পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

- গোতমের সাধনা ও সিদ্ধি ©bᏉᏬ বৃষ্টি নিপতিত হইতেছিল, বিদ্যুৎ চমকিতেছিল, অশনি নিপতিত হইতেছিল, দুই কৃষক-ভ্রাতা ও চারিটি বলীবর্দ বিনষ্ট হইয়াছিল—আপনি এসমুদায় দেখেনও নাই, শুনেনও নাই!” “হে আয়ুষ্মান ! ঠিক তাহাই ।” ( মহানি, ৪৩০-৩২ ) এই ঘটনা হইতে বুঝা যাইতেছে, গোতম কি-ভাবে ধ্যানে নিমগ্ন হইয়া থাকিতে পারিতেন । ( 히) মনের উপর গোতমের এতই ক্ষমতা ছিল যে, তিনি ইচ্ছামাত্রই ধ্যানে মগ্ন হইতে পারিতেন। তিনি নিজেই বলিয়াছেন – “আমার যখনই ইচ্ছা হইত তখনই আমি...প্রথম ধ্যানে ...দ্বিতীয় ধ্যানে...তৃতীয় ধ্যানে...চতুর্থ ধ্যানে মগ্ন হইয়া বিহার করিতাম” (সংযুত্তনিকায়, কস্সপসংযুক্ত, ৯ ) । আর্য্য অষ্টাঙ্গিক মার্গ ক । আবিষ্কার সৰ্ব্বপ্রকার আশ্রব (সব্বাসব ) বিনাশ করিয়া, চিত্তকে শাস্ত ও সমাহিত করিয়া, গোতম ধ্যানে নিমগ্ন হইতেন। এই অবস্থায় তাহার নিকট সত্য প্রকাশিত হইয়াছিল, সমুদ্রা সন্দেহ বিদূরিত হইয়াছিল এবং নিৰ্ব্বাণলাভের পথ আবিষ্কৃত হইয়াছিল। পথ আবিষ্কারের বিষয়ে তিনি বলিয়াছেন :– e আমি চক্ষুলাভ করিয়াছি, আমি জ্ঞানলাভ করিষ্কাছি প্রজ্ঞালাভ করিয়াছি, বিদ্যালাভ এবং আলোকলাভ করিয়াছি । ( সংযুক্তনিকায়, ১২৬৫।১০,১৮) । তিনি ষে-জ্ঞান লাভ করিয়াছিলেন তাহা অপরোক্ষ, প্রত্যক্ষ ও সাক্ষাৎ জ্ঞান। তিনি ইহাকে প্রজ্ঞা, বিদ্যা ও আলোক নাম দিয়াছেন। এসমুদ্রায়ের অর্থ এই যে, তিনি যুক্তি-তর্ক দ্বারা এই পথ উদ্ভাবন করেন নাই, এপথ স্বকপোল-কল্পিত পথ নহে। ইহাতে কেহ-কেহ মনে করিতে পারেন, ਚੀ বুঝি গোতমের ধৰ্ম্ম কেবল বিশ্বাসের ধৰ্ম্ম, এ-ধৰ্ম্মে বুঝি যুক্তি-তর্কের স্থান নাই। কিন্তু এ প্রকার বিশ্বাস ভিত্তিবিহীন। গোতম শিস্যগণকে উপদেশ দিবার সময় ভূয়োভূয়: যুক্তি-তর্কের অবতার" । করিতেন ; যুক্তি-তর্ক দ্বারা বুঝাইতেন, যে,তাহার প্রদর্শিত ধৰ্ম্ম উপকারী, উপযোগী, যুক্তিযুক্ত ও উপাদেয় ; এবং শিষ্যগণকে এই পন্থা অবলম্বন করিবার জন্ত উপদেশ দিতেন ( ব্ৰহ্মজাল স্বত্ত, ১ ) । কিন্তু এমন অনেক তত্ত্ব আছে, যাহা তর্কগম্য নহে ( অতকাবচার, দীঘ, ১২৮ ; মজ, ৭২ ; সংযুক্ত ৬১ ; বিনয়, ১৫৩)। এসমুদায় সাক্ষাৎ ও অপরোক্ষভাবে অনুভব করিবার বিষয়। নিৰ্ব্বাণ-ধর্শ্বের অনেক তত্বই এইপ্রকার ; বুদ্ধ দিব্য আলোকে, দিব্য চক্ষু দ্বারা এইসমুদায় সত্য দর্শন করিয়াছিলেন ; বুদ্ধ অনেক স্থলে এইরূপ বলিয়াছেন । খ। প্রাচীন পথ বুদ্ধ যে-পথ দেখাইয়াছেন তাহা জগতের পক্ষে নৃতন। কিন্তু গোতম বলিয়াছেন যে, ইহা পুরাতন পথ ; প্রাচীন কালের বুদ্ধগণ এই পথই অবলম্বন করিয়াছিলেন এবং তিনি সেই প্রাচীন পথই নূতন আবিষ্কার করিয়াছেন। এবিষয়ে তিনি এই উপমা দিয়াছেন – “মনে কর, একব্যক্তি অরণ্যে ভ্রমণ করিতে করিতে এক পুরাতন মার্গ, প্রাচীন পথ দেখিতে পাইল । প্রাচীন কালে এই পথে মহন্তাগণ যাতায়াত করিত। তখনই সেই ব্যক্তি সেই পথ অবলম্বন করিয়া গমন করিতে লাগিল । যাইতে যাইতে দেখিতে পাইল যে, এক পুরাতন নগর, এক পুরাতন রাজধানী রহিয়াছে ; প্রাচীনকালে বহু মানব এই স্থলে বাস করিত। এই নগর আরাম, উপবন ও পুষ্করিণী-সংযুক্ত এবং প্রাচীর দ্বারা বেষ্টিত। তখন সেই ব্যক্তি রাজা বা রাজমন্ত্রীর নিকট উপস্থিত হইয়া সমুদায় ঘটনা বর্ণনা করিল। তখন রাজা এবং রাজমন্ত্রী সেই নগরকে উদ্ধার করিলেন এবং কালে সেই নগর বহুজনাকীর্ণ, সমৃদ্ধিযুক্ত, বদ্ধিষ্ণু ও বিপুলতাপ্রাপ্ত হইল।” এই দৃষ্টান্ত দিয়া গোতম বলিলেন— “আমিও এই প্রকার এক পুরাতন পথ, পুরাতন মার্গ আবিষ্কার করিয়াছি। প্রাচীনকালের সম্যকৃ সন্ধুদ্ধগণ এহ পথে বিচরণ করিতেন” (সংযুত্তনিকায়, ১২৬৫৷১৯ -२> ) । ইহার পরে তিনি বলিয়াছেন –