পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দৃষ্টি-প্রদীপ শ্ৰীবিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় y পঞ্চম পরিচ্ছেদ > জ্যাঠামশায়দের বাড়ি আরও বছর দুই কেটে গেল এই ভাবেই। যত বছর কেটে যায়, এদের এখানে থাকা আমার পক্ষে বেশী কঠিন হয়ে পড়তে লাগল। আমার বয়স বাড়বার সঙ্গে সঙ্গে অনেক জিনিষ আমি বুঝতে পারি আজকাল, আগে আগে অত বুঝতাম না। এ-বাড়িতে থাকা আমার পক্ষে আরও কঠিন হয়ে উঠছিল এই জন্যে যে, আমি চেষ্টা করেও জ্যাঠাইমাদের ধৰ্ম্ম ও আচারের সঙ্গে নিজেকে কিছুতেই খাপ খাওয়াতে পেরে উঠলাম না। এরা খুব ঘটা করে যেটা ধৰ্ম্ম বলে আচরণ করেন, আমার মনের সঙ্গে সেট ত আদৌ মেলে না— আমি মনে যা বলে, বাইরে তাই করি –কিন্তু ওঁরা তাতে চটেন। ওঁদের ধর্মের যেটা আমার ভাল লাগে—সেটাকে ওঁরা ধৰ্ম্ম বলেন না । কিন্তু একটা ব্যাপার হমেচে এই, আগে ভাবতাম শুধু জ্যাঠাইমাদের বাড়িতেই বুঝি এই রকম, এখন বয়স বাড়বার সঙ্গে বুঝতে পেরেচি—এ গ্রামের অধিকাংশই এই রকম— জ্যাঠাইমায়ের একটু বেশী মাত্র। এতেই আমার সন্দেহ হ’ল বোধহয় আমার মধ্যেই কোন দোষ আছে, যার ফলে আমি এদের শিক্ষা নিতে পরিচি নে । ভাবলাম আমার যে ভাল লাগে না, সে বোধ হয় আমি বুঝতে পারিনে বলেই—হস্থত চা-বাগানে থাকার দরুণ ওঁদের ধৰ্ম্ম আমরা শেখবার সুযোগ পাই নি, যে আবহাওয়ার মধ্যে ছেলেবেলা থেকে মানুষ হম্বেচি, সেটাই এখন ভাল লাগে। মাটিক পাস করে শ্রীরামপুর কলেজে ভর্তি হলাম। জ্যাঠামশাদের গ্রাম আটধরার নবীন চৌধুরী—স্বীয় বড় ছেলে ননী ভাল ফুটবল খেলত এবং ধে প্রাঞ্চত্তের বাধবি ভাইয়ের মত দেখে । না মেনে বাবার সৎকারের সময়ে দলবল জুটিয়ে এনেছিল— তারই ভগ্নীপতির বাড়ি অর্থাৎ নবীন চৌধুরীর বড় মেয়ে শৈলবালার শ্বশুরবাড়ি শ্রীরামপুরে । ননীর জোগাড়যন্ত্রে তাদের শ্বশুরবাড়িতে আমার থাকবার ব্যবস্থা হ’ল । এসে দেখি এদেরও বেশ বড় সংসার, অনেক লোক । শৈলদিদির স্বামীরা ছ’ ভাই, তার মধ্যে চার ভাইয়ের বিয়ে হয়েচে, আর একটি আমার বয়সী, ফাষ্ট ইয়ারেই ভৰ্ত্তি হ’ল আমার সঙ্গে। সকলের ছোট ভাই স্কুলে পড়ে। শৈলদি বাড়ির বড়বেী, আমি তার দেশের লোক, সবাই আমাকে খুব আদর্যত্ন করলে। এখানে কিছুদিন থাকবার পরে বুঝলাম যে, সংসারে সবাই জ্যাঠামশাহ্মদের বাড়ির ছাচে গড়া নয়। চা-বাগান থেকে এসে বাংলা দেশ সম্বন্ধে যে একটা হীন ধারণ আমার হয়েছিল, সেট। এখানে দু-চার মাস থাকতে থাকতে চলে গেল । আর একটা জিনিষ লক্ষ্য করলাম যে এ-বাড়ির মেয়ের কেউ কারও বড় একটা অধীন নয়। কোন এক জনকে সকলের ভয় ক’রে চলতে হয় না বা কোন এক জনের কথায় সকলকে উঠতে বসতে হয় না। অামি থাকি বাইরের একটা ঘরে, কিন্তু অল্পদিনেই আমি বাড়ির ছেলে হয়ে পড়লাম। শৈলদিদি খুব ভাল, আমাকে কিন্তু এত বড় সংসারের কাজকৰ্ম্ম নিয়ে সে বড় ব্যস্ত থাকে—সব সময় দেখাগুনে করতে পারে না। শৈলদিদির বম্বেস আমার মেজকাকীমার চেয়ে কিছু ছোট হবে—তিন-চারটি ছেলেমেয়ের মা। আটম্বরায় থাকতে খুব বেশী আলাপ ছিল না, দু-একবার জ্যাঠামশায়দের বাড়ি বেড়াতে গিয়ে মায়ের সঙ্গে আলাপ করে এসেছিল, তারপর ননী কথাটা পাড়ডেই তখুনি রাজী হয়ে যায় আমায় এখানে রাখবার সম্বন্ধে। শৈলদিদির স্বামী তার কোন কথা ফেলতে পারে না । বাড়ির সকলের সঙ্গে খুব আলাপ হয়ে গেল। বাড়ির মধ্যে সৰ্ব্বত্র ধাই—জ্যাঠামশায়দের বাড়ির মত এটা দুয়ে না, 蓉