পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩৫৮ বনমালী এবার রাগ দেখাইল—থাকে না তো থাকে না বেশ-সাপ থাকে না, কুমীর থাকে না, কিছু থাকে না— এই সন্ধ্যেবেলা জলের ওপর পা ঝুলিয়ে বসে থাক— শেযকালে সুষমার মত তোমাকেও কামড়ে দিক-আমি কিছছুটি বলব না— আশা তবু পা তুলিল না—কিন্তু বনমালীর মুখের ওপর চোখ রাখিয় জিজ্ঞাসা করিল—মুঘমা কে ?--•কে সুষম ? --কে আবার | নিতস্তি তাচ্ছিল্যভরে বনমালী ওধারে চাহিয়া উত্তর দিল—সুষমার নাম শোন নি ? মীর কাছে কোনদিন শোন নি ? সুষমা-সুষমা-তিন অক্ষরের সেই অতিপ্রিয় নামটি বনমালী স্পষ্ট করিয়া উচ্চারণ করিল দুষ্ট দুই বীর ? —ও দিদির কথা বলছ ? -- এবার আশা বুঝিতে পারিয়াছে । পক্ষের বউয়ের নাম সুষমা ! আশা বলিল—দিদিকে ত সাপে কামৃড়েছিল, বনমালী চুপ করিয়া গম্ভীর হইয়া ছিল। কি কথা বলিতে বলিতে কি কথা উঠিয়া গেল ! কোথা দিয়া কি হইল—আজ এতদিন পরে হঠাৎ কথায় কথায় তার কথা কেন মনে পড়িয়া গেল ! আগে আগে সুযমীর কথা ভাবিত গেলে বনমালী ভারী অন্তমনস্ক হইয়া পড়িত— কঁদিয়া ফেলিত এক এক সময় ; সুষমার একটা ফটোও বাধাইয়। রাখিয়াছিল ঠিক বিছানার উপর দিকের দেওয়ালের গীয়, কিন্তু এই অtশ আসিবার পর সেটা বনমালী ভাঙিয়া ফেলিয়াছে ! কি হইবে রাখিয়া ? সারা জীবন মন খারাপ রাখিলে বাচিবে কেমন করিয়া ? কিন্তু এতদিন পরে সেই কথাটি আবার কেন মনে পড়িল ! বনমালীর মনে হইল, মনে না-পড়িলেই বুঝি ভাল হইত। যাহারা চলিয়া যায় তাহীদের কেন মনে রাখা ! কেন তাহীদের আশায় পথ চাহিয়া বসিয়া থাকা ! সুষমাকে আর মনে রাখিবার দরকার নাই। সুষমাকে এবার হইতে বনমালী একেবারে ভুলিয়া যাইবে । সেই বিপুল জলরাশির দিকে চোখ রাখিয়া বনমালী চুপ করিয়া বসিয়া রহিল । তাই ভাল তাই ভাল— সুষমাকে সে একেবারে ভুলিবে । বনমালীর আগের ? &oi=troit; ఎరిES আশা বলিল—আচ্ছ, আমায় যদি সাপে কামড়ায় তুমি কি কর ? বনমালী রাগিয়া উঠিল—কি সব তোমার অলুফুণে কথা—আর কোনও কথা নেই তোমার মুখে—তোমার কি হ’ল বল ত---? আশা তাহার প্রথম প্রশ্নের জের টানিয়া বলিল-- দিদির মতন যদি তামি মরে যাই—তুমি আবার বিয়ে করবে ত ?--বেল না—ওগো—চুপ ক’রে রইলে কেন—বল—উত্তর দাও— বনমালী এবার ভীষণ রাগ করিল। বলিল—কখনো বলব ন!—বলব না ত—কেন, মরা ছাড়া বুঝি তোমার সার কোনও কথা নেই মুখে—মর মর্য—মরতে তোমার বড় সাধ—- আর আমি যদি মরে যাই ? ••• টপ করিয়া আশা বনমালীর মুখে হাত চপা দিল । বলিল—ওগো, আর কখনো বলব না-কখৃথনও ন— আমার ঘাট হয়েছে—হ’ল ত এবার ? মা গেী—তোমার মুখে কিছু আটকায় ন!—তুমি সব পরি— এই ঘটনায় বনমালীর আর একটি দিনের কথা মনে পড়িল । সেদিনও মুঘমা ঠিক এমনি করিয়া তাহার মুখ চাপা দিয়াছিল। একটা কথাও বলিতে দেয় নাই । তার পর দেশে গিয়া বনমালীর নাম করিয়া চগু-ভৈরবের মন্দিরে পূজা দিয়া আসিয়াছিল। ইহারা সবাই এক রকম । সেদিনকার সুষমার সঙ্গে আজিকার আশার এতটুকু তফাৎ নাই । এই আশা তাহাকে যেমন ভালবাসে সুষমাও ঠিক তাহাকে তেমনই করিয়া ভালবাসিত । তবে তাহাকে বনমালী এমন করিয়া ভুলিয়া গেল কেন ? চোখের আড়ালে যে চলিয়া যায়—মনের আড়ালেও সে যে চলিয়া যায় ন} সে কথা কে বলিল। মিথ্যা কথা—চিরকাল কেহ কখনও কাহাকে মনে রাখিতে পারে ?...সে-ও যে সুষমাকে ভুলিয়। গিয়াছে তাহাতে তাহার কি দোষ } - ক্রমে চারিদিকে আরও অন্ধকার হইয়া আসিল । অস্পষ্ট কুয়াশার মত চারিদিকের প্রত্যক্ষ বাস্তবতা অন্ধকারে মিলাইয়া গেল । কেবল অন্ধকার—সীমান্ত একটু চাদের আলো পড়িয়া জায়গায় জায়গায় চিক্‌ চিক্‌ করিয়া উঠিতেছে ; চরের জঙ্গলে একসঙ্গে অসংখ্য ঝিল্লী