পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

عه /

  • গ্ৰীৰামী ।

సిని8ు একটা আন্দোলন হইয়াছে—এবং এখনও ইহা একেবারে দূর হইয়াছে বলিয়া মনে হয় না । খাজানা সম্বন্ধে আন্দোলনট আপাততঃ কতকটা মন্দীভূত হইয়াছে যলিয়া মনে হয় ; কারণ শিষ্টমত অনুসারে বর্তমানে রাজস্ব যেমন দেওয়া উচিত, জমিদারের খাজানাও তেমনি দেওয়া উচিত ; এখন পর্যাস্তু এই অভিমতই প্রবল বলিয়া মনে হয় । কিন্তু কঞ্জ টাকাঅর্থাৎ অঙ্গীকৃত ঋণ সম্বন্ধে যক্তমানে শিষ্টসমাজেও প্রবল ধারণা এই যে, উহার ভিতর একটা জুলুম রহিয়াছে। দেনাদার অঙ্গীকার করিয়াছে সত্য, কিন্তু সে দায়ে পড়িয়া ; হতবু সমাজের উচিত তহিকে রক্ষা করা এবং এই রক্ষার উপার, তাহীকে এই অঙ্গীকৃতির দায় হইতে মুক্তি দেওয়া । এ-ধারণাই যদি প্রবল ন হইত তাহা হইলে বঙ্গীয় ব্যবস্থা-পরিষদ কিছুদিন হইল সে-সব আইন পাস করিয়াছে, তাহা হইত না । অতিরিক্ত সুদ ডিক্ৰী না দেওয়ার জন্ত আদালতকে ক্ষমতা দেওয়া হইয়াছে । ইহাতে দেনাদারের যে উপকার হইয়াছে, তাহাতে সন্দেহ নাই; কিন্তু তাহার কৰ্ত্তব্যবোধেরও পরিবর্তন ঘটান হইয়াছে । সময়ে হাজার অসমর্থ হইলেও সে মনে করিত, যাহা অঙ্গীকার করা হইয়াছে, যেমন করিয়াই হউক তাহ দেওয়া উচিত। সে বোধটা আর তাহার রহিল না । সে আজ স্তায়-অষ্টীয় সম্বন্ধে অন্তরূপ ধারণfর অধীন হইয়াছে । আইনের উপদেশ "অনুসারে এখন সে ইহাই মনে করিবে যে, স্বীকৃত হইলেও কৰ্জ্জ-টাকার বেশী সুদ তাহার না দেওয়াই উচিত। কিছুদিন পূৰ্ব্বে বাংলার ব্যবস্থা-পরিষদে এক জন এক প্রেস্তাব উপস্থিত করিয়ffছলেন যে, তিন বৎসরের জন্ত দেশের দেলবীরদের দেন দেওয়া স্থগিত থাকুক এবং এ-তিন বস্তুরের জন্ত তাদের দেনার সুদবুদ্ধিও বন্ধ থাকুক । এপ্রিস্তাবট গৃহীত হয় নাই। তাতে কিছু আসে যায় না । শিক্ষিত সমাজে দেন সম্বন্ধে যে একটা নূতন ধারণা ক্রমশঃ মাথা উচু করিতেছে, তাহার প্রমাণ এই প্রস্তাবে পাওয়া যায়। আর, সেদিন বোধ হয় বেশী দূরেও নয়, যখন এরূপ প্রস্তাব অনায়াসেই গৃহীত হইয়া যাইবে। এ-কথা আমরা বলিতে চাই না যে, এ-দেশে খাজনা ও কঞ্জ টাকার সম্বন্ধে ঘে-সমস্ত ব্যবস্থা চলিয়া আসিয়াছে তাহার ভিতর অবিচারের লেশমাত্র নাই, যেমনটি লি এক তেমনটিই উহা থাকা উচিত। আমরা শুধু ইহাই বলিতে চাই যে, দেনাদার যদি শক্তিমান হইয়া দেন অস্বীকার করে, তাহা হইলে পাওনাদারদের আর্থিক অবস্থারই যে কেবল পরিবর্তন হয়, এমন নহে ; ইহাতে সমাজের নৈতিক আদর্শেরও পরিবর্তন ঘটে এবং সমাজে বিভিন্ন শ্রেণীর মধ্যে পরস্পর যে সম্বন্ধ আছে, তাহারও পরিবর্তন ঘটে। এক কথায়, সমাজের গঠনই অত্যন্ত পরিবৰ্ত্তিত হইয়া যায়। সুতরাং আইনের সাহায্য বা অন্ত উপায়ে ঋণ-সম্বন্ধে নুতন ধারণার প্রবর্তনের ফল যে ঋণদাতা ও ঋণগ্রহীতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকিবে না, ইহা আমাদের ভাবা উচিত । এটা একটা সাধারণ সত্য যে, সমাজ মানুষের কর্তব্যবোধের উপর প্রতিষ্ঠিত। এক জনের যা অধিকার, আর এক জনের সেটাই কর্তব্য। পরদ্রব্যে লোভ না-করা আমাদের কর্তব্য বলিয়াই দ্রব্য-স্বামীর স্বামিত্ব রক্ষিত হয় । কেহ যদি তাহার কৰ্ত্তব্য অবহেলা করে, তাহা হইলে তাহাতে আর এক জনের অধিকার খৰ্ব্ব হয় । ব্যাঙ্কে আমার যে টাকা আছে, আমার প্রয়োজন অনুসারে সেগুলি আমার প্রতাপণ করা ব্যাঙ্কের কৰ্ত্তব্য । ব্যাঙ্ক যf সে-কর্তৃবা অস্বীকার করে এবং তাকে উহা স্বীকার করাইবার যদি কোন উপায় না থাকে, তবে তার ফলে আমি সৰ্ব্বস্বাস্ত হইয়া যাইতে পারি। আমার ধনসম্পত্তি এইরূপে অপরের কত্ত্ববাবোধের উপর নির্ভর করে । অন্তকে আমি টাকা ধীর দিয়াছি, এই আশায় যে, উহ! আমি আবার পাইব' আর, আমার ধনসম্পত্তির হিসাব করিবার সময় আমি ঐ টাকাটাও গণনা করি । কিন্তু দেনাদারের ঘদি একবাক্যে সকল দেন অস্বীকার করে, তবে এক মুহূৰ্বেই জগতের সমস্ত উত্তমর্শ নিঃস্ব হইয়া যাইবে না কি ? - জাতিতে জাতিতে যেখানে ঋণসম্পর্ক রহিয়াছে, সেখানে এইরূপ ঋণ অস্বীকার করিলে উত্তমর্ণ জাতি হয়ত একেবারে নিঃস্ব হইয়া যাইবে না ; কিন্তু ব্যক্তির বেলায় যদি ঋণ অস্বীকৃত হয় এবং যদি ঐ অস্বীকৃত ঋণ আদায়ের কোন উপায়াস্তর না থাকে, তবে শ্রেণী-বিশেষে একেবারে সৰ্ব্বস্বাস্তু হওয়া অসম্ভব নহে ।