পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

খাইবার-সীমাস্তে ঐনন্দলাল চট্টোপাধ্যায়, এম-এ, পিএইচ-ডি উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে যে প্রসিদ্ধ গিরিসঙ্কট ভারতের ইতিহাসে অমর হয়ে আছে, সেই থাইবার স্বচক্ষে দেখবার আকাঙ্গা বহুদিন হতেই ছিল ; এবার পূজার ছুটিতে যখন লক্ষেী-বিশ্ববিদ্যালয়ের এম্-এ ক্লাসের ছাত্রদের উত্তরতারতের মুঘল স্থাপত্য দেখাবার জন্য রওনা হলাম, তখন স্থির করে ফেললাম যে খাইবার অবধি পাড়ি দিতে হবে-ভাগ্যে যাই ঘটুক । ছাত্রেরা আননো সম্মতি দিলে, মনে হ’ল তাদের কাছ পাইবার আগ্রার তাজের চাইতেও বেশী লোভজনক । আমাদের সহিত বিশ্ববিদ্যালয়ের আর তিন জন অধ্যাপক ছিলেন, শ্ৰীমুকুমার ধন্যোপাধ্যায়, ঐশৈলেন দাশগুপ্ত ও মিষ্টীর এফ টি-রয়, র্তারাও আমীর মতই সীমান্ত-প্রদেশ দেথবীর জন্য সমুৎস্থক। অতএব আগ্রী, দিল্লী, লাহের প্রভৃতি দেখার পরই সদলবলে পেশোয়ার অভিমুখে যাত্রা করা গেল । নৈশ অন্ধকার ভেদ ক’রে ট্রেন যখন দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর পেশোয়ার ক্যান্টন্‌মেণ্ট, ষ্টেশনের ২:ল':কম্মিল প্ল্যাটফরমে এসে দাঁড়াল, আমরা সতাই সচকিত হয় উঠেছিলাম। থাইব'রের তলদেশে অবশেষে এসে পৌছেছি এই উল্লাসে ও তৃপ্তিতে তখন আমরা মশগুল । ভ্রমণের ক্লান্তি, অবসাদ ও বিরক্তি নেন এক নিমেঘ খন্তৰ্হিত হ’ল। পেশেয়ার-প্রবণী অ'মাদের একটি মুসলমান ছাত্র বীসোপযোগী একটি বাড়ি আমি দর জন্ত কালীবাড়ি অঞ্চলে আগে থেকেই স্থির ক’রে রেখেছিল—সেইথানেই আমরা আস্তান নিলাম । চ'ত্রটির পিতা মিষ্টার আহমাদ-য়ার র্থ স্থানীয় মিলিটারী-বিভাগে চাকরি করেন । তিনি অতি সদাশয় ও ভদ্র ব্যক্তি । তার অতিথি-সৎকারের আয়োজনে আমরা যেমন বিস্মিত তেমনই প্রীত ও মুগ্ধ হয়েছিলাম। পেশোয়ারে ধে-কট দিন আমরা ছিলাম তিনি সৰ্ব্বদা আমাদের মুখস্বচ্ছন্দ্যের প্রতি তীক্ষ দৃষ্টি রেখেছিলেন ও স্বয়ং আমাদের সেবায় তৎপর থাকতেন । মুসলমান আতিথেয়তা, সভ্যতা ও রীতিনীতির একটি খাটি প্রতীক স্বরূপ তাকে আমাদের চিরদিন মনে থাকবে । পরদিন সকালে একটি ভাড়াটে মোটর-বস রিজার্ভ করা হ’ল তাতেই আমরা প্রতিরাশ সেরে খাইবারের পথে বেরিয়ে পড়লাম। ক্যান্টনমেন্টের পাশ দিয়ে বাস চলল, প্রশস্ত পিচঢালা রাস্তা। দূরে শৈলশ্রেণী মাথা উচু করে দাড়িয়ে রয়েছে ভারতের তোরণদ্বারের রক্ষীর মত। দু-ধারে বিস্তৃত উপত্যকাভূমি—ষার বুকের ওপর দিয়ে অতীত যুগ হ’তে কত অসংখ্যবার শত্রু ভারত আক্রমণ করেছে । অল্পক্ষণ পরেই আমরা কাটাতারের বেড়া পার হলাম। এখানে বলা আবশ্যক, পেশোয়ার ক্যান্টনমেন্টর চারি দিকে সম্প্রতি কাটাতারের বেড় দেওয়া হয়েছে সীমান্তবাসীদের অতর্কিত আক্রমণ প্রতিরোধ করবার উদ্দেশ্রে, প্রয়োজন হ’লে তা তড়িৎযুক্ত করা যায়। মাঝে মাঝে যে প্রবেশ-পথ বা ফটকগুলি আছে তা রাত্রে নিয়মিত ভাবে বন্ধ করা হয় । রাত্রে তীর বহিরে যাওয়া নিরাপদ নয়, সীমান্ত-প্রদেশের এমনি আপৎসস্কুল অবস্থা । পথে ইসলামিয়া কলেজ দেখা গেল । এ-প্রদেশের শ্রেষ্ঠ শিক্ষণ-প্রতিষ্ঠান এইটি । মনরম ও বৃহদায়তন উদ্যানের মাঝে প্রকাও অট্টালিকাটি সমস্ত উপত্যকার মাঝে একটি দর্শনীয় জিনিষ। পাশ্চাত্য শিক্ষা ও সংস্কৃতির এই কেন্দ্র হয়ত দূর ভবিষ্যতে এই দেশে উচ্চশিক্ষণ বিস্তারের সহিত জীবনের ধারা পরিবর্ধিত ক’রে দেবে। তবে যুদ্ধবিলাসী দুৰ্দ্ধৰ্ষ পাঠন কবে যে বন্দুক ছেড়ে কেতাব পছন্দ করবে তা বলা শক্ত । পেশোয়ার থেকে দশ মাইল পরে বিখ্যাত জামরুদদুর্গ। স্বনামধন্ত শিখ-সেনাধ্যক্ষ হরিসিং নীলব কর্তৃক