিকিৎসা-শাস্ত্রে অল্লে-অল্পে নূতন মত আসিয়া উপস্থিত হয়। এই দুইজন সিদ্ধযোগলেখক বৃন্দ এবং চক্ৰপাণি। তৎপরে এদেশে তন্ত্রের যুগ উপস্থিত হয়। সে সময়ের অনেক পুস্তকাদির নানা সংস্করণ এখনও বর্তমান। এবং সেইসকল পুস্তক হইতে অনেক প্রাচীন হিন্দু-রাসায়নিক তথ্যাদি পাওয়া যায়। র্যাহারা এ-বিষয়ে বিশদভাবে কিছু জানিতে চাহেন, তাহদের আচাৰ্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়-লিখিত “হিন্দু-কেমিষ্ট্ৰী”নামক ইংরেজী পুস্তক পাঠ করা উচিত। তন্ত্রের যুগ রসায়নে পারদের যুগ বলিলেও চলে । পারদ সৰ্ব্বরোগবিনাশকারী, পারদ হীনধাতুশোধনকারী ; এক কথায়, পারদ রাসায়নিকের ব্রহ্মাস্ত্ররূপে তন্ত্রে এবং তান্ত্রিক যুগের পুস্তকাদিতে পরিচিত। তন্ত্র-যুগের পরে রসায়নের বিশেষ চর্চা ছিল, এরূপ প্রমাণ পাওয়া যায় না। রসায়ন, একদিকে আয়ুৰ্ব্বেদিক ক্রিয়া-প্রক্রিয়া এবং অন্ত দিকে মন্ত্ৰ-তন্ত্ৰ, ইন্দ্রজাল ইত্যাদিতে দ্বিভক্ত হইয়া ক্রমেই অধোগামী বৈদিক যুগের মতবাদ এবং বৌদ্ধ যুগের ব্যবহারিক রীতি, ইহারই চৰ্ব্বিত্বচৰ্বণ রসায়ন