রাজপথ শ্ৰী উপেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায় { २v ] সকালে জয়ন্তীর সহিত কথোপকথনের পর স্বমিত্র নিজ কক্ষে প্রবেশ করিয়া একবার চতুর্দিকে চাহিয়া দেখিল । কয়েক দিন হইল প্রমদাচরণ তাহাকে দুইখান। উৎকৃষ্ট খদ্দর আন৷ইয়া দিয়াছিলেন, তাহ দিয়া সে মনের মত করিয়া ঘরটির সংস্কার করিয়া লইয়াছিল। যেখানে যাহা কিছু অপরিচ্ছন্নতা ছিল, সে গদ্ধর দিয়া সমস্ত ধুইয়। মুছিয়া বিদূরিত করিয়াছিল। দ্বারে মূল্যবান ক্রেটনের পদার স্থলে খন্দরের পর্দা, গবাক্ষে বর্ডার ও কুঁচি দেওয়া সূক্ষ্ম বিলাতী ফ্রানের পরিবৰ্ত্তে থদ্বরের ফ্রীন, শয্যায় বিলাতী শীটিংএর পরিবর্ষে খন্দরের চাদর, টেবিলে খন্দরেব টেবিল-ক্লথ ; আলনায় থদ্বরের শাড়ী, সেমিজ ও জামা ; সংক্ষেপে, কক্ষের এমন কোনও স্থল দৃষ্টি-গোচর ছিল না যেখানে বিদেশী বস্ত্র খদ্বরের দ্বারা অপসারিত হয় নাই । কক্ষের মধ্যস্থলে দাড়াইয়া স্তিমিত আলোকে স্নিগ্ধ এই শুভ্ৰ শুচিতার দিকে চাহিয়া চাহিয়। সুমিত্রার চক্ষে জল আসিল । বোটানিকাল গার্ডেনের ধটনার পর হইতে বৰ্ত্তমান মুহূৰ্ত্ত পৰ্য্যন্ত সমস্ত ঘটনাবলী পরম্পরাক্রমে তাহার মনে একটা স্বপ্নের মত উদিত হইতে লাগিল, যাহা আজ ভাঙ্গিবাস উপক্রম করিয়াছে । কয়েক মাস ধরিয়া নানাবিধ ক্রিয়াপ্রতিক্রিয় এবং ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়া যে অলৌকিক অবস্থান্তরে সে উপনীত হইয়াছে এই বিরুদ্ধ-বিমুখ গৃহে মরুদ্বীপের মত তাহার নিষ্ঠা-পূত কক্ষ-তপোবনে আজ সহসা সেই রূপান্তরিত অবস্থার স্বরূপ দৰ্শন কবিয়া এক দিকে যেমন একটা অনিৰ্ব্বচনীয় মুখে তাহার হৃদয় ভরিয়া উঠিল, তেমনি অপর দিকে মাতৃঋণরূপে যে উৎপীড়ন আজ হইতে এই সদ্য-রচিত তপোবন বিধ্বস্ত করিতে উদ্যত হইল তাহার কথা স্মরণ করিয়; তাহার সমস্ত মন বিতন্ত্রিত হইয়া গেল । মেঘ-মেদুর প্রভাতের কক্ষের এক কোণে আবলুস কাষ্ঠের একটা ত্রিপদের উপর সুরেশ্বরের দেওয়া চত্বকাট ছিল । স্বমিত্রা ধীরে ধীরে তথায় উপস্থিত হইল এবং ক্ষণকাল প্রগাঢ় নতনেত্ৰে , তৎপ্রতি চাহিয়া থাকিয়া হাতলটা ধরিয়া একবার ঘুরাইল। তৈল-নিষিক্ত স্নিগ্ধ যন্ত্র ভ্রমর-গুঞ্জনের মত মুদ্র-গভীর ধ্বনি করিয়া উঠিল, কিন্তু স্বমিত্রার কর্ণে তাহা করুণ ক্রমনধ্বনির মত শুনাহল । মনে হইল, চরকার মধ্যে কাহার কণ্ঠস্বর প্রবেশ কfরয় যেন বিলাপ করিতেছে । বলিতেছে— "বন্ধ কর, বন্ধ কর । যাই চলিবে না তাহাকে চালাইয়৷ লাঞ্ছিত করিয়ে ন৷” সুমিত্র। তাড়াতাড়ি চর্কার হাতলটা ছাড়িয়া দিল । তাহার পর চবৃকার দক্ষিণ কোণে খোদিত 'স্থ' অক্ষরের প্রতি দৃষ্টি পড়ায় নিণি মেষ-নেত্রে তৎপ্রতি চাহিয়৷ ক্ষণকাল দাড়াইয়া রহিল। কিছুদিন পূর্বে এই অক্ষরটি লইয়। মাধবার সহিত তাহার যে রচন্তাপাপ ইয়াছিল তাহ মনে পড়িল, এবং তৎপরে এই অক্ষরটিকে বীজ মস্ত্রের মত গ্রহণ করিয়া বাধাবিয়ের বিরুদ্ধে কিপ্রকারে সে তাহার জীবন-গতিকে নিয়ন্ত্রিত করিয়াছে তাহী স্মরণ কfরয় তাহার দুঃখদীণ-নেত্ৰ হইতে টপ টপ করিয়া অএ ঝরিয়া পড়িতে লাগিল। বস্ত্রাঞ্চলে চক্ষু মুছিয়া নত হইয়া চলুকায় মাথা ঠেকাইয়া প্রণাম করিতে গিয়া স্থমিত্র মুদিত নেত্রে বারম্বার যাহাকে প্রণাম কfরল সে তখন আলিপুরের জেলখানায় একান্তমনে বন্দী জীবনের কঠোর কৰ্ত্তব্য পালন করিতেছিল । দ্বীপান্তরের আসামী যেমন জাহাজে উঠিয়া সমস্ত মনপ্রাণ দিয়া শেষবারের মত স্বদেশের আকাশ, বাতাস, গাছপালাকে অঁাকড়িয়া ধরে, তেমনি করিয়া স্বমিত্রা নিজের প্রিয়বস্তু ও বিযয়গুলিকে বহিৰ্বিন্দ্রিয় ও অন্তরিক্রিয় দিয়া অধিকার করিয়া সমস্ত দিন অতিবাহিত করিল। কিন্তু জাহাজ সাগর-বক্ষে উপস্থিত হইলে দিগন্ত-বিস্তৃত জলরাশির মধ্যে জন্মভূমির আকর্ষণ so প্রবাস-ভূমির বিপ্রকর্ষণ উভয়ই যেমন লুপ্ত হইয়া যায়,
- "".
رش ... o. وي **