পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আসামে আহোম-রাজত্ব ঐ সূর্য্যকুমার ভূঞা গত দশ বৎসর যাবৎ বঙ্গের সাহিত্যু-ক্ষেত্রে বিদ্বজনের আলোচনায় আসাম এবং অসমীয়া স্থান পাইতেছে। যথার্থত: বলিতে গেলে বঙ্গদেশে “আসামের আবিক্রিয়া” আরব্ধ হইয়াছে। ইহার পূৰ্ব্বে বঙ্গদেশের অনেক স্থানে আসাম এবং অসমীয়া-সম্বন্ধে একটা কিভূতকিমাকার ধারণা ছিল। এমন কি, বিজ্ঞানের এই চরম উন্নতির সময়ে, এই বিংশতি শতাব্দীও প্রারম্ভে অনেক বঙ্গদেশীয় শিক্ষিত ভদ্রলোক দৃঢ় বিশ্বাস করিতেন যে, আসামীরা যাদু জানে, তন্ত্ৰ-মন্ত্ৰ পড়িয়া মাতুষকে ভেড়া বানাইয়। স্বগৃহে বন্দী করিয়া রাখিতে পারে। আসামের গৌরব-সমৃদ্ধি তাহাদের দৃষ্টিপথে সম্যক্ পতিত হয় নাই। র্তাহার। তখন মনে করিতে পারিতেন না যে, বর্তমান আসাম অর্থাৎ পৌরাণিক যুগের স্বপ্রসিদ্ধ কামরূপ বা প্রাগজ্যোতিষপুরে রীতিমত অনাদিকাল হইতে আর্য্য-সভ্যতার এক বিপুল প্রবাহ বহিতেছে। র্যাহার আসামে তীর্থযাত্রী হইয়৷ এখানে আসিতেন, বা যাহারা এখানে বহুকাল বসতি করিতেন তাঙ্গরাও আসাম-সম্বন্ধীয় বহুবিধ অলীক কথা বঙ্গদেশে প্রচার করিড়েন। সেই সময়কার আসামপ্রবাসীর লিখিত গ্রন্থাবলীর কাছে আরব্য উপন্যাসের একাধিক সহস্র রজনীকেও হার মানিতে হইত। দুঃখের বিষয় এই যে, ধে বাঙ্গালী মনস্বীগণ ব্যাবিলন, আসিরিয়া, নিনেভা-আদি পৃথিবীর প্রাচীন ইতিবৃত্ত উদঘাটনে নিযুক্ত থাকিতেন, তাহারাও পাশ্ববৰ্ত্তী আৰ্য্য-সভ্যতার গৌরব-ভূমি প্রকৃতির কুত্ত্বকানন এই আসামের প্রতি দৃকপাতও করিতেন না। র্তাহারা কখনও বৈজ্ঞানিক প্রণালীতে আসামের ইতিবৃত্ত এবং সামাজিক প্রথাদির আলোচনা করিতেন না । তাই এই দুই জাতির মধ্যে একটু রেষারেষি ও বিদ্বেষভাব প্ৰজলিত ছিল । উপন্যাস-লেখকেরাও কোন প্রতিকুল নায়কের কপটতা বা শঠতা হইতে ষ্ঠাহীদের প্রধান নায়ক বা নাঞ্জিকাকে উদ্ধার করিবার জন্য তাহাকে আসামে আনিয়া ম্যালেরিয়া বা কালাজরে ভোগাইয়া মারিতেন। আবার যদি লেখকের এমন কোনও উপনায়ুক তৈয়ার করিবার প্রয়োজন ঘটিত যাহাব দ্বারা প্রধান নায়ককে বিপ২-সঙ্কুল অবস্থা হইতে উদ্ধার করা যাইতে পারে তাহা হইলে উহাকে আগে ভোজ-বিদ্যার অ্যাপ্রেণ্টিসগিরির জন্য তাহারা আসামে পাঠাইতেন। বঙ্গীয় জন সমাজ আসামকে মন্ত্র-পীঠ বা যোগ-ভূমি বলিয়াই জানিতেন । গত কয়েক বৎসরের মধ্যে এইরূপ ভাবের যথেষ্ট পরিবর্তন দেখিতেছি। খৃষ্টাব্দ ১৯০৯ সনে বঙ্গভাষাভাষী কয়েকজন সহৃদয় মহানুভব ব্যক্তি স্থির করিলেন যে, বঙ্গীয় সমাজকে আসাম সম্বন্ধে অন্ধকারে রাখা আর বিধেয় নহে । বঙ্গ-সমাজের সম্মুখে আসামের ইতিবৃত্ত ও প্রাচীন গৌরবরাশি তুলিয়া ধরিতে হইবে। এই উদ্দেশ্বে বঙ্গীয় সাহিত্যঅমুশীলন-সভা গৌহাটিতে স্থাপিত হয় । তাহাঁদের যত্নে আসাম-সম্পৰ্কীয় অনেক বিষয় এই সভাতে আলোচিত হয় এবং সেই প্রবন্ধাবলী বঙ্গের সাময়িক এবং মাসিক পত্রিকায় প্রকাশিত হয় । এখানে বলা আবশ্বক ধে, এই শুভ অনুষ্ঠানের পুরোহিত উত্তর-বঙ্গ সাহিত্য-সম্মিলনীর গৌরীপুরের অধিবেশনের সভাপতি পণ্ডিত শ্ৰীযুক্ত পদ্মনাথ ভট্টাচাৰ্য্য বিদ্যাবিনোদ । আসাম-সম্বন্ধীয় অনেক প্রবন্ধ ইংরেজী এবং বাংলা ভাষায় তিনি নিজে রচনা করিয়া সাময়িক পত্রিকায় প্রকাশ করেন। র্তাহার চেষ্টায় পুণ্যতীর্থ পরশুরামকুণ্ডে আজ হাজার হাজার যাত্রী প্রত্যহ যাইতে পারিতেছে। উক্ত সাহিত্য-অনুশীলনী সভার সমবেত উদ্যমে বঙ্গীয় সমাজে আসামের আবিষ্কার ঘটিয়াছে। দৃষ্টান্তস্বরূপ বলিতে পারি— সতী জয়মতীর কাহিনী । আজ ইহা বঙ্গীয় সমাজে সীতা, সাবিত্রী, দময়ন্তী প্রভৃতির পুণ্য-কাহিনীর ন্যায় সমাদৃত হইয়াছে । বঙ্গীয় পণ্ডিতমণ্ডলী তখন হইতে আসামের সম্বন্ধে তথ্য জানিবার জন্য ব্যাকুল হইয় পড়িয়াছেন ।