পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

さb" শনের ঢেউ আসিয়া তাহাদের হৃদয়-কপাটে ধাক্কা দিয়াছিল, ঠিক তেমনই হঠাৎ সেটি কোথায় মিলাইয়। গেল। নন-কো-অপারেশনের মহান, উদেশ্ব তাহার উপলব্ধি করিতে পারিল না ; শুধু বুঝিল, যখন টাকার দরকার হইবে, তখনই একজোট হইয়া ধৰ্ম্মঘট করিলেই যথেষ্ট, টাকা তাহারা নিশ্চয়ই পাইবে । আর তখন হইতে বাস্তবিকই এইরূপ হইতে লাগিল ; কিছু টাকা চাই, অমনই ধৰ্ম্মঘট দু-এক দিন খাদের কাজ বন্ধ হইয়। রহিল ; তার পর তাহাদের টাকা আসিয়া পড়িতে লাগিল –আবার সমস্ত চাপা পড়িয়া গেল । ইহার কিছুদিন পরেই আবার একটা গুজব উঠিল, —স্বদেশী বঁাশী ! একটা কোন বহুপুরাতন খাদের এক প্রাস্তে একদা একটি সাওতাল বালক নিজের মনেই বঁাশীটিতে দুই-চারি বার ফু দিয়াছিল মাত্র, এমন সময় সেই খাদের একটা “পিলার-কাটিং এরিয়া’র চালট সশব্দে পড়িয়া গেল । সেখানে বহুলোক কাজ করিতেছিল ; হতাহতের সংখ্যাও খুব বেশী হইল। সকলেই সেই বঁাশীর রব দু-একবার শুনিয়াছিল, কিন্তু বংশীবাদককে কেহ দেখে নাই। স্বতরাং তfহাদের একটা ধারণা হইয়া গেল, ঐ বংশী-ধ্বনি কোন অমঙ্গলের পূৰ্ব্বাভাস। তাহাদের এই মূলহীন ধারণাটা ফলে-ফুলে শোভিত হইয়া শীঘ্রই সমস্ত কয়লা-কুঠাতে রাষ্ট্র হইয়া গেল, এবং আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সকল কুলী-কামিনই তাহা সম্পূর্ণ বিশ্বাস করিয়া লইল । ইহার পর হইতে সেই বংশীধ্বনি অনেক কুঠাতেই শোনা যাইতে লাগিল, ও “থাদের কালী’র রোযে যাহাতে কুলীকামিনরা প্রাণ না হারায়, সেইজন্ম বংশীরব হইলেই খাসী দ্বারা মাকে শাস্ত করা হইতে লাগিল। কোন কোন রিক্রুটার এই ফাকে এক খাদ হইতে অন্য খাদে কুলীদিগকে ভুলাইয়া আনিতে লাগিল, ও তাহাদেরই তীক্ষুবুদ্ধির অনুগ্রহে খাদের মজুররা জানিতে পারিল যে, যুগ প্ৰবৰ্ত্তক মহাত্মা গান্ধীই তাহাদের দেবীর রোষ হইতে বাচাইবার জন্য ঐ বাণী বাজাইয়া সকলকে সতর্ক করিয়া দেন। সেই হইতে ঐ বংশীধ্বনি হইলেই সকলে বলিত, “স্বদেশী বঁাশী বাজ ল’ ! প্রবাসী—আশ্বিন, ১৩৩১ [ ২৪শ ভাগ, ১ম খণ্ড 弹 带 鬱 স্বকুলাদের খাদে যখন বঁাশী বাজিয়া উঠিল, তখন স্বক্লা খাদ হইতে বাহির হইয়া নিজের ধাওড়ার দিকে অনেকটা চলিয়া আসিয়াছে। বঁাশী শুনিয়া সে একবার থমৃকাইয়া দাড়াইয়া চারিদিকে চাহিয়া দেখিল ; তার পর পুনরায় নিজের শ্রান্ত দেহটাকে ধাওড়ার দিকে টানিয়া লইয়া চলিল। সারাদিন কঠিন পরিশ্রমের পর সে খুবই ক্লাস্ত হইয়া পড়িয়াছিল ; স্বতরাং কৌতুহল হইলেও সে অার দাড়াইল না । কোনও মতে ধাওড়ায় গিয়া সে তাহার ভাঙ্গা থাটিয়াখানার উপর অসাড় শক্তিহীন হাত-পাগুলোকে একটু ছড়াইয়া দিতে পারিলে যেন এখন বঁাচে ! মাহি যে এখনও খাদের ভিতর আছে, তাহী সে ভাবিতেও পারে নাই । সে মনে ভাবিয়াছিল, যে, মাহি তাহার আগেই হয়ত ধাওড়ায় গিয়া পৌছিয়াছে । ধাওড়ার সম্মুখে আসিয়া ধাওড়া বন্ধ দেখিয়া সে আশ্চৰ্য্য হইয়া গেল। পাশেই সনাতন মাঝির বে। ধাওড়ার সম্মুখে বসিয়া ছিল; শঙ্কিতচিত্তে স্বকুল। তাহাকে জিজ্ঞাসা করিল,—এই, মাহি কোথা রইছে রে ? সনাতনের স্ত্রী একটু বিস্মিত হইয়াই উত্তরে বলিল—কেনে ? তুর সাথে ত খাদে গেইছিল। —ই ; খাদে ত গেইছিল ; ইধারে আসে নাই আখন –স্থকলার মুখখানি দুর্ভাবনায় শুকাইয়া উঠিল। —লা ; সেই তুর সাথে গেইছে আর ফিরে নাই। স্বক্লা আর এক মুহূৰ্ত্তও দাড়াইল না। গাইতিখানা হাতে করিয়াই সে খাদের দিকে ছুটিল। তাহার চোখেমুখে উৎকণ্ঠ ফুটিয়া উঠিল। মাহির এই মাসেই সন্তান হইবার সম্ভাবনা আছে। সে ত তাহাকে খাদে যাইতেই নিষেধ করে। সেদিন ডাক্তার-বাবুও তাহাকে বলিয়াছিলেন, যে, মাহির এখন থাদে খাটিতে গেলে বিশেষ অনিষ্টের আশঙ্কা আছে; সে কঠিন পরিশ্রম এবং “সিড়িখাদে” উঠা-নামা করিলে, ভাবী সন্তানের খুবই অনিষ্ট, হইবে। মাহি কিন্তু এসব না মানিয়া রোজই খাদে যায়। আজ যদি আচমকা এই বংশীধ্বনি শুনিয়া মাহি ভয় পাইয়া