পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পেীষ । পদ্মণবতের কবি wood. বৈশাখী পূর্ণিমার পূর্ণচন্দ্র শাস্তোজ্বল হাসি হাসিতেছিল। কিন্তু বৈঠকখানা-দালানের রকের কঠিন বক্ষে যেখানে দুইটি ঝড়ের শাদা জুই ফুলের গন্ধে ও গুচ্ছ গুচ্ছ পদ্মকরবীর শোভায় চারিদিক আমোদিত ও উজ্জ্বল হইয়াছিল, ভৈরব রায়ের হাতীর দাতের খড়মের শব্দ তখনও সেখানে নিস্তব্ধ হয় নাই । সাহসিক কোন পল্লীবাসী বৈশাখী পুর্ণিমায় রায়-বাড়ির ভগ্নস্ত,পের সন্নিকটে দাড়াইলে এখনও দেখিত যে কালীদহের পাড়ে আকাশের গায়ে পূর্ণচন্দ্র বিরাট ভগ্নস্ত,পের উপর স্নান ছায়া বিস্তার করিয়াছে, আর শুনিতে পাইত, সেই ভগ্নস্ত,পের অন্তর হইতে আসিতেছে কঠিন রকের বুকে হাতীর দাতের খড়মের শব্দ—ঠকৃঠক ঠকঠক । পদ্মাবতের কবি শ্ৰীঅমৃতলাল শীল পদ্মবিতের কবির নাম মলিক মহম্মদ জয়সী ( জায়স নগর নিবাসী ) । আজকাল যে স্থানে ‘নবাব" শব্দ ব্যবহৃত হয়, তুগলক ও খিলজী-বংশীয় সম্রাটদের সময়ে সেই স্থানে মলিক { বাঙ্গলা মল্লিক j শব্দ ব্যবহৃত হইত। কিন্তু কবি মহম্মদ স্বয়ং এই উপাধি অর্জন করেন নাই, বা কোন মলিকের বংশে তাহার জন্ম হয় নাই । তিনি স্বয়ং আপনার নামের সহিত এই মলিক শব্দ জুড়িয়া দিয়াছিলেন অথবা তাহার সঙ্গী বন্ধুরা র্তাহাকে মলিক বলিয়া ডাকিতে আরম্ভ করিয়াছিল ঠিক জানা নাই ; তবে তিনি আপনার এক হিন্দু বন্ধুকে মলিক উপাধি ধারণ করিতে অনুরোধ করিয়াছিলেন ও তাহার বংশে এখন পর্য্যস্ত মলিক শব্দ ব্যবহৃত হইতেছে । মহম্মদ দরিদ্র পিতামাতার সস্তান ছিলেন । জন্মের অল্প পরেই তাহার পিতার মৃত্যু হয়, মাতা গৃহস্থদের বাটতে শরীর থাটাইয়া অতিকষ্টে পুত্রকে পালন করিতে লাগিলেন। শৈশবেই মহম্মদ বসত্তরোগে একটি চক্ষু ও একটি কর্ণ হীরাইয়াছিলেন। তাহার মুখখানি এমনই বিকৃত হইয়া গিয়াছিল যে লোকে দেখিলে না-হাসিয়া থাকিতে পারিত না । আটি ময় বৎসর বয়সে মহম্মদের মাতারও মৃত্যু হইল, তখন বালক একেবারে নিরাশ্রয় হইল। লোকে তাহার বিরুত মুখ দেখিয়া হাসিত কিন্তু এই হাসি বালকের হৃদয়ে শেলের মত বিধিত, সেইজন্ত বালক সমস্ত দিন গ্রামের উপকণ্ঠে বনে বনে নির্জনে ঘুরিয়া বেড়াইত, গ্রামে পেবেশ করিত না । বনে যদি ফলমূল কিছু পাইত তবে তাহাই খাইত কিংবা ক্ষুধার তাড়নায় অস্থির হইলে রাত্রে অন্ধকারে গ্রামে আসিয়া ভিক্ষা করিত, অথবা বন হইতে কাষ্ঠ কুড়াইয়া কিছু অর্জন করিত । বালক এক দিন দেখিল বনে একদল হিন্দু সন্ন্যাসী রাত্রি-বাস করিবার উদ্যোগ করিতেছে ও পাক আরম্ভ করিয়াছে । ক্ষুধার তাড়নায় বালক তাহাদের কাছে গিয়া দাড়াইলে সন্ন্যাসীদের দলপতি তাহার করুণ কাহিনী শুনিয়া তাহাকে আদর করিয়া খাওয়াইলেন ও বলিলেন—এরূপ কষ্ট করিয়া কয় দিন কাটাইবে, আমাদের সঙ্গে চল, আমরা পরিব্রাজক, এক স্থানে দু-এক দিনের বেশী থাকি না, তীর্থে তীর্থে ঘুরিয়া বেড়াই, ভগবান আমাদের অল্প জুটাইয়া দেন। আমাদের সহিত থাকিলে তোমাকে আমাদের ক্ষমতামত ভাল শিক্ষা দিব, ভবিষ্যতে তুমি এক জন ভাল সাধু হইতে পরিবে। মহম্মদ র্তাহীদের সহিত জন্মভূমি ত্যাগ করিলেন । র্তাহারা নগরের বা গ্রামের বাহিরে আসন করিম নগরে ভিক্ষণ করিতে যাইতেন, কিন্তু মহম্মদ কখনও গ্রামে প্রবেশ করিতেন না । তাঁহাদের শিক্ষাতে মহম্মদ হিন্দুদের পুরাণের অনেক কথা শিখিয়াছিলেন ও কালে ভাল যোগী হইয়াছিলেন । কিছুকাল তাহদের সহিত সমস্ত ভারতের তীর্থ পৰ্যটনের পর মহম্মদ হিন্দু সন্ন্যাসীদের সঙ্গ ত্যাগ করিয়া এক মুসলমান হুকী সাধুর কাছে দীক্ষা গ্রহণ করেন ও মুসলমান মতে যোগ সাধন করেন । এইরূপে তিনি হিন্দু ও মুসলমান উভয় মতে যোগে ব্যুৎপন্ন হুইয়াছিলেন ।